রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে শুয়ে আছে সাদিক। তার সারা দেহে এক টুকরাও কাপড় নেই। হাত দুটো প্রসারিত করে হাতের উপর বড় তারকাটা দিয়ে ফ্লোরে গেঁথে রাখা হয়েছে হাত দুটোকে। একটু নড়াচড়া করতেই সে যেন জাহান্নামের যন্ত্রণা অনুভব করছে। তার দৃষ্টি নিজের নিম্মাঙ্গে। সেখানে কেউ একজন বসে তার পুরুষাঙ্গটা ওপর থেকে নিচে ছুরি দিয়ে স্পর্শ করছে। সাদিকের মুখের মধ্যে মেয়েদের বেশ কয়েকটি অন্তর্বাস ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। যার ফলে সে চাইলেও কথা বলতে পারছে না। সাদিকের পুরুষাঙ্গটা ধরে রাখা ব্যক্তিটির মুখে পৈচাশিক হাসি ফুটে উঠল।
সাদিকের চোখের সামনে তার পুরুষাঙ্গ সোজা করে ধরল হুডি পরিহিত সেই ব্যক্তিটি। বাম হাতে থাকা ছুরি দিয়ে চোখের পলকেই গোড়া থেকে কেটে ফেলল সাদিকের পুরুষাঙ্গটি। চিৎকার দিতে যেও যেন ব্যথা আরো বৃদ্ধি হচ্ছে সাদিকের। দুই হাতের পেরেক সেই যন্ত্রণাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন পুরুষাঙ্গটা সেই ব্যক্তিটি ঝুলাতে ঝুলাতে সাদিকের মুখের সামনে নিয়ে এলো। টপটপিয়ে রক্তগুলো সাদিকের চোখে-মুখে পড়তে লাগলো। পুরুষাঙ্গটা সাদিকের বুকের উপর রেখে আবারো নিম্মাঙ্গের দিকে এগিয়ে গেল ব্যক্তিটি। রক্তাক্ত ছুরিটা ধীরে ধীরে সাদিকের অন্ডোকোষের উপর ছোঁয়াতে লাগলো ব্যক্তিটি। সাদিকের রুহ যেন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। শুরু থেকেই তার পুরো শরীরের হাজারো ব্লেডের আঘাত ছিলো। যেনো কেউ একজন সারা দেহে ব্লেডের বৃষ্টি ঝরিয়েছে। ব্যক্তিটি সাদিকের অন্ডকোষটি হাতে নিয়ে ঝুলাতে লাগলো। সাদিকের চেহারা যেনো ভীত কাপুরুষের মত হয়ে গেলো। সাদিকের ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টি দেখে ঠোঁট বাঁকা করে মুচকি হাসি দিয়ে সাদিকের অন্ডকোষটা মুহূর্তের মধ্যেই কেটে ফেলল সেই ব্যক্তিটি। গলা কাটা মুরগীর মত কাতরাতে লাগলো সাদিক। নিষ্ঠুরতার সীমা চরমভাবে অতিক্রম করল হুডি পরিহিত লোকটি।
এতেই সে ক্ষান্ত হননি। তার ব্যাগ থেকে একটি লবনের প্যাকেট বের করল সে। লোকটির হাতে লবনের প্যাকেট দেখে সাদিক যেন জিন্দা লাশ হয়ে গেলো। সে জানে ওই লবণের একটি কনাও যদি তার এই ক্ষতবিক্ষত শরীর ছোঁয়, তবে সেই যন্ত্রণা জাহান্নামের যন্ত্রণার চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। লোকটি বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় না করে অন্ডকোষটি ও পুরুষাঙ্গটি বাম হাতে নিয়ে ডান হাত দিয়ে লবনের প্যাকেট এর প্রতিটা লবণের কণা সাদিকের সারা দেহে ছিটিয়ে দিতে লাগল।
সাদিক না পারছে চিৎকার করে কাঁদতে না পারছে চুপ করে থাকতে। এ যেনো মৃত্যুর থেকেও ভয়ানক। হুডি পরিহিত ব্যক্তিটি ব্যাগ থেকে একটি পলিথিন ও একটি হাতুড়ি বের করল। হাতুড়িটি দিয়ে সাদিকের অণ্ডকোষ তার চোখের সামনেই থেতলে দিতে লাগলো। অন্ডকোষের থেকে রক্তগুলো এদিক ওদিক ছিটে যাচ্ছে। একরাশ ঘৃণা নিয়ে থেতলে যাওয়া অন্ডকোষটিতে থুথু দিয়ে সাদিকের মুখের অন্তর্বাসগুলো বের করার সাথে সাথেই সেই অন্ডকোষের ভর্তা সাদিকের মুখে পুরে দিল লোকটি।
সাদিকের দেহ এতক্ষণে নিথর হয়ে এসেছে। বুকের মধ্যে থাকা ছোট্ট প্রাণটা বেড়িয়ে গেলো। লোকটি সাদিকের পুরুষাঙ্গটা দিয়ে দেওয়ালে কিছু লিখতে শুরু করল। লেখা শেষ হতেই নিজের ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে হাসতে পুরুষাঙ্গটি পলিথিনে ভরে সাদিকের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। তার পরনে থাকা গ্লাভসটি সাদিকের মুখের মধ্যে রেখে আগেই পুড়িয়ে ফেলেছে সে। সাদিকের মুখের উপর প্লাস্টিকের গলিত অংশ দেখা যাচ্ছে।
আশেপাশে তেমন কোন লোকজন নেই। রাত কম হয়নি। বাম হাতের ঘড়িটা এগিয়ে নিয়ে সময়টা দেখে নিল লোকটি। রাত ১ টা বাজে। তাকে যে এখনো আরো দুইটি খুন করতে হবে এবং সেগুলো হবে একই নিয়মে। তাদেরও পুরুষাঙ্গটি পলিথিনের মধ্যে জায়গা পাবে এবং অন্ডকোষের ভর্তা তাদের মুখে শোভা পাবে। কালো হুডি, কালো প্যান্ট ও কালো শু পড়ে লোকটি এগিয়ে গেল তার পরবর্তী শিকারের বাড়িতে। যেতে যেতে তার মুখ থেকে বিচ্ছিরিভাবে কিছু শব্দ ফিসফিসিয়ে বেরুতে লাগলো,
"হে পুরুষ সমাজ, তোমাদের অতিরিক্ত পুরুষত্বের উপর আমি থুথু ছিটাই!"
.
.
আজকের প্রতিটা সংবাদ মাধ্যমে একটি খবরই প্রধান শিরোনামে উঠে এসেছে। গতকাল রাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা জনাব আমজাদ হোসেনের একমাত্র ছেলে সাদিক হাসান ও তার দুই বন্ধু রাতুল এবং ইশমামের ভয়ানক মৃত্যু হয়েছে। তাদেরকে শুধু হত্যা করা হয়নি বরং তাদের দেহ থেকে পুরুষাঙ্গ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনজনের থিতলে যাওয়া অন্ডকোষ মুখের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। এ যেন কোন মৃত্যু নয়, এ যেন তাদের উপর অত্যাচার। দেশের শীর্ষ শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ এর একমাত্র ছেলে এবং তার বন্ধুদের এইরকম নির্মমভাবে হত্যা কারীকে ধরার জন্য সরকারের উপর মহল থেকে পুলিশের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি মিটিং-এ পুলিশের আইজিপি, জনাব রায়হান চৌধুরীর উপস্থিতিতে জরুরী মিটিং ডাকা হয়েছে। গোলটেবিলের মূল প্রান্তে দাঁড়িয়ে গেলেন আইজিপি জনাব রায়হান চৌধুরী। সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলতে শুরু করলেন,
"আমাদের দেশে এইরকম হত্যা খুব কমই হয়েছে। আমি জানিনা কোন নরপিচাশ এইভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে? সাদিককে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ওকে আমি প্রথম দেখেছি যখন ওর বয়স দুই মাস। আজ তেইশ বছরের সাদিক এর কোন অপরাধী আমার চোখে পড়েনি। এরকম একটা দুধের বাচ্চাকে এত নির্মম ভাবে যে হত্যা করেছে তার শাস্তি জনসম্মুক্ষে হওয়া উচিত। তাই আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা এবং অধ্যাবসায়ের পরীক্ষা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।"
"আমার কিছু কথা ছিল স্যার।"
আইজিপি স্যারের কথা শেষ না হতেই এসপি তরিকুল ইসলাম দাঁড়িয়ে গেলেন।
"জ্বী মিস্টার তরিকুল বলুন, কী বলবেন?"
"স্যার আপনি নিশ্চিত জনাব সাদিক হাসান এবং তার বন্ধুরা কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না? কেননা তাদেরকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের পুরুষাঙ্গ যেভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে তা দ্বারা আমার মনে হয় তারা কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।"
"আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন মিস্টার তরিকুল?"
"না স্যার। পাগল হইনি। তবে আপনি হয়তো একটা জিনিস মিস করে গিয়েছেন। সেই সাইকো তিনটি লাশের ঘরের দেওয়ালেই লিখে রেখেছিল, 'This is the curse from Hercules!'"
"আপনি কি মিন করছেন তারা ধর্ষণকারী? আর ইউ ক্রেজি মিস্টার তরিকুল! আপনি এখন এই সময়ে এসব কথা বললে আপনার চাকরি থাকবে না। সো চুজ ইওর ওয়ার্ড ওয়াইজলি।"
"সরি স্যার। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।"
"ইউ বেটার। কারণ আজ পর্যন্ত ভিকটিমের তিনজনের কেউই কোন অপরাধে যুক্ত এমন খবর বা অভিযোগ কারো কাছেই নেই।"
মিস্টার তরিকুল রায়হান চৌধুরীর কথা শেষ হতেই আস্তে বসে পড়লেন। সেখানে আলোচনা শেষে এটাই সিদ্ধান্ত হলো যে এসপি তরিকুল ইসলামকে প্রধান করে দশ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে।
.
.
নুরজাহান মঞ্জিলের পঞ্চম ফ্লোরের ছোট্ট ঘরে রাখা একটি টেবিলের উপরে পা রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঝিমাচ্ছে রাফি। গরমের ছুটিতে তার কলেজ বন্ধ দিয়েছে। ইন্টার প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্র হিসেবে তেমন খারাপ না সে। তার প্রিয় বিষয় হচ্ছে গণিত। গণিতের মারপ্যাঁচ তার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হয়। তার মায়ের নামে মিলিয়ে নাম রাখা এই পাঁচতলা ভবনটির সবার উপরের রুমটার প্রতিটি দেওয়ালে দেওয়ালে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে লেখা ছিল, 'মামু ভাগ্নে গোয়েন্দা এজেন্সি।'
রুমটি পাঁচতলা ভবনের সবার উপর অবস্থিত হওয়ায় দুপুরের অসম্ভব রোদে টেকা মুশকিল। কিন্তু অফিসে যদি কোন কর্মকর্তা না থাকে তাহলে ক্লায়েন্ট এসে কার সাথে কথা বলবে?
কিছুক্ষণ পরেই ছোট্ট রুমের দরজায় ঠক ঠক শব্দ রাফির ঝিমানো থামিয়ে দিল। হকচকিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে দরজার সামনে দাঁড়াল সে। অবশেষে একজন ক্লায়েন্ট পাওয়া গেল! পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুলগুলো সোজা করে পরনে থাকা নীল রংয়ের গেঞ্জিটা একটু ঠিকঠাক করে হাসিমুখে দরজা খুললো রাফি। তবে দরজা খুলে সে যাকে দেখল তাকে দেখে সে মোটেও খুশি হলো না।
"কিরে ভাগ্নে এখানে এভাবে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছিস যে?" জিজ্ঞেস ক মামু।
"ধুরো মামু তুমি এখানে! আমি আরো ভাবলাম আমাদের এজেন্সিতে মনে হয় কোন ক্লায়েন্ট আসলো। তুমিও না মামু। সব বানচাল করে দাও।"
রাগে কটমট করতে করতে রাফি তার আগের অবস্থানে যেয়ে বসে পড়ল। মামুর পরনে একটি ময়লা সাদা চেক শার্ট এবং ঢোলা কালো জিন্সের প্যান্ট ছিল। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ও শরীরের নড়বড়ে অবস্থা। হাতের মধ্যে থাকা সংবাদপত্রটি টেবিলে রেখে বসে পরল বয়স সে। বয়স ৩০ পার হলেও জীবন নিয়ে তার কোনই চিন্তা নেই। না আছে চাকরি, না আছে বউ। ইন্টার পড়ুয়া রাফির সাথেই এই গোয়েন্দা এজেন্সি চালায়। আর প্রায় সব কেইসই ফ্রীতে তদন্ত করে। এলাকায় যদিও টুকটাক নাম আছে, এলাকার বাহিরে কোনো কাকপক্ষিও তাকে চেনে না।
"পেপারে কী দেখছো মামু? কোন কেস আছে নাকি? তুমি তো আবার ফ্রিজ ছাড়া কিছু পাওনা।"
"আছে বৈকি। মারাত্মক একটা কেস আছে রে ভাগ্নে।"
"বলো তাহলে।"
"শোন।"
ভাগ্নে, মামুর কথায় মনোযোগ দিলো।
"কাল রাতে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আমজাদ হোসেনের একমাত্র সন্তান সাদিক হাসান ও তার দুই বন্ধু রাতুল এবং ইশমাম নির্মমভাবে খুন হয়। এতটা জঘন্য হত্যা এর আগে কখনো হয়নি এদেশে।"
"আমি তো সকাল থেকে এখানেই বসে রয়েছি ক্লায়েন্টের অপেক্ষায়। তাই টিভি দেখতে পারিনি। তারপর বলো, কেসটার অগ্রগতি কীরকম? এরকম জঘন্য হত্যাকারীদের কত এতক্ষণ ধরার জন্য সব পদক্ষেপ নিয়ে নেওয়ার কথা। আমজাদ হোসেন তো বিশাল বড় নেতা। কোন প্রাইভেট ডিটেকটিভ হায়ার করবে নিশ্চয়ই?"
"বলতে পারি না রে। পেপারে তো পড়লাম দশ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।"
"তার মানে পুলিশ হ্যান্ডেল করবে?" নিরাশ হয়ে জিজ্ঞেস করল রাফি।
মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো রবি।
"তাহলে আমাদের কী? পুলিশ তাদের কাজ করুক।"
"আরে না, না ভাগ্নে। শোন। এটা যেহেতু একটি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এর ছেলের ব্যাপার, সেহেতু যদি আমরা খুনিকে ধরে ফেলতে পারি তাহলে চিন্তা কর আমাদের এই ছোট কামড়ার অফিসে পোষাবে না। আমাদের বিরাট বড় অফিস হবে। আমাদের কাছে কেস আসতেই থাকবে, আসতেই থাকবে। আমরা হ্যান্ডেল করার সুযোগ পাবো না। আমাদের নামডাক হবে দেশে। দেশের বাহিরেও হতে পারে নামডাক। চিন্তা কর ভাগ্নে, তোর মামাকে আর কেউ বেকার বলতে পারবে না! একটি কেইস, একটি কেইসই আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে রাফি।" কথা বলতে বলতে রবির চোখ ছলছল করছিলো।
"তুমি যেভাবে বলছো মনে হয় তুমি এখনই কেসটা সলভ করে ফেলেছ মামু। পুলিশের কাজ এটা। তুমিতো মনে হয় ঘটনাস্থলেও ঢুকতে পারবে না।"
"আরে ভাগ্নে চল না। আমাদের পরিচয় দিলে হয়তোবা কেসটা আমরাও সলভ করার সুযোগ পাবো। শুনেছি এসপি তরিকুল ইসলাম বেশ ভালো লোক।"
"আর পরিচয়! ফ্রী ফ্রী কেস সলভ করে তুমি যেরকম ভাবে সময় নষ্ট করছো, তেমনি আমারও সময় বরবাদ হচ্ছে।"
"তার মানে তুই যাবি না?"
"মামুর কথা কী আর ফেলা যায়! চলো যাওয়া যাক রামপুরা।"
ব্যাগের মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাফি এবং রবি দুজনেই রওনা দিল রামপুর এর উদ্দেশ্যে। রবি, পড়াশোনা আন্ডারমেট্রিক। পরিবারের টানাপোড়েনের শিকারে পড়াশোনা হয়নি। বোন নুরজাহানের বিয়ের পর তার সাথেই চলে আসে। দুলাভাই আফজার উদ্দিনের কোম্পানীতে চাকরির কথা বললেও রবি সেখানে যায় না। কারন সে শিক্ষিত না। তার স্থানে যদি একজন শিক্ষিত লোক চাকরী করতে পারে তবে সেই লোকের মেধার সম্মান দেওয়া হবে।
.
.
রাজনীতিবিদ আমজাদ হোসেনের বাড়িটি সম্পূর্ণ সিলগালা করে রাখা হয়েছে। সাদিক হাসানসহ বাকি দুজনের লাশ অনেক আগেই পোষ্টমার্টাম এ পাঠানো হয়েছে। এরকম বীভৎস খুন এর আগে এসপি তরিকুল ইসলাম দেখেনি। দেওয়ালে রক্ত দিয়ে লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইল তরিকুল ইসলাম। হঠাৎ শোরগোলের শব্দ শুনতে পেল সে। এক পা দু পা করে রুম থেকে বের হতেই চোখে পড়ল ঝামেলার উপর।
বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও রবি জোর করে বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে।
"হারুন কী হয়েছে ওখানে?" একটু জোরে কথাটি বললেন তরিকুল ইসলাম।
নিচতলা থেকে হারুন চিৎকার দিয়ে বললেন,
"স্যার একটা পাগল নিজেকে গোয়েন্দা বলে দাবি করছে। ওনার কাছে না আছে কোন কার্ড না আছে কোন পারমিশন। সে নাকি এই কেস নিমিষেই সলভ করে দেবে।"
হারুন কে থামিয়ে রবি এসপি তরিকুলের উদ্দেশ্যে চিৎকার দিয়ে বললেন,
"স্যার আমি মামু গোয়েন্দা। আমাকে আপনার সাথে নিন স্যার। দেখবেন খুবই দ্রুত এই কেইস সলভ হয়ে যাবে।"
এই দুই দিনের ৪৮ ঘন্টার থেকে ১২ ঘন্টা চলে গিয়েছে। তার ওপর এখানে ঝামেলা। রাগের মাথায় তরিকুল ইসলামের হাতে থাকা লাঠিটা ছুড়ে মারলো রবির উদ্দেশ্যে।
"এই পাগলকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও। উপরমহল থেকে প্রেসার, তার ওপর এই পাগলামি! তোমার কি চাকরির ভয় নেই হারুন? সিলগালা একটি বাড়ির মধ্যে কিভাবে একজন অপরিচিত লোক ঢুকে পড়ে!"
"সরি স্যার। ওই হারামজাদা এখান থেকে দূর হ! দূর হ! তোর জন্য আমি আমার চাকরি খামু নাকি!"
পুলিশ ধাক্কাধাক্কি করে রবিকে বাড়ি ভিতর থেকে বের করে দিলো। রবি বারবার এসপি তরিকুলকে উদ্দেশ্য করে বলছিল,
"স্যার বিশ্বাস করেন, আমাকে সুযোগ দেন। আপনাকে নিরাশ করব না আমি...।"
রবিকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে সেই বাড়ির ত্রিসীমানার বাহিরে পাঠিয়ে দিল পুলিশ ফোর্স এর কয়েকজন সদস্য। রাগের মাথায় সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো রবি। কোথা থেকে যেন রাফি রবিকে টানতে টানতে এখান থেকে দুরে নিয়ে গেল। রবির চোখে-মুখে তখনও ক্ষোভ ও রাগ দেখা যাচ্ছে।
.
