কালের অাবর্তে আমাদের মাঝে আবারো উপস্থিত হিজরি সন ১৪৪০ । আরবি বর্ষপঞ্জি তথা হিজরী সনের প্রথম মাস মহররম। অার পহেলা মহররম হলো হিজরি নববর্ষ। হিজরি নববর্ষ মুসলিম উম্মাহর এক জাতীয় উৎসব।
ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি একটি চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জি। বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, আর পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ অনুসরণ করেন ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপনের জন্য ।
প্রতিবছর হিজরি নববর্ষ আবির্ভূত হয় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সেই পবিত্র স্মৃতি নিয়ে। প্রিয় পাঠক! তাহলে অাসুন রাসূল সা. এর সেই ঐতিহাসিক ঘটনা তথা হিজরত সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।
হিজরি বর্ষের সূচনা
হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তাআলা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। কেন একটি নতুন সাল গণনাপ্রথা চালু করতে হলো- এ নিয়ে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। আল্লামা আইনির বিবরণ দেখুন : "হিজরি সাল প্রণয়নের কারণ নিয়ে মতবিরোধ আছে। ইবনে সমরকন্দি বলেন, 'হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে চিঠি লিখেছেন যে আপনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনেক ফরমান আসে; কিন্তু তাতে তারিখ লেখা থাকে না। সুতরাং সময়ক্রম নির্ধারণের জন্য সাল গণনার ব্যবস্থা করুন। তারপর ওমর (রা.) হিজরি সালের গোড়াপত্তন করেন'।" আল্লামা ইবনুল আছির (রহ.) আল কামিল ফিত্ তারিখের মধ্যে এটিকে প্রসিদ্ধতম ও বিশুদ্ধতম অভিমত বলে আখ্যায়িত করেছেন। (সূত্র : প্রাগুক্ত ১/৮)
আল্লামা আইনি তারপর লিখেছেন, "আবুল ইক্জান বলেছেন : 'হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে একটি দলিল পেশ করা হয়, যাতে কেবল শাবান মাসের কথা লেখা হয়। তিনি বলেন : এটা কোন শাবান! এ বছরের শাবান নাকি আগামী বছরের শাবান? তারপর হিজরি সন প্রবর্তন করা হয়'।'' আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ.) এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (আল ফারুক : পৃ. ১৯৫)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : যখন হজরত ওমর (রা.) সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি পরামর্শসভার আহ্বান করেন। সভায় হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাছ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত থেকে সাল গণনার প্রস্তাব দেন। হজরত তালহা (রা.) নবুয়তের বছর থেকে সাল গণনার অভিমত ব্যক্ত করেন। হজরত আলী (রা.) হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। তারপর তাঁরা সবাই আলী (রা.)-এর প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেন। এরপর কোন মাস থেকে শুরু হবে- এ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) রজব থেকে শুরু করার প্রস্তাব দেন। কেননা এটি চারটি সম্মানিত মাসের মধ্যে প্রথমে আসে। হজরত তালহা (রা.) রমজান থেকে শুরু করার কথা বলেন। কেননা এটি উম্মতের মাস। হজরত আলী (রা.) ও ওসমান (রা.) মহররম থেকে শুরু করার পরামর্শ দেন। (উমদাতুল ক্বারি : ১৭/৬৬)
বাংলাদেশে হিজরি সনের প্রচলন
৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক হিজরি সন প্রবর্তিত হওয়ার এক বছর পরই আরব বণিকদের আগমনের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও হিজরি সনের প্রচলন শুরু হয়।
পরবর্তীতে ৫৯৮ হিজরি মোতাবেক ১২০৯ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গবিজয়ের মাধ্যমে বাংলার জমিনে মুসলিম শাসনের ইতিহাস সূচিত হয়।
এর ফলে হিজরি সন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভের মাধ্যমে জাতীয় সন গণনায় পরিণত হয়। সন গণনায় ৫৫০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর থাকার পর ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্যমে হিজরি সনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অবসান হয়।
বর্ষ গণনা হিজরত থেকে কেন আরম্ভ করা হলো
বর্ষ গণনার ক্ষেত্রে হিজরতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণ কী? অথচ মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তিসহ আরো একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সাল গণনা শুরু করা যেত। এ প্রশ্নের উত্তর আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) এভাবে দিয়েছেন : ''সুহাইলি (রহ.) এ বিষয়ে রহস্য উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন, 'সাহাবায়ে কেরাম সাল গণনার বিষয়ে হিজরতকে প্রাধান্য দিয়েছেন সুরা তাওবার ১০৮ নম্বর আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে। সেখানে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। এই 'প্রথম দিন' ব্যাপক নয়। এটি রহস্যাবৃত। এটি সেই দিন, যেদিন ইসলামের বিশ্বজয়ের সূচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিরাপদে, নির্ভয়ে নিজ প্রভুর ইবাদত করেছেন। মসজিদে কোবার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ফলে সাল গণনার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম সেই দিনকেই বেছে নিয়েছেন'।'' (ফতহুল বারি : ৭/২৬৮)
তিনি আরো লিখেছেন, 'মহানবী (সা.)-এর জন্ম, মৃত্যু, হিজরত ও নবুয়তপ্রাপ্তি- এ চার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাল গণনা করা যেত। কিন্তু জন্ম ও নবুয়তের তারিখ নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য আছে। আর মৃত্যু শোকের স্মারক। তাই অগত্যা হিজরতের মাধ্যমেই সাল গণনা শুরু করা হয়েছে।' (ফতহুল বারি, প্রাগুক্ত)
Congratulations @rayhankhan! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes received
Click on the badge to view your Board of Honor.
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @steemitboard:
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://steemit.com/islam/@mahmoudaellatif/a-muslim-british-man-gives-his-shoes-to-a-homeless-guy-without-been-known-what-s-islamic-about-this-behavior
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit