ইতিহাসে হাজার দুয়ারীর কথা আমারা সবাই জানি, ২০১৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে (বাংলাদেশের রাজশাহীর পাশে) সেই হাজার দুয়ারী দেখতে গিয়েছিলাম, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব এর স্মৃতি বিজড়িত মুর্শিদাবাদ, ভ্রমনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। আমি আর আমার মা দুজন মিলে পারি জমিয়েছিলাম আমরা। কৃষ্ণ নগর থেকে রওনা দিয়েছিলাম ভোর সাড়ে পাঁচটাই। বহরমপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে গিয়েছিল সকাল ১২ঃ৩০ টার মত। বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। আজব এ শহর, ট্রেন থেকে নেমে আমরা বেশ অবাক হয়ে দেখছিলাম এই শহরের আজব মানুষদের কাণ্ডকারখানা। ভাগীরথী নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল ধর্মীয় উপসনালয়। সেখানে লাইন ধরে পুজো করছে নানা বয়সের নানা শ্রেনীর লোক। একেকজনের একেক বুলি, একেকজনের একেক পোষাক। সাধু দরবেশদের জটাধরা চুল হাটু ছুঁইছুঁই। মাঝখানে বসে নানারকম ধর্মীয় কাহিনী ও ভাগ্য গণনারর ফলাফল উপস্থাপন করছেন তারা। তাদেরকে ঘিরে বসে আছে নানা পেশার নানা শ্রেনীর লোক। বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে মুর্শিদাবাদ শহরে প্রবেশ করলাম। এই পথটুকুতে আসার সময় চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থানীয় দর্শনীয় স্থান গুলোও একবার করে দেখে নিয়েছি। যখন আমরা হাজারদুয়ারীর মুল গেটের সামনাসামনি এসে পৌঁছেছি তখন ঘড়িতে ২ঃ৩০ টা ছুঁইছুঁই। বাহির থেকে দুপুরের খাবার সেরে তবেই ভেতরে ঢুকলাম। খুব সাধারন খাবারগুলো খালি পেটে অসাধারন বলে মনে হলো। যাইহোক মুল ফটক এর সামনে এসে দাঁড়িয়েছি সূর্য তখন মাথার উপরে, প্রচণ্ড গরম আর রোদ, সামনে তাকিয়ে হাজার দুয়ারীর বিশালতা দেখে যেনো মনে হল যদি ভেতরে না ও যেতে পারি, এই যে ৮০ ফুটের প্রাসাদ বাইরে থেকে পুরোটা দেখতে পাচ্ছি এতেই ভ্রমন স্বার্থক। আমরা মুল ফটকের পাশে একটি ছোট্ট গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম। তারপর টিকিট কেটে সুদৃশ্য বাগানের মধ্যে দিয়ে হেটে প্রাসাদের কাছে পৌছালাম। হাজার দুয়ারীর ঠিক উল্টোপাশে রয়েছে ইমামবাড়া। মহরমের ১০ দিনের জন্যই শুধু এই ভবনটির দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন বন্ধ। যেতে পারব না বলে একটু মনটা ঝিমিয়ে আসলেও আবার তা আগের মতই উচ্ছাসিত হয়ে উঠল, যখন আমি হাজার দুয়ারীর ভেতরে প্রবেশ করলাম, শুধু ভিতরে আমি গিয়েছিলাম আর মা বাইরে ছিল। লোকজন এত বেশি ছিল, মা ভিতরে আর ঢুকতে চাইল না, আমিও আর জোড় করলাম না, খুব গরমও ছিল তখন। যাই হোক, লাল গালিচা পেতে রাখা হয়েছে সর্বত্র। ৩৭ ধাপ সিড়ি অতিক্রম করে তবেই নিচতালা। ৮০ ফুটের বিল্ডিং কিন্ত মাত্র তিনতালা। প্রধানফটকের ভেতর এ প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম অসাধারন একটি কক্ষ, যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে মুর্শিদাবাদ এর ইতিহাস। মুর্শিদাবাদের নবাবদের ইতিহাস। আর হাজার দুয়ারীর ইতিহাস। অনেকে মনে করেন মুর্শিদাবাদ যেহেতু বাংলার রাজধানী ছিল। তাহলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মহল ছিল এই হাজার দুয়ারী। কিন্ত আসলে তা নয়, নবাব সিরাজের পতনের অনেককাল পরে এই হাজার দুয়ারী নির্মিত হয়। হাজারদুয়ারী পুরো ইউরোপীয় ( ইটালিক ডিজাইনে), ইউরোপীয় কারিগর দ্বারা, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন মীর জাফরের বংশধর নবাব হুমায়ন জা। তারপর থেকে সকল ইংরেজ শাসনাধীন নবাবেরা এতে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করতো। যদিও এটি নবাব সিরাজের আমলের নয়, তবুও পরে ভারত সরকার যখন এটিকে যাদুঘর হিসেবে পুনরায় নির্মান করেন, তখন থেকেই এখানে নবাব সিরাজ সহ বাংলার সকল নবাবের স্মৃতিবজরিত সকল সামগ্রী ও তথ্য এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এমনকি নবাবকে রানী ভিক্টোরিয়া যে ঝাড়বাতি উপহার দিয়েছিলেন তাও পুরো একটি ঘর জুরে সংরক্ষিত আছে। মূলত এই হাজার দুয়ারীর নাম হাজার দুয়ারী কারন এই প্রাসাদে রয়েছে এক হাজারটি দরজা। অবশ্য তার মধ্যে আসল দরজার সংখ্যা একশো টি, বাকি নয়শোটিই নকল দরজা। আসল দরজা আর নকল দরজার মধ্যে পার্থক্য করা দুষ্কর। আকৃতিগতভাবে বা দর্শনগত ভাবে একই রকম শুধু পার্থক্য এই যে নকল দরজাগুলো খোলা যায়না।
বিশাল বিশাল থাম ও ছাদের সিলিং দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়। ছোট ছোট বেলকোনী গুলোর দৈর্ঘ্যই যেনো আমাদের দেশের উন্নতমানের প্রাইমারী স্কুলগুলোর বারান্দার সমান। কি মনে হয়েছিল একতালার পরে আমি চলে গিয়েছিলাম তিনতালা তে। সেখানে দেখলাম নবাবদের শয়নকক্ষত, পালঙ্ক, আলমারি, বালিশ, চাদর পর্যন্ত সংরক্ষিত। যদিও সেদিকে প্রবেশ নিষেধ। নবাব বেগমদের বৈঠকখানা, বিভিন্ন সৌখিন সোফা, বসার স্থান, ডায়নিং টেবিল ইত্যাদি। একপাশে নিচের দিকে দেখলাম লাইব্রেরী। লাইব্রেরীতে প্রায় অনেক বই। সোনা দিয়ে মোড়ানো কোরআন শরীফ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। দোতালা টা তুলনামূলক ভাবে আকর্ষনীয় ও মনোমুগ্ধকর। দেওয়ালচিত্র, সকল নবাবদের ও বেগমদের পোট্রেইট আমাকে মুগ্ধ করেছিল সেদিন। আমি প্রতিটি পোট্রেইট এর অসাধারন অঙ্কনশৈলী মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। নবাবরা খেতেন প্লেটে। পান করতেন পোর্সেলিনের গ্লাসে। খাবারে বিষ থাকলে এসব প্লেট বা গ্লাস ভেঙে যেতো। কি তাদের আবিষ্কার। তারপর দেখলাম এক লুকোচুরি আয়না, অনেকের কাছেই এই আয়নার গল্প শুনেছি, সত্যি কথা বলতে এই আয়না দেখার জন্যই আমার এই হাজার দুয়ারীতে আসা, আমি আয়না দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম। এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু আমার আশেপাশের বাকি সবাইকে দেখতে পাচ্ছিলাম। কি অদ্ভুত এক সৃষ্টি! পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না, তাই বেলা পড়ে যাবার আগে আগেই বের হয়ে গেলাম, কারণ আবার কৃষ্ণ নগর মাকে নিয়ে ফিরতে হবে। সব শেষে আমরা আবার সেই লাল গালিচার উপর হেটে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলাম। দু একটা ফটো তুলে আমরা হাজার দুয়ারী প্রাঙ্গন ত্যাগ করলাম, মোবাইলে বেশি চার্জ ছিল না তাই খুব বেশি ফটো তোলা হয়নি। হাজার দুয়ারীর বিশাল বাগান পার করে আমরা মুল ফটক থেকে বের হয়ে বাহিরের রাস্তায় এসে পৌছালাম। মা কিছু ছোট গল্পের হাজারদুয়ারী সম্পর্কিত বই কিনলেন বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদের জন্য। আমি হাজারদুয়ারী ও নবাব সিরাজ লেখা কাঠের কিছু কলম কিনলাম প্রতি পিচ দশ টাকা করে, গিফট করার জন্য আর স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে একটা রেখে দিবো সেই জন্য। দেখতে বেশ হলেও দেশে এসে সেগুলি দিয়ে একদিন ও লিখা আর হয়নি। তারপর আমরা ভাগীরথী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখলাম। আমি অনুভব করলাম পৃথিবীতে রাজা বাদশা নবাবদের যতই সৃষ্টি থাকুক না কেনো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির কাছে সবই নগন্য। তারপর আমি আর মা ট্রেনে উঠে কৃষ্ণ নগর এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ট্রেন ভ্রমণ টাও খুব সুন্দর ছিলো, ভারতে রেল পরিসেবার তুলনা হয় না, সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়। আপনারাও চাইলে এই ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে আসতে পারেন।
অদ্ভুত এই অনুভূতি অদ্ভুত এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
সবাই ভালো এবং সুস্থ্য থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আপনার লেখার প্লটটা ঠিক ছিল কিন্তু উপস্থাপন টা সুন্দর হয়নি। আপনি একঢালাও ভাবে লিখে গেছেন, যদি লেখার ফাঁকে ফাঁকে একাটা করে গ্যাপ বা প্যার দিতেন তাহলে পড়তে আরও আরাম লাগতো। আর আপনাকে বানানের প্রতি আরেকটু যত্নবান হতে হবে। আশাকরি আগামী পোস্টগুলোয় তার প্রতিফলন দেখতে পাবো।
তবে লেখাটা অনেক তথ্যবহুল। ঐতিহাসিক অনেক কিছুই জানলাম। আর ওখানে প্রবেশের টিকেট প্রাইস কত সেটা উল্লেখ করলে ভাল হতো।
প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয়ের উপর এভাবেই লিখে যান, শুভ কামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আচ্ছা ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর কমেন্ট করার জন্য। টিকেট প্রাইজ ২০ টাকা করে ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাজার দুয়ারি সম্পর্কে মোটামুটি ভালো একটা ধারনা পেলাম
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হাজারদুয়ারীর বিশাল বিশাল কামান গুলো আপনার কেমন লাগলো ?
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit