প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরছি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
আজ কথা বলবো আমার ঠাকুমা কে নিয়ে। ছোট্টো থেকে যে মানুষটা বটগাছের মতো আগলে রেখেছে আমাদের। তার বর্তমান বয়স প্রায় ৯০ বছর।মা চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি,ঠাকুমা আর বাবা থাকতাম বাড়িতে, আমার বিয়ের পর থেকে তারা দুজনই থাকে। এখনও আমার ঠাকুমা রান্না করেন। তাকে দেখে বড্ড কষ্ট হয়, নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস, যেখানে তার যাওয়ার বয়েস ছিলো সেখানে তার মেয়ের বয়েসি বৌমা চলে গেলো। এটাই হয়তো কপাল,যার লেখা আমরা কোনো ভাবেই বদলাতে পারিনা।
আমি ছোট্টো বেলা থেকে গল্প শুনেছি, আমার ঠাকুমা অনেক কষ্ট করেছে, তবে এমন কষ্টও যে তার পাওনা ছিল এটা বোধহয় সে নিজেও ভাবতে পারেনি।
আমার বাবার যখন ৪ বছর বয়স তখন আমার ঠাকুরদা মারা যান। বাবারও সেই সময়ের কথা মনে নেই। তখন থেকে আমার ঠাকুমার লড়াই শুরু। আগের কার দিনে ঘরের বউদের এখন কার বউদের মতো স্বাধীনতা ছিলো না। তখন মেয়েরা বেশি দুর লেখাপড়াও করতে পারতো না (ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে)।খুবই অল্প বয়েস তাদের বিয়ে দেওয়া হতো। আমার ঠাকুমাও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। বাবার সেই ৪ বছর বয়েস থেকে এখনো পর্যন্ত মানুষটা শুধু সন্তান এর জন্যই বেচেঁ রয়েছে।সন্তান বোধহয় এমনই হয়। যার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের সব সুখ শান্তি মায়েরা অনায়াসে বিসর্জন দিতে পারে।
এখনকার দিনে, একান্নবর্তী পরিবারে অনেক বাচ্চারা আছে যারা ঠাকুমা/ঠাকুরদা এঁদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকে। সেদিক থেকে আমরা ভীষণ লাকি যে আমাদের ছোটবেলা ঠাকুমার সাথেই কেটেছে, যদিও ঠাকুরদাকে কোনোদিন দেখিনি। একটা ফোটো ছিলো খুব আবছা, মুখটা ভালো বুঝতেও পারতাম না। তবে তার ব্যবহার করা একটি লাঠি এখনো আমাদের বাড়িতে আছে।
ঠাকুমার কাছে গল্প শুনেছি, একবার চালের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল,১৩/১৪ টাকা কেজি। কিন্তু সেই সময়ে ১৩/১৪ টাকা মানে বিশাল ব্যাপার। তখন আমাদের বাড়ির অবস্থা খুব ভালো ছিলো না। ঠাকুরদার একটু চাষের জমি ছিলো। সেখান থেকে যা আসতো তাই দিয়েই আমার ঠাকুমা বাবা কে নিয়ে চলত। সেই সময় আমার ঠাকুমা প্রায় ১৮/১৯দিন শুধু রুটি খেয়ে ছিলো, কারন আমার বাবাকে তখন অত দামের চালের ভাত খেতে দিত। তাই ২জনের ভাত খাওয়া সম্ভব ছিলনা।
এগুলো আমরা শুধু গল্প শুনেছি কিন্তু ঠাকুমা সেটা নিজে সহ্য করেছে। আসলে বর্তমান সমাজ অনেক এগিয়েছে, আজ অনেক কুসংস্কার দূর হয়েছে, মেয়েরা লড়তে শিখেছে, কিন্তু আমার ঠাকুমার মতো মানুষেরা আজও যুগের সাথে তাল মেলাতে পারেনি। তাই তাদের মত স্বার্থ ত্যাগের কথা আমরা ভাবতেও পারিনা। যেই বয়সে সে বিধবা জীবন যাপন শুরু করেছে আজ সেই বয়সে আমরা বিয়ের কথাও ভাবিনা।সে একবারও নিজের কথা ভাবেনি, হয়তো তখনকার সমাজ তাকে ভাবতে দেয়নি।
হয়ত অনেক ক্ষেত্রে তাঁর সাথে মতবিরোধ হয় কিন্তু যখন একা বসে ভাবী তখন মনে হয় কী পেলো মানুষটা জীবন থেকে? যখন সংসার বৌমার কাছে ছেড়ে নিজে একটু বিশ্রাম নেবে তখন বৌমা তাকে ছেড়ে চলে গেলো।আবার নতুন করে সবটা তাঁর কাধেই চলে এলো।এই বয়সেও ৯বছর ধরে সংসার চালাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে আজও রান্না করছে যাতে সে আর বাবা খেতে পারে।
আমাদের বোনেদেরবিয়ে হয়ে গেছে।সংসার হয়েছে, আমরা প্রায়ই যাই তাদের কাছে, তবে তাতে কী আর সব কষ্ট দূর হয় বলুন? তাও গিয়ে যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে আসার চেষ্টা করি। সত্যি বলতে কি মানুষটা আছে বলেই এখনো "বাপের বাড়ী"কথাটা জীবন থেকে মুছে যায়নি। এখনো সেখানে গেলে মা কে অনুভব করতে পারি। ভগবানের কাছে একটাই চাওয়া অনেক কষ্ট দিয়েছ মানুষটাকে কিন্তু তোমার কাছে নেওয়ার সময় হলে আর কষ্ট দিও না। যতদিন রাখবে সুস্থ রেখো।
সবশেষে একটাই কথা বলবো, আমাদের সবার বয়েস বাড়বে, আমরা কেউ জানিনা আমাদের কপালে কি লেখা আছে, হয়তো মায়ের মতন আগেও চলে যেতে পারি আবার ঠাকুমার মতো কষ্টও পেতে পারি । আজ সত্যিই মন থেকে ক্ষমা চাই ঠাকুমার কাছে, ছোট্টো বেলা থেকে না জেনেই হয়তো অনেক কষ্ট দিয়েছি। আজ সংসার জীবনে পা রেখে বুঝি বাস্তব বড়ো কঠিন, প্রতিনিয়ত জীবন পাল্টায়, আর জীবনের সাথে তাল মেলানোই বেচেঁ থাকা। তবে সঠিক কর্ম করাটা আমাদের হাতে বাকিটা ভগবানের।
ভালো থাকবেন সবাই।
ঠাকুমা ফটো একদমই তুলতে চায়না। লুকিয়ে কয়েকটা ফটো তুলেছিলাম সেগুলোই শেয়ার করলাম।
বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটছিল-
আমাকে কিছু বলছিল তখন ওনার অজান্তেই ফটোটা তুলেছিলাম-
ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছে, চলতে গিয়ে আজ লাঠিটাই ভরসা-
I believe Bengali language will also appreciated by @bestofindia apart from Hindi. Very nicely written post👍😊
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit