ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প যা এখন বিলুপ্ত প্রায়

in hive-131369 •  2 years ago 

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আমি আজকে একটি বিশেষ ঐতিহ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।



হারিয়ে যাওয়ার পথে মৃৎশিল্প

InCollage_20230220_154539098.jpg

কভার ফটো



বন্ধুরা আপনারা সবাই অবশ্যই মাটির তৈরি জিনিস দেখেছেন। বিভিন্ন হাট বাজারে এ সব জিনিস দেখা যায়। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এই মাটির জিনিস গুলো কিভাবে তৈরি করা হয়। কিভাবে এত সুন্দর নকশা করা হয়। এরপর তৈরি করে কিভাবে তৈরি করে। তৈরি করতে কত সময় লাগে। তাদের কত পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। আমরা এসব নিয়ে কখনো ভাবি না। আজকে আমি এসব তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

InCollage_20230220_154615723.jpg

InCollage_20230220_154719941.jpg

শুরুতেই বলি এই মাটির জিনিস গুলো কুমারেরা তৈরি করে। এটি একটি শিল্প। এই শিল্প নাম হচ্ছে মৃৎশিল্প। মৃৎ মানে মাটি। দিয়ে এই শিল্পীরা এই কাজ করে বলে একে মৃৎ শিল্প বলা হয়। মাটি দিয়ে কুমারেরা এই মাটির তৈরি শিল্পকর্ম সম্পন্ন করে। এটি আমাদের দেশের একটি পুরাতন ঐতিহ্য বহন করে। কুমারেরা প্রথমে মাটি সংগ্রহ করে মাটি পানি দিয়ে নরম করে এরপর মাটিগুলোকে সুন্দরভাবে একত্রিত করে রাখে। এনারা এই মাটিগুলো কিনে তাদের বাড়িতে জমা করে রাখেন। বর্তমানে এই মাটি কিনতে তাদের অনেক টাকা ব্যয় করতে হয় তাই তাদের তেমন একটা লাভ হয় না। এনারা এই মাটি নরম করে একটি চাকার মধ্যে বসিয়ে এসব মাটির তৈরি জিনিস তৈরি করে। চাকাটি একটি কাঠ ও একটি পাথরে সাহায্য করানো হয়। এই চাকাটি একবার ঘুরিয়ে দিলে ৫ থেকে ৭ মিনিট ঘুরতে থাকে। এই ঘোরানোর সময় শিল্পীরা তাদের হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করে। এনাদের হাতের কাজ অনেক চমৎকার হয়ে থাকে। এনাদের হাতে মনে হয় যাদু রয়েছে যে এরা এত সুন্দর করে এসব জিনিস তৈরি করতে পারে। এনারা বংশগতভাবে এসব কাজ করে আসে তাই এনারা এত সহজে সব জিনিস তৈরি করতে পারে এত সুন্দর ভাবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন এলাকায় কুমার পল্লী দেখা যায় এনারা সবাই মিলে একটি সমাজে বসবাস করে এবং এনারা প্রতিটি বাড়িতে সবাই এই কাজ করে থাকে। এনারা মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করে এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাটির তৈরি থালা গ্লাস টাকা রাখার ব্যাংক ফুলদানি ভর্তা করার জন্য পাত্র ইত্যাদি।

InCollage_20230220_154747847.jpg

আমাদের পার্বতীপুর শহরে কিছু কুমার একত্রিত হয়ে বসবাস করেন। এনারা প্রতিটি বাড়িতে সবাই এই মাটির জিনিসগুলো তৈরি করেন। এই এলাকা কে আমরা কুমার পট্টি হিসেবে চিনি। আমাদের কোন মাটির তৈরি জিনিস প্রয়োজন হলে আমরা এনাদের কাছে এসে নিয়ে যাই। এনারা এই মাটির তৈরি জিনিসগুলো খুব যত্ন সহকারে তৈরি করে একত্রিত করে আগুন জ্বালিয়ে এগুলোকে পুড়িয়ে শক্ত করে। এরপরে বাজারে এনে বিক্রি করেন। এই শিল্প একটি অনেক বছর আগের শিল্প যা এখন হেরে যেতে বসেছে। এখন মানুষ এসব পণ্য আর তেমন ব্যবহার করতে চায় না। এছাড়াও এই শিল্পীরা এখন আর এত ব্যয় করে এই জিনিস গুলো তৈরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। তাই তারা অন্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আমাদের উচিত এনাদের উৎসাহ দিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখার কারণ এটি আমাদের জাতীয় একটি ঐতিহ্য বহন করে।

InCollage_20230220_154646014.jpg

এই শিল্পীদের আমার একটি অবাক করা বিষয় লেগেছে সেটি হলো এনারা যে চাকাটি ঘুরিয়ে মাটি চাকার উপর বসিয়ে হাতের ছোঁয়া সুন্দর করে বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করে যা দেখলে মন ভরে যায়। আমি এগুলো কয়েকবার দেখেছি এবং আমি নিজেই অবাক হয়েছি কিভাবে একটি চাকা একবার ঘুরিয়ে দিলে অনেকক্ষণ ঘুরতে থাকে এবং এনারা সেটির উপর মাটি বসিয়ে হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন রকম আকারের জিনিস তৈরি করে। আসলে এনাদের কে আমাদের সম্মান করা উচিত এবং এনারা আমাদের গর্ব। তবে এই কাজ এত সহজে হয় না এনারা অনেক চর্চা করার পর এই কাজ সহজে করতে পারে।

বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের আলোচনার বিষয়। আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।



ডিভাইস - স্যামসাং A 52.

লোকেশন - পার্বতীপুর,দিনাজপুর।



ধন্যবাদ সবাইকে



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।মৃৎশিল্প আমরা দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে লাগে। মৃৎশিল্প আস্তে আস্তে গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাই

মৃৎশিল্পী আমাদের ঐতিহ্য, কুমার রা অনেক কষ্ট করে এই মৃৎশিল্পী তৈরি করে। যা যুগ যুগ ধরে চলে আরছে। চাকার উপর মাটি বসিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করে। যা আমরা প্রয়োজন মতো তাদের কাছ থেকে কিনে ব্যবহার করি। সুন্দর উপস্থাপন করেছেন ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ ভাই।

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ও বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। সামান্য কিছু সংখ্যক মানুষজন এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে কারণ প্লাস্টিকের পন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। ভালো লিখেছেন ভাই শুভকামনা রইল

ধন্যবাদ ভাই

CategoryYes ✅ / No ❌
Club StatusClub100 ✅
plagiarism-free
#steemexclusive
Verified user
Bot-free
300 Words

We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.


Regards
shamimhossain (Moderator)

মৃৎশিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। অনেক যুগ থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প প্রচলন চলে আসতেছে।মাটির তৈরি জিনিসের কদর অনেক ছিল কিন্তু এখন আর এই কদর নেই বলে চলে।আপনাকে ধন্যবাদ ভাই সুন্দর পোস্ট লিখেছেন। ছবিগুলো বেশ দারুন হয়েছে।

ধন্যবাদ ভাই

মৃৎশিল্প আমাদের দেশ ও দেশের ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।আমাদের দেশের সবচেয়ে পুরাতন শিল্প হলো মৃত শিল্প । ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প নিয়ে অনেক সুন্দর একটি উপস্থাপনা করেছেন । আর ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে ।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

ধন্যবাদ আপু

আমরা জানি মাটির তৈরি জিনিসপত্র কে মৃৎশিল্প বলে। সাধারণত কুমারেরা এই মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন। দারুণ হয়েছে আপনার তোলা ছবিগুলো। ধন্যবাদ

ধন্যবাদ।

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পী নিয়ে অসাধারণ লেখছেন ভাই, এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পী এখর আর দেখা যায় না, এগুলো আমাদের অনেক আগের একটা ঐতিহ্য, আর মাটির তৈরি জিনিস গুলো অনেক মজবুত হয়। আবার দেখতেও অনেক সুন্দর, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য

ধন্যবাদ

মৃৎশিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প।মৃৎশিল্প আস্তে আস্তে গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কারন এখন আর মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র এর ব্যবহার করতে চায় না, যাই হউক অনেক সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাই আর এই রকম পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ

ধন্যবাদ

সত্যি বলতে বর্তমানে প্লাস্টিকের এবং এলোমেনিয়ামের বিভিন্ন জিনিস পত্র বাজারে আসায় মাটির এসব তৈজসপত্র ব্যবহার খুব কমে গেছে। তবে আমার বাড়িতে এখনো ব্যবহার করা হয়। ধন্যবাদ ভাই চমৎকার একটা পোস্ট শেয়ার করা জন্য। 💞💝

ধন্যবাদ