.
কয়েক ঘন্টা পরে রবি আবারো ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এবার দোকান থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে নিয়ে এসেছে। ভাগ্যক্রমে এবার এসপি তরিকুল ইসলাম বাড়ির বাইরে ছিলেন। তরিকুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঝাড়ি শুনছিলেন। কেননা ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তদন্তের কোনো উন্নতি মিলছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাগ সম্পূর্ণই এসপি তরিকুলের উপর এসে পড়ছে। বেশ কয়েকটা গালাগাল এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুমকি নিয়ে ফোন কেটে একটি চেয়ারে বসে পড়লেন তিনি। এসপি তরিকুল ইসলামের চোখ দিয়ে জল ঝরতে লাগল। এমন সময় রবি পেছন থেকে তার কাঁধে হাত দিল।
রবিকে দ্বিতীয়বার এই স্থানে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না এসপি তরিকুল ইসলাম। মাত্র সৃষ্টি হওয়া রাগের সীমা অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় ডান হাত দিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল রবির গালে। নিজেকে সামলাতে না পেরে পেরে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল রবি। তবুও হাসিমুখে উঠে দাঁড়িয়ে তরিকুল ইসলামকে বলতে লাগল,
"স্যার বিশ্বাস করেন। আমি আর আমার ভাগ্নে দুজনই গোয়েন্দা। আপনার যেকোন সাহায্যে আমরা নিঃস্বার্থভাবে টাকা ছাড়াই করতে রাজি আছি। দয়া করে আমাদের...।"
রবি কথা শেষ না করতেই এসপি তরিকুল ইসলাম রবির তলপেটে মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে আঘাত করলো। রবির মুখ দিয়ে ছিটকে রক্ত বের হয়ে সে কাত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
"এমনিই আছি ওপর মহলের চাপে! তার ওপর এখন আবার নিজের চাকরি নিয়েও হুমকির মুখে আছি না। কেইসকে এদিক ওদিক করতে পারছি না। তার উপর এই হারামজাদা এসে বারবার আমাকে বিরক্ত করছে!"
"স্যার, স্যার এই দেখেন আমি গোয়েন্দার ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে নিয়ে এসেছি।আমাকে মারেন কাটেন যাই করেন এবার তো আমাকে কেইসে নিবেন।"
এসপি তরিকুল ইসলাম রাগের মাথায় তার পকেট থেকে হ্যান্ডগান বের করে সোজা রবির মাথায় তাক করলো।
"হারামির বাচ্চা আরেকটি কথা মুখ দিয়ে বের করছিস তবে এই পিতলের বুলেট তোর মাথা ফুটো করে চলে যাবে। তার আগে এখান থেকে ফুটে যা!"
সেই আগের মতনই রাফি দৌড়ে এসে রবিকে জড়িয়ে ধরে এসপি তরিকুল ইসলামের থেকে রক্ষা করল। রাগে কটমট করতে করতে সেই স্থান ত্যাগ করলেন এসপি তরিকুল ইসলাম। রবি তার কোলে মাথা রেখে হাসতে শুরু করল।
.
.
রাত বারোটা পার হয়েছে। আজও কালো হুডি, কালো প্যান্ট ও কালো শু পড়া লোকটি তার পরবর্তী শিকারের বাড়ির দিকে যেতে লাগলো। তার ব্যাগের ভিতর তিন তিনটা পুরুষাঙ্গ ভর্তি ব্যাগ, একটি লবনের প্যাকেট, বেশ কিছু ব্লেড, ছুরি ও একটি হাতুরী শোভা পাচ্ছে।
চলবে..........।
গল্পঃ #বিকৃত_বধ।
পর্বঃ ০১
লেখকঃ মেহেদী হাসান রাব্বি
গল্পটি আমার নিজের লেখা। আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। আমি প্রতিদিন একটি করে নতুন পর্ব দেবো। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
This post has received a 26.47 % upvote from @boomerang.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit