আমার এলাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপি - কাঁচা আমের আচার

in hive-131369 •  2 years ago 

কাঁচা আমের আচারের রেসিপি


প্রিয় স্টিমীট বন্ধুরা,


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আল্লাহর রহমতে আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের আপনাদের সাথে একটি আচারের রেসিপি শেয়ার করব। এটি একটি প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু এবং প্রতিযোগিতায় বলা হয়েছে আমার এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপি শেয়ার করার জন্য তাই আমি ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপির উপর ফোকাস করে এই রেসিপি শেয়ার করব। আমরা সবাই জানি আচার হলো আমাদের অতি প্রাচীনতম একটি খাবার কেননা কোনো কিছুর আচার করা হয় সেই খাবার সংরক্ষণ করার জন্য। আগের দিনের মানুষ বিভিন্ন খাবার এবং ফল আচারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে আসতেন। কেননা পূর্বে বর্তমানকালের মত খাবার সংরক্ষণ করার জন্য রেফ্রিজারেটর বা অন্য কোন মাধ্যম ছিল না। আজকে আমার রেসিপিটির নাম হল কাঁচা আমের আচার। চলুন শুরু করি,

20230510_134606_0000.png

'Canva' এর মাধ্যমে তৈরি


ব্যবহৃত উপকরণ


উপকরণের নামপরিমাণ
কাঁচা আম২ টি
সরিষাআপনার ইচ্ছেমতো
সয়াবিন তেলপরিমাণ মতো
লবণ৪-৫ টেবিল চামচ
শুকনো মরিচ৩-৪
মেথিএক টেবিল চামচ
রসুন২-৩ টি
শুকনো মরিচ গুঁড়ো৩ টেবিল চামচ

[বি.দ্র]- আপনি চাইলে বেশি করে বানানোর জন্য উপাদান গুলোর পরিমাণ বাড়িয়ে বানাতে পারবেন। আপনি বেশি ঝাল খেতে চাইলে শুকনো মরিচ গুড়োর পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন। এটি আপনার স্বাদের উপর নির্ভর করে।

ধাপ-০১


কাঁচা আমের আচার বানানোর জন্য প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল দুটি তাজা কাঁচা আম ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি পরিষ্কার পানি দিয়ে আম দুটিকে আগে পরিষ্কার করে নিবেন। যেকোনো রান্নাবান্না করার আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। তাহলে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং কোন ধরনের রোগ জীবাণু ছড়ানো সম্ভাবনা অনেক গুণ কমে যায়। আমি প্রথমে আম দুটিকে ধুয়ে শুকিয়ে নেই।

20220515_121845.jpg

ধাপ-০১


ধাপ-০২


দ্বিতীয় ধাপে আমি কাঁচা আম দুটোকে প্রথমে বড় বড় কয়েক ভাগে করে কেটে নেই। তারপর সেগুলোকে ছোট ছোট কিউব আকৃতি করে কেটে নিই। ভালো করে কেটে নেওয়ার পর সেগুলো পরিমাণে অনেকগুলো দেখা যাবে তবে আপনি চাইলে আমের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন। আম কাটার সময় খেয়াল করবেন যেন আমের খোসা ছাড়ানো না হয়। কেননা এটি আমের খোসা সহ আচার। তবে আমরা এখানে আমের আটির ব্যবহার করব না শুধু আমের খোসাসহ মাংশল অংশটুকু ব্যবহার করব।

20220515_122016.jpg20220515_122347.jpg

ধাপ-০২


ধাপ-০৩


কাঁচা আমগুলোকে ছোট ছোট আকারে কাটার পর সেগুলোকে আরো পানি শূন্য করতে হবে। কেন আমরা জানি পানি দিয়ে কোনরকম আচার তৈরি করা হলে টা বেশি দিন থাকে না। আচার তৈরি করার জন্য সর্বপ্রথমে আমার টুকরো গুলোকে ভালো করে শুকিয়ে করে নিতে হবে। এর জন্য আমি আমার টুকরাগুলোকে একটি সুতি কাপড়ের উপর বিছিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেই। এভাবে ঘন্টাখানেক রাখার পর আমার আমের উপর থেকে পানি কমে যায় এবং আমের আচার বানানোর উপযোগী হয়ে ওঠে।

20220515_124458.jpg

ধাপ-০৩


ধাপ-০৪


এই ধাপে আমি আচার তৈরি করার জন্য মসলা তৈরি করি। যেকোনো ধরনের আচার তৈরি করার জন্য মসলা রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কেননা মশলাই আচারকে সুস্বাদু করে তোলে। প্রথমে আমি একটি কড়াই নিব এবং তা হালকা গরম করে নেব। কড়াইতে হালকা গরম হওয়ার পর সেখানে কিছু মেথির দানা ছেড়ে দেব। আমি খুব বেশি পরিমাণে মেথি ব্যবহার করব না। খুব বেশি পরিমাণে মেথি ব্যবহার করলে তা তিতা হয়ে যায়। এমনিতে দেওয়ার পর তাই একটু গরম করে নেব।

20220515_122819.jpg

ধাপ-০৪


ধাপ-০৫


এই ধাপে আমরা হালকা গরম করা মেথির সাথে সরিষা যোগ করে দেব। মেথির সাথে সরিষা যোগ করার পর সেটি আরো কিছুক্ষন গরম করে নেব। হালকা গরম করার কারণ হচ্ছে এতে করে তা ব্লেন্ড করতে সুবিধা হবে। দুটো উপাদানই যখন হালকা বাদামি বর্ণ ধারণ করবে তখন নামিয়ে ফেলবো।

20220515_123637.jpg20220515_123646.jpg

ধাপ-০৫


ধাপ-০৬


এই ধাপের একটি ব্লেন্ডার নিয়ে ব্লেন্ডারের ভিতরে সরিষা এবং মেথি গুলো দিয়ে তা ব্লেন্ড করে নিতে হবে ভালো করে। আপনার ছাতের কাছে ব্লেন্ডার না থাকলে তার শিল পাটা দিয়ে বেটেও গুড়া করে নিতে পারবেন । তবে চেষ্টা করবেন সেখানে যেন আর কোন উপাদান যোগ করা না হয়। তারপর গুঁড়ো করা হয়ে গেলে তা আলাদা একটি পাত্রে রেখে দিন।

20220515_123713.jpg

20220515_123832.jpg20220515_124630.jpg

ধাপ-০৬


ধাপ-০৭


এখন একটি কড়াই হালকা সয়াবিন তেল ঢালুন। সচরাচর আচারে সবাই সরিষার তেল ব্যবহার করলেও এই আচারে সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। সয়াবিন তেল গরম হলে সেখানে দুটো মরিচ কেটে টুকরো করে দিয়ে দিন। শুকনো মরিচ কাটা দেওয়া শেষ হলে সেখানে কিছু সরিষা এবং রসুনের কোয়া ছেড়ে দিন। এটি আচরের ঘ্রাণ তৈরি করতে সাহায্য করে।

20220515_124231.jpg
20220515_124257.jpg20220515_124351.jpg

ধাপ-০৭

ধাপ-০৮


আমের আচার তৈরির এই ধাপটি হলো মশালা মেশানোর ধাপ প্রথমে আমি আমার পূর্বে করে রাখা আমের ছোট ছোট টুকরোগুলো একটি বাটিতে নিব এবং সেখানে সর্বপ্রথম সরিষা এবং মেথির পুরো যোগ করব। তারপর সেখানে পরিমাণে বেশি লবন যোগ করব। যেহেতু এই আচারটি বানানো দুইদিন পর থেকে খাওয়া শুরু করা হবে তাই এখানে লবণের পরিমাণ বেশি দেওয়া হয়। এ আঁচারের বিশেষত্ব হলো এটি অনেক বেশি লবণের আচার।

20220515_124742.jpg20220515_124748.jpg

ধাপ-০৮


ধাপ-০৯


সরিষা -মেথির গুঁড়ো এবং লবণ যোগ করার পরে আমি বাকি মসলাগুলো এখন যোগ করে দিবো। এই ধাপে আমি বেশি করে মরিচ গুঁড়ো দিয়ে দেব এবং আমের টুকরোগুলোর সাথে সব মসলাগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিব। আপনি চাইলে চামচ কিংবা হাতের সাহায্যে এটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে পারেন। ভালোভাবে মসলা গুলো মিশিয়ে নেওয়ার পর তাতে আমরা তেলে ভাজা রসুন, শুকনো মরিচ এবং সরিষার উপর থেকে হালকা করে ঢেলে দেব। এটি পুরো আচারের সাথে মেশানোর প্রয়োজন নেই। সবগুলো উপাদান মেশানোর পর তা আমরা ২৪ ঘন্টা কিংবা ৪৮ ঘন্টার জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবো। আমি একটি টিফিন বাটি নিয়ে সেটির ভেতরে আচার রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেই। আর এভাবেই আমার আচার বানানোর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে যায়।

20220515_124932.jpg20220515_125344.jpg

20220515_125323.jpg

ধাপ-০৯


ধন্যবাদ সবাইকে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য


ডিভাইসস্যামসাং গ্যালাক্সি এ-১২
ফটোগ্রাফার@pea07
লোকেশনJJHH+X6 Dinajpur
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমের আচার খেতে আমার খুব ভালো লাগে। তবে আপনার এলাকার রেসেপিটি খুব ইউনিক।সবগুলো ধাপ আপনি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।

আমের আচার দেখলেই তো চোখের জিভে জল আসে। আপনার আমের আচারে অনেক লোভনীয় আপু। প্রতিটি ধাপ অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আপনার আচার দেখে খেতে খুব ইচ্ছে করছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর রেসিপি শেয়ার করার জন্য।

কাঁচা আম দেখলে জিভে পানি আসে না এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আপনার রেসিপিটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। পার্বতীপুরে থাকার সময় আম গাছের নিচে বসে কাঁচা আম বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে মেখে খেতাম। অসাধারণ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য

লোভনীয় খাবার পোস্ট করেছেন আপু। আমার আচার অনেক পছন্দের। জলপাই, আম, বরই এগুলোর আচার পাইলে তো আর কিছু লাগে না। আপনার আচার তৈরি করা দেখে তো আমার লোভ লেগে গেলো।

Loading...

আমের আচার দেখে জ্বিবে জল চলে আসতেছে। কাচা আমের আচার খেতে অনেক ভালো লাগে।আমার মা কাচা আমের আচার তৈরি করতে পারে। আপনি কাচা আমের আচারের রেসিপি খুব সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করছেন। প্রতিটি ধাপ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উপাস্থপনা আপু।ধন্যবাদ

আপু আমি জানি মেথি মাথায় দেয় চুল ভালো রাখার জন্য। এর আগে কখনো আমি মেথি খাওয়া দেখিনি। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে কাচা আমের আচার বানানোর রেসিপি শেয়ার করেছেন। আপনির থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই আপু৷ ধন্যবাদ আপনাকে।

কাঁচা আমের আচার খেতে অনেক ভালো লাগে। তবে কাঁচা আম শুকিয়ে আচার করলে সেটা খেতে আরো সুস্বাদু ও মজাদার হয়। কাঁচা আমের রেসিপি নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

কাঁচা আমের আচার নিয়ে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন।আমরাও কাঁচা আমের আচার বানিয়ে খাই।অনেক সুসাদু এই কাঁচা আমের আচার।সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে সেয়ার করেছেন।সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।

আমার আচার খেতে আমার বেশ ভালোই লাগে। আপনি আচার তৈরির প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন। আপনার রেসিপিটি দেখে আমি ও বাসায় আমের আচার বানানোর চেষ্টা করব।

কাঁচা আমের আচাড় আমার অনেক পছন্দের। বাড়িতে মা আমার জন্য কাঁচা আমের আচাড় বানিয়ে দেয়।এই কাঁচা আমের আচাড় করতে যে প্রক্রিয়া গুলো প্রয়োজন আপনি বেশ সুন্দর করে পোস্টে তুলে ধরেছেন। আপনার পোস্ট কোয়ালিটি যথেষ্ট ভাল।

কাঁচা আমের আচার খেতে অনেক সুস্বাদু, আমাদের বাসায় এইরকম ভাবে আচার তৈরি করে।আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ধাপ গুলো সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটা পোস্ট করার জন্য।

আমরা বাঙালি জাতি আচার প্রিয় মানুষ। বিভিন্ন ধরনের আচার আমাদের সকলের পছন্দের তার মধ্যে আম, জলপাই, তেঁতুল, চালতা এই সব আচার প্রায় মানুষের বাসায় পাওয়া যায়। আচার তৈরির করার রেসিপি দারুণ লেগেছে। ধন্যবাদ আপি।