যমুনা নদী বর্ষাকালে সমুদ্রে পরিণত হয়। পানিতে টই টুম্বুর থাকে চারদিক। নদীর দিকে তাকালে শুধু পানি আর পানি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যমুনা নদী দেখতে আসে। দূরদূরান্ত থেকে হাজারো পর্যটকের ভিড় জমে। যমুনা নদীটি হচ্ছে খর স্রোতা নদী , এই নদীর এ কুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে। যমুনার চরে রয়েছে অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি। তারা সব সময় ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে জীবন যাপন করে।
যমুনা নদীর বেশিরভাগ স্থানে চর গড়ে ওঠেছে, যেগুলো বর্ষাকালে তলিয়ে যায়। ফলে নদীটি জায়গায় জায়গায় খাতে পরিণত হয়। যমুনা নদীর প্রশস্ততা প্রায় ১০ কিলোমিটার। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। গোপালপুর উপজেলায়। আমাদের পাশের উপজেলা ভুয়াপুর। ভুয়াপুর যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা। আমার বাড়ির কাছে থাকায়, বারবার এই যমুনা নদীর তীরে আমার যাওয়া হয়েছে।
যমুনা নদীর সৌন্দর্য বারবার আমাকে মুগ্ধ করেছে। যমুনা নদীর উপর ভিত্তি করে অনেক মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। যমুনায় চরে রয়েছে হাজারো মানুষের বসবাস। তাদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে মাছ ধরা। মাছ ধরে সেগুলো বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। চৈত্র মাসে যমুনা নদীতে চর জেগে ওঠে। তখন শুধু নদীতে থাকে বালু আর বালু। এই বালু উত্তোলন করে কিছু মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। বালু উত্তোলনের জন্য সরকার থেকে ইজারা নেয়া হয়।
যমুনা নদী চৈত্র মাসে বালুর মাঠে পরিণত হয়। এবং বর্ষা মাসে সমুদ্রে পরিণত হয় । বর্ষাকালে এই নদীতে অনেক নৌকা চলাচল করতে দেখা যায়। এবং ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করে। এবং অনেকেই নৌকা ভ্রমনে যায় যমুনা নদীতে। এবং জেলেরা ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরে। মাছ ধরার অপরূপ দৃশ্য আপনার মনকে সতেজ করে তুলবে।
একদিন রাত্রিবেলায় আমি আমার বাবার সাথে, মাছ ধরার জন্য যমুনা নদীর উপশাখায় বৈরান নদীতে গিয়েছিলাম। আমরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরছি। হঠাৎ ঝড় শুরু হলো। আমাদের নৌকা পাড়ে নিতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে আমি পানিতে পড়ে যাই। বাবা নৌকা ছেড়ে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা করছে, এবং চিৎকার করে মানুষ ডাকছে । কিন্তু কারো কোনো সাড়াশব্দ পায়নি, আমি পানির মধ্যে তলিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। বাবা আমাকে ধরে উপরে উঠানোর চেষ্টা করছে। অবশেষে বাবা আমাকে কিনারে নিয়ে আসলেন। অনেক পানি খেয়েছিলাম আমি। তখন আমি ভালো করে সাঁতার জানতাম না। রাত্রি বেলায় কোলে করে বাবা আমাকে বাড়ি নিয়ে আরছে, মা এবং দাদি আমাকে দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো, রাত্রি বেলায় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর কি হয়েছিলো আমার জানা নেই। তবে সেই দিনটার কথা আমি কখনো ভুলবো না। আর আমাদের নৌকাটি পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে আমার বাবা আর কখনো রাতের বেলা মাছ ধরতে যায় না। এই ছিলো আমার স্মরণীয় ঘটনা যা সারা জীবন আমার মনে থাকবে, আর সেই ঝড়ের কথা মনে হলেই গা শিউরে ওঠে ।
![IMG_20230825_170036_718.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmVWMcUPYiEvSSJXk2sePZB4rJiRwnpd8UE3HBQwKtRYbg/IMG_20230825_170036_718.jpg) |
যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। নদী ভাঙ্গন রক্ষায় প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আমাদের গোপালপুর উপজেলার নলিন বাজার যমুনা নদীর তীরবর্তী বাজার। গোপালপুর উপজেলা থেকেও যমুনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এবং নলিন বাজারে যমুনা নদীর টাটকা মাছ পাওয়া যায়।
জুন, জুলাই মাস থেকে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত, নদী উত্তাল থাকে । নদীর দিকে তাকালে শুধু পানি আর পানি। ছোট ছোট দুই একটি নৌকা বা লঞ্চ বুঝিয়ে দেয় এটা নদী। তা না হলে বুঝার উপায় নেই এটা নদী। মনে হবে এটি সমুদ্র। প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন নিউজ রিপোর্টে। এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। তখন মানুষের আহাজারিতে চারদিক ভারী হয়ে ওঠে।
তখন কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসে, এসব মানুষকে নিরাপদ স্থানে রাখার জন্য। যমুনা যেমন মানুষের জীবনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ঠিক তেমনি এর ভয়াবহতা রয়েছে। যমুনা নদীর একটি উপ শাখা আমাদের গোপালপুরে রয়েছে। যার নাম বৈরান নদী। আর এই বৈরান নদীর তীরে আমার বাড়ি। আমার বাড়ি নদীর তীরে। আমার বাড়ি থেকে যমুনা নদীর উপশাখা বৈরান নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। যেটা আমার জন্য অনেক গৌরবের।
নদীতে নৌকা চলে, তখন নদীর সৌন্দর্য হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়। নদী এবং নৌকা পারস্পরিক সম্পর্ক। একটা ছাড়া আরেকটা অসম্পূর্ণ। বর্ষাকালে যখন নদীতে নৌকা চলে তখন নদী ফিরে পায় তার যৌবন। আর বর্ষা কাল শেষ হলে মাঝিরা নৌকা রেখে দেয় যেখানে নদীর গভীরতা রয়েছে সেখানে।
অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশ। এদেশে অসংখ্য নদ নদী রয়েছে। নদীমাতৃক এই দেশে নদীর উপর নির্ভরশীল করে অনেক মানুষ বেঁচে রয়েছে। আগের দিনে নদীতে পাল তোলা নৌকা চলতো। এখনো আমাদের অঞ্চলে কাঠের নৌকা দেখতে পাওয়া যায়। যমুনা নদীতে প্রতিবছর নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়।
দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এই নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। নৌকা বাইচের সময় যমুনা নদীর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। নদীতে নৌকা বাইচ দেখতে, হাজারো মানুষের ঢল পড়ে। আমিও দেখতে গিয়েছিলাম গত বছর নৌকা বাইচ। যমুনা নদীতে আমাদের গ্রামের নৌকা অংশগ্রহণ করেছিলো। নৌকা বাইচে প্রথম পুরস্কার ছিলো ফ্রিজ, ২য় পুরস্কার ছিলো টেলিভিশন। তৃতীয় পুরস্কার ছিলো মোবাইল ফোন।
যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে পার্ক। আপনারা চাইলে যমুনা নদী পরিদর্শনে যেতে পারেন। যমুনা নদীর সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। যমুনা নদীর মূল আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু সেতু। বঙ্গবন্ধু সেতুকে কেন্দ্র করে যমুনা নদী বিশ্বের কাছে আজ পরিচিত। সিরাজগঞ্জ জেলা এবং টাঙ্গাইল জেলা দুই জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনা নদী।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই যমুনা নদী। তাই আপনাদের কে যমুনা নদী পরিদর্শন, যমুনা সেতু পরিদর্শন এবং নির্মাণাধীন যমুনা রেল সেতু দেখার আমন্ত্রণ রইলো। যদি কখনো আপনারা যমুনা নদী দেখে থাকেন, বা বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে থাকেন। তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর এই পর্যন্তই। কেমন লাগলো আমাদের যমুনা নদী নিয়ে আমার এই সামান্য লেখাটা সেটা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আবারো লিখবো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে।
এই প্রতিযোগিতায় আমি আমার ৩ জন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি @sanaula, @iyanpol12, & @zpzn
মোবাইলঃTECNO CAMON 16 PRO |
ধরণআমার এলাকার যমুনা নদী |
ক্যামেরা৬৪ মেগাপিক্সেল |
ফটোগ্রাফার@aslamarfin |
অবস্থানটাংগাইল |
| | | | |
---|
টুইটার লিংক -
https://twitter.com/Aslamarfin64366/status/1696621170341339487?t=a4Fk9MggxlDAygy6mKfQnQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছবি তো সেই তুলেছেন ভাই। আপনার এলাকা দিয়ে অতিবাহিত হয়ে যাওয়া যমুনা নদীর সৌন্দর্য সকলের মন কাড়বে।নৌকা বাইচ আমি কখনো সরাসরি দেখিনি ভাই। তবে দেখার অনেক ইচ্চে আছে।যমুনা নদীতে আমি নৌকা দিয়ে অনেক সময় মাছ ধরতে দেখেছি। আপনি সুন্দর ছবি তুলেছেন ভাই। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যমুনা নদী নিয়ে আপনি অনেক সুন্দর লিখেছেন।যমুনা নদীর অনেক অজানা তথ্য আজকে জানতে পারলাম।যমুনা নদীর উপর দিয়ে বাসে আর ট্রেনে অসংখ্যবার গিয়েছি।আমার কাছেও অনেক অনেক ছবি আছে এ নদীটির।আপনার সাথে হয়ে যাওয়া স্মরণীয় ঘটনা পড়ে খারাপ লাগলো।আমিও সাঁতার জানিনা।আমি যদি কখনো পানিতে পরে যাই তখন কি হবে!ভাবছি সেটাই।আপনি বিভিন্ন ঋতু নিয়েও সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন,সেই সাথে ইংরেজি কোন মাসে কেমন উত্তাল থাকে তাও লিখেছেন।আমি নৌকাতে অনেকবার উঠেছি।আপনি নৌকা নিয়েও অনেক সুন্দর করে বিস্তারিত উপস্থাপনা করেছেন।আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদী সম্পর্কে অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। চৈত্র মাসে যমুনা নদীর দৃশ্য গুলো দেখতে খুবই সুন্দর হয়। তবে আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটা জেনে খুবই খারাপ লাগলো। এইজন্যই সাঁতার জানা খুবই জরুরী। এছাড়াও যমুনা নদী সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যেটি আমার খুবই ভালো লাগলো। ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাই। আপনাদের এলাকার এই জনপ্রিয় যমুনা নদী নিয়ে আপনি অসাধারণ একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যমুনা নদী আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যমুনা নদী সম্পর্কে ও যমুনা সেতু সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার প্রতিটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ। রেলপথে ঢাকা যাওয়া ও আসার সময় এই নদীটি ও সেতুটি দেখার একটু সৌভাগ্য হয়েছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit