প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজ বলবো এমন একজনের কথা যাকে আমাদের পরিবারের সবাই ভীষণ ভালোবাসে। এমন কি আমাদের বাড়ির আশেপাশে সবাই তাকে আদর করে। অনেক বাচ্চারা ভয় ও পায়। শুধু বাচ্চা কেনো শুরুতে আমিও ভয় পেতাম তবে আজ সে আমার বড়ো আদরের।তার নাম "পিকলু"।
কথা বলছি আমাদের বাড়ির কুকুরটির সম্পর্কে। যদিও আমার হাজব্যান্ড এর খুব আপত্তি কুকুর বলায়, সত্যি বলতে এখন কেউ ওকে কুকুর বললে আমারও বেশ খারাপই লাগে। শুরুতে আমার ওকে খুব একটা ভালো লাগতো না,আমার হাজব্যান্ড ওকে বেশি আদর করলে আমার আদিখ্যেতা মনে হতো। সত্যি বলতে,প্রথমে তাকে বাড়ি আনার ডিসিশনকে আমি সাপোর্ট ও করিনি। তবে,আমার হাজব্যান্ড বরাবার চেয়েছিল এমন একজনকে আনতে।
ফেব্রুয়ারি মাসে সে আমাদের বাড়ি আসে, লকডাউন শুরু হওয়ার প্রায় দিন ১৫ আগে। তখন অফিস যাওয়ার কারণে খুব বেশি টাইম তাকে দিতাম না, খুব একটা ভালবাসতাম না।
কিন্তু তারকয়েকদিন বাদেই লকডাউন শুরু হলো, অফিস ও বন্ধ, শুরু হলো তার সাথে সারাদিন কাটানো। আস্তে আস্তে ভয় কাটতে লাগলো,একটু একটু আদর করতে শুরু করলাম।তাকে খাবার দিতাম, স্নান করাতাম (আমার হাজব্যান্ড হেল্প করত)পশম আঁচড়ে দিতাম,চুল বাঁধতাম,পারফিউম দিয়ে দিতাম।সারাদিন এই ভাবে কেটে যেতো।দেখতে দেখতে তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।আর এখন তাকে ছেড়ে থাকা সম্ভবই না।
সে বড্ডো ভালোবাসে আমায়,তাকে যদি আমি বকি সে আবার অভিমান করে আমার উপর,আদর না করলে কোলেও আসে না।আমি কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হলেই সে আমার পিছু পিছু ঘুরতে থাকে।আমি না ফেরা পর্যন্ত গেট এর সামনেই বসে থাকে।
সবথেকে অবাক লাগে আমার কোনো কারণে মনখারাপ থাকলে সেও চুপচাপ হয়ে যায়।
আগে অনেকের কাছে শুনেছি কুকুররা সব বোঝে, সত্যিই তাই।ওদের কাছে রাগ, অভিমান, আদর সব কিছুর ভাষা একদম স্পষ্ট। আমার হাজব্যান্ড যখন অফিস থেকে ফেরে বাইক এর হর্ন দেওয়ার আগেই সে গেট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আমাদের কারোর যেতে দেরি হলে আমাদেরকে ডাকতে আবার ঘরে আসে।
আজ দেখতে দেখতে প্রায় ১০মাস হয়ে গেলো। বর্তমানে সে আমাদের ফ্যামিলির একজন সদস্য হয়ে গেছে। তাকে টাইমলি খেতে দেওয়ার কথাও সেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়,মনে হয় যেন সে ঘড়িও দেখতে পারে,তার ডাক শুনে বুঝতে পারি যে দুপুর ১.৩০বাজে,মানে তাকে খেতে দিতে হবে।এমন অনেক অভ্যাস তার আছে,যেমন কেউ খেতে বসলে তার দিকে তাকিয়েই সে বসে থাকে,যেন সে কতদিন খেতে পায়না।যা কিছু পায় সব কিছু মুখে দেয়,এর জন্য বকাও খায় ভীষণ।
আশ্চর্যের বিষয় সে যখন বোঝে সে অন্যায় করেছে নিজে নিজেই তার খাঁচায় ঢুকে বসে থাকে,হাজার ডাকলেও সে তখন বেরোয় না। মনেকরে সেটাই তার নিরাপদ আশ্রয়।আমাদের বাড়িতে শুধু মাত্র আমার শাশুড়ি মাকেই সে একটু ভয় পায়।তাছাড়া আমার শ্বশুর মশাই, আমার হাজব্যান্ড,আমি,কাউকেই সে ভয় পায়না।আমরা সবাই তার ফ্রেন্ড।
সত্যি বলতে আমি কোনোদিন ভাবিনি আমিও কুকুর এত ভালোবাসবো,আজ সত্যিই আমি বিশ্বাস করি মানুষের ভালোবাসায় স্বার্থ থাকলেও কুকুরের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ থাকেনা। আপনি তাকে হাজার বকলেও যখন আদর করে ডাকবেন সে ছুট্টে চলে আসবে আপনার কোলে।ওরা শুধু আদর বোঝে, ভালোবাসা বোঝে।ওদের মধ্যে রাগ,জেদ,ইগো এসব কিছু থাকে না। প্রতিদানের আশা না করেই তারা শুধু দিতেই জানে।
"পিকলু"এখন আমাদের সকলের আদরের,ওর সাথে সারাদিন কিভাবে কেটে যায় আমরা বুঝতেও পারিনা। আপনাদের সবাইকে একটাই অনুরোধ যদি রাস্তায় কোনো কুকুর আপনার দিকে এগিয়ে আসে তাহলে অন্তত এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে দেবেন।ওরা বলতে পারেনা,কিন্তু খিদে ওদেরও পায়।কষ্ট ওদেরও হয়। অনেকের মতো আমিও আগে এই কথাগুলো এত গভীর ভাবে ভাবিনি।
সব শেষে পিকলুর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই। পিকলুর ব্রীড এর নাম সিজু
(Shih-tzu)। ওরা মেইনলি চাইনিজব্রিড।এরা সাধারণত পেডিগ্রি খেয়ে থাকে। ওদের খাওয়ানোর মতো অনেক রকম বিস্কুটও পাওয়া যায়,যেগুলো আমরা ওকে ট্রিট হিসাবে দিয়ে থাকি,যখন ও আমাদের কোনো কথা শোনে।এতে ওরা খুব খুশি হয়।ওর শ্যাম্পু আলাদা হয় যেগুলো ওর স্কিন এবং পশমের এর জন্য ভালো।ওর পশম গুলো মাঝে মাঝে ট্রিম করে দিতে হয়।ওকে চুল বাঁধলে দেখতে ভীষন ভালো লাগে।
সবশেষে বলতে চাই,ওরা হয়তো কোনোদিন আপনাকে বলে বোঝাতে পারবেনা যে ওরা আপনাকে ভালোবাসে কিন্তু আপনি আপনার ব্যবহার দিয়ে ওকে বোঝাতে পারবেন আপনি তাকে ভালবাসেন। যেভাবে আমরা পিকলুকে বোঝাই আমরা ওকে ভীষন ভালোবাসি।
পিকলুর নিরাপদ আশ্রয় (ওর খাঁচা)
পিকলুর খাবার (পেডিগ্রি এবং বিস্কুট)
আমার রুম এ পিকলুর ফটো ফ্রেম আমার নিজের হাতে তৈরী করা।