কাফনের লাশ ও পথচারি
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
আমি এখন যে ভৌতিক গল্পটি বলবো সেটি কোনো বানানো বা কাল্পনিক গল্প নয়। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
এই গল্পটির ঘটনা ঘটেছিলো প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে...আমার বড় খালু মির্জাপুর নামক এক গ্রামে বাস করে ,তিনি প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ হেঁটে শহরে বিসিক এলাকায় কাজ করতে আসে। তিনি খুব সাহসী ও পরিশ্রমী। বড় খালু খুব ভোরে আজান দেওয়ার আগে ঘুম থেকে উঠে কাজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হতো। তখন গ্রামের রাস্তা পাকা ছিল না আর এখন কার মতো গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতো না তাই খালু হেঁটে শহরে কাজে যেত।
আবার শহর থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেত ,আর এভাবে কষ্টে জীবন চলছিল তার। প্রতিদিনের মত একদিন কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো ,তখন ছিল শীতকাল। সেদিন খুব বেশি ঠান্ডা পড়ছিলো তার সাথে কুয়াশা পড়ে চারিদিক তেমন ভালো দেখা যাচ্ছে না ,খালু চাদর গায়ে জড়িয়ে ধুলো মাখা পথে হেটে হেটে বাড়ি যাচ্ছিলো। রাত তখন বেশি হয়নাই কিন্তু শীতের রাত তাই কেউ বাইরে নেই,মাঝে মাঝে দূর থেকে শিয়াল এর করুন সুর ভেসে আসছে।
হটাৎ খালুর চলার পথে তার কিছুটা সামনে একটা কাফনের লাশের মতো কোনো মৃত মানুষ যেন তার সামনে শুয়ে আছে ,কিন্তু ঘন কুয়াশার কারনে সে ভালো করে দেখতে পেলো না তবে ওঠা যে সাদা কিছু হবে তা বুঝতে পারলো। সে ভয় না পেয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো কিন্তু কাফনের লাশ টা যেন তার সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। খালু ছিল খুব সাহসী তাই সে চিন্তা করলো সামনের সাদা জিনিস টা কি তা দেখবে। কোনো মানুষ নাকি অন্যকিছু।
খালু যত সামনে এগিয়ে যায় কাফনের লাশ টাও সামনেই থাকে সামনে থেকে কিছুতেই দূর হচ্ছে না তখন খালুর মনে কিছুটা ভয় অনুভব করছে। এভাবে কিছু দূর যাওয়ার পর সে সাদা জিনিস টা কে স্পষ্ট দেখতে পেলো আর তখন যা দেখলো ,,একটা সাদা কাফনে চকলেটের মতো করে মোড়ানো লাশ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ,খালুর হাত পা তখন যেন স্থির হয়ে শরিল টা ঘামতে শুরু করলো।
সে তখন চিন্তা করলো সামনের দিকে এগিয়ে যাবো নাকি পিছিয়ে দৌড় দিবো। কিন্তু তিনি ছিলেন খুব সাহসী তাই বুকে সাহস নিয়ে এক পা দুপা করে সামনের দিকে এগোতে লাগলো ,চোখের পলকে হটাৎ লাশটি উধাও হয়ে গেলো ,খালু একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো আর কোনোদিক না তাকিতে জোরে জোরে সামনের দিকে হাটতে শুরু করলো।
এখানেই শেষ নয় কিছু দূর যেতে আবার সেই লাশ টা খালুর সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে পড়লো ঠিক আগের মত করে,খালু চিন্তা করলো এখন সে বাড়ি যাবে কি করে ,,রাস্তার আসে পাশে কোনো বাড়িও নেই যে সে বাড়িতে আজকের রাত টা আশ্রয় নিবে ,তবে কিছুটা দূরে একটা ছোট দোকান আছে আর দোকানদার সেই দোকানেই রাতে শুয়ে থাকে ,,তাই সে চিন্তা করলো যে ভাবেই হোক ওই দোকান পৰ্যন্ত তাকে যেতেই হবে।
দোয়া কালেমা পড়তে পড়তে যখন দোকান পেয়ে গেলো দোকানদার কে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো ,খালুর ডাক শুনে কিছুক্ষন পর দোকানদার দোকানের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো আর খালুর উপর রাগান্নিত হয়ে বললো,,এই লোক এতো রাতে ডাকা ডাকি করছেন কেন ? খালু তখন বললো ভাই আগে আমাকে আপনার দোকানে আশ্রয় দেন পরে সব আপনাকে বলছি ,পরে দোকানদার খালু কে সেই রাতের জন্য তার দোকানে আশ্রয় দেয়।
এর পর সকাল হলে খালু বাড়ি ফিরে যায় তার পর সে শহরের কাজ টাও ছেড়ে দেয়। আর কোনোদিন রাতে ওই পথ দিয়ে চলাচল করে না।