বাস্তব ঘটনাঃ ঋণে ডুবে হারিয়ে যাওয়া মানুষ

in hive-170554 •  4 months ago 

আসসালামুয়ালাইক। কেমন আছেন আপনারা? আজকে আমি একটি বাস্তব ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ঘটনাটি ঋণে জর্জরিত এক ব্যক্তির যিনি কখনই তার ঋণ পরিশোধ নিয়ে খুব একটা ভাবেননি। সবসময় শর্ট-কাট পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন এবং এখন সব কিছুই হারাতে বসেছেন। অদূরদর্শী পরিকল্পনা এবং শর্ট-কাট বুদ্ধি যে একটা মানুষকে কতটা অসহা করতে পারেন তার যোগ্য উদাহরণ তিনি। তার জীবনের ঘটনাগুলো থেকে হয়ত আপনি শিক্ষা নিতে পারেন বলেই শেয়ার করা।

pexels-daniel-reche-718241-3601097.jpg

Photo by Daniel Reche

সঙ্গত কারনে আমি লোকটি নাম-পরিচয় গোপন করছি। পেশায় তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। যেখানে তার ফার্মেসি; সেখানে সবচেয়ে আগে তিনি এসেছিলেন। দোকানটি আগে তার বড় ভাইয়ের ছিল। তার ভাইও তার মত ঋণখেলাপি ছিল এবং একসময় সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর ভাইয়ের কাছে থেকে বড় হয়েছেন। খুব অল্প বয়সেই ফার্মেসিতে বসা শুরু করেন। ঋণখেলাপি ভাই পালিয়ে গেলেও ভাইয়ের একটি গুণ তার মাঝেও ছড়িয়ে যান। সেটা হচ্ছে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নেয়া।

এভাবে ঋণ নিতে নিতে গত পনের বছরে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা তিনি ঋণ নিয়ে ফেলেছেন। শ্বশুরের সাপোর্টে একটি বাড়িও কিনেছেন। পরবর্তীতে সেই বাড়ির মর্টগেজ দিয়েও বড় একটা এমাউন্ট তিনি ঋণ নিয়েছেন ব্যাংকের কাছ থেকে। তার কিস্তির পরিমাণ শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় মাসে দুই লক্ষ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু তার দোকান থেকে সলিড আয় ছিল সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৮০ হাজার। ফলে তিনি ঠিকমত তার কিস্তিও পরিশোধ করতে পারতেন না। এমনও হয়েছে যে তিনি মাসের শেষে কিস্তি পরিশোধের জন্য আবার দিনভিত্তিক ঋণ নিয়েছেন। অর্থাৎ, এক লক্ষ টাকা নিয়েছেন যা প্রতিদিন ১০০০ করে জমা দিয়ে শেষ করবেন।

তিনি যে এত পরিমাণ ঋণের চাপে আছেন তা নিয়ে তার মাথাব্যথা ছিলনা। বরং তিনি প্রতি মাসে দেড় লক্ষ টাকার বেশি কিস্তি দেন তা নিয়ে তার গর্ব কাজ করত। দিন দিন এভাবেই চলছিল। ভালোই চলছিল। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় হঠাৎ করে ব্যাংক নোটিশ চলে আসায়। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংকের কোন কিস্তি পরিশোধ করেননি। ব্যাংক এজন্য তাকে প্রথম নোটিশ পাঠায়। যা দেখে তার টনক নড়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ব্যাংক থেকে নেয়া ২৬ লাখের ঋণ তিনি ১৫ লাখ পরিশোধের পরও ব্যাংক এখনও ২০ লাখের উপরে পায় তার কাছে। আশা, ব্যুরো বাংলা, ব্রাক, পল্লী মঙ্গল, পল্লী উন্নয়নের মত এনজিও গুলোও পায় ১২ লাখের উপরে টাকা। সব চাপ হঠাৎ করেই চলে আসে তার কাছে।

pexels-cottonbro-6603402.jpg

Photo by cottonbro studio

সিদ্ধান্ত নেন নিজের বাড়ি বিক্রি করে ফেলবেন। কিন্তু বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন কাগজ পত্র তখনও তার নামে নামজারি করে আনা হয়নি। নামজারি করতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তার কেনা জমি আরেকজনের নামে নামজারি করা হয়ে গেছে। ফলে জমি তিনি বিক্রিও করতে পারবেন না।

এদিকে, তিনি যাদের কাছে জমি বিক্রি বাবদ বায়না করে টাকা নিয়েছেন ৩০ লক্ষ, তাদেরকে তাদের টাকাও বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। কারন, সেই টাকা দিয়ে তিনি এনজিওগুলোর কিস্তি পরিশোধ করেছেন। পাশাপাশি অন্য আরও অনেক ঋণ দিয়েছেন। কিছু টাকা দিয়ে কক্সবাজারে গিয়ে ফূর্তিও করে এসেছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি তার দোকানের শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। শেয়ার বিক্রিও করে দেন এবং এতে করে সাময়িক ভাবে তিনি কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন। কিন্তু কিছুদিন পর ঝামেলা আরও বড় হয়। বাড়ি কেনা বাবদ যারা টাকা বায়না করেছেন তারা ক্রমাগত চাপ দিতে থাকলেন, অন্যথায় তারা মামলার দিকে এগুবে। এত টাকা ইনভেস্ট করেও লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে তার ব্যবসায়ীক পার্টনারও অখুশি ছিল। কারন, মূলত তার জন্যই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে।

তার হাতে তখন দুটি অপশন আসে। বাড়ি বিক্রি করে নিজের ঋণের বোঝা হালকা কর ও দোকানে ইনভেস্ট করে ব্যবসা বাড়াও; না হয় দোকান বিক্রি করে ঋণের বোঝা সামান্য হালকা কর। তিনি দ্বিতীয়টিই করলেন। নিজের একমাত্র আয়ের উৎস বিক্রি করে দিলেন। এখান থেকে পাওয়া টাকা যে তিনি কাকে দিবেন সেটাই এখন বুঝছেন না। কারন, বিক্রি বাবদ যারা বায়না করেছে তারা এর চেয়েও বেশি টাকা পায়। ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে গেলে তার হাতে বাড়তি কানাকড়িও থাকবে না। বিভিন্ন মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে যেসব ঋণ নিয়ে আঁটকে রেখেছেন তারাও এই সুযোগে চাপ দিয়ে নিজেদের অর্থ উদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি দোকান বিক্রির পুরো টাকাও এভাবে বিলিয়ে দেয়ার পরও তার বড় যে দুটি ঋণ; ব্যাংক লোন ও বায়নার টাকার কোন হেরফেরই হবেনা। তা বহাল তবিয়তেই থাকবে।

অর্থাৎ, তার এখনও ব্যাংকের সময় হলে বাড়ি নিলামে তোলার মত ঝামেলাও রয়ে গেছে। আবার বায়নার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে হয় কম দামে তাদেরকে বাড়ি দিয়ে দিতে হবে না হয় মামলা খেয়ে জেল-জরিমানার দিকে যেতে হবে। এভাবেই দিন দিন তার শর্ট-কাট পন্থা তাকে রাস্তায় নামিয়ে দিবে। তাই বলি, পরিশ্রমের কোন বিকল্প নাই। শর্টকাট কোন সঠিক পন্থা নয়। আপনাকে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। অন্য যে পন্থাই অনুসরণ করেন না কেন, আপনাকে পস্তাতে হতে পারে।


আমার সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আপনি খুব সুন্দর একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করেছেন। এটা সত্যিই অনেক শিক্ষামূলক একটি ঘটনা। আমাদের কখনো ঋণখেলাপি হওয়া উচিত নয়।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

ঠিক বলেছেন আপু। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঋণমুক্ত থাকার তৌফিক দান করুক।

Hi, Greetings, Good to see you Here:)

Thank you very much for sharing a beautiful article with us. Hope you stay active and keep engaging with everyone. Join our Discord servers for help. Click the link below to join our discord server. https://discord.gg/6by5BAtAAC



DescriptionInformation
Plagiarism Free
#steemexlusive
Bot Free
AI write Free
Verified User
Support #burnsteem25x
Community beneficiaries
Voting CSI3.7 ( 0.00 % self, 36 upvotes, 27 accounts, last 7d )
Result Club5050

Hello sabbirakib vai,Reading your post, one thing I realized is that taking loans is actually bad, we have religiousTaking interest is both criminal so in fact we should never take or give loan from anyoneYou should live your life with what you have and don't expect more than that. Especially in our rural areas, some associations are worse than banks. I think they give more trouble to people.Many people can actually learn a lot by seeing this post of yours. It is good to see the post

Absolutely. NGO is worse than Bank. Thank you for your kind response.