জাবালে আরাফা (জাবালে রহমত)

in islam •  2 years ago 

maxresdefault.jpg
জাবালে আরাফা (জাবালে রহমত)
প্রথমতঃ পরিচয়ৎ

উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝে এমন কঠিন বড় বড় পাথর খণ্ডের পরস্পর লাগানো সাজানো একটি ছোট পাহাড় যার পাথর সবগুলি কঠিন প্রকৃতিরও নয় আবার সহজ ও নয়। যা জাবালে সাদের পদদেশ আরাফার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। উচ্চতা দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়ে প্রায় ৬৫ মি.। পাহাড়টি বহুনামে পরিচিত। যেমনঃ ইলাল, জাবালে আরাফাহ, জাবালে রহমত, জাবালে দু‘আ, জাবালে মুশাহ, জাবালে কুবকুব ও জাবালে করীন।

তবে দু’টি নামই বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত তাহল, জাবালে ইলাল ও জাবালে আরাফা।

দ্বিতীয়তঃ পাহাড়টির হাকীকত বা রহস্যঃ

সকল মাযহাবের মুসলিম মনীষিগণ বর্ণনা করেন যে, এ পাহাড় সম্পর্কে বিশেষ কোন কিছুই প্রামণিত হয়নি; বরং তা আরাফার অন্যান্য ভূমির মতই। অনুরূপ তাঁরা এও প্রমাণ করেন যে, তার উপর আরোহণ করাও কোন শরীয়তসম্মত আমল নয় এবং এর ব্যাপারে হজেরও কোন বিধি-বিধান নেই।

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী শারহুল লুবাবের ৮৪ নং পৃষ্ঠায় বলেনঃ “এই পাহাড়ে ওঠার কোন ভিত্তি নেই; বরং তা একটি নিকৃষ্ট বিদ‘আত।”

তিনি আরোও বলেন (পৃষ্ঠা-২২৪): বিনা বাধা ও সংকীর্ণতায় আরাফাতের যেখানেই উপস্থিত হবে সেখানেই অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে পাহাড়ের উপর লোকদের আরোহণ করা, লোকদের তার উপর অবস্থান ও নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ও পরে তার উপর অবস্থান করা জঘন্য বিদ‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম ইবনে হাজেব আল-মালেকী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ পাহাড়ের নিকট যা কিছু লোকেরা নতুন নতুন আমল করে থাকে তা বদি‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত।

অনুরূপ সেখানে আরাফার রাতে আগুন জ্বালানো এবং এর জন্য গুরুত্বারোপ করে স্বীয় দেশে থেকে আগরবাতি মোমবাতি সাথে নিয়ে আসা এবং তাতে আরোহণ ও অবতরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ---অবশ্যই এ পবিত্র স্থানে মুশরিকদের ন্যায় এ ধরণের কর্ম গুমরাহী-ভ্রষ্টতা।

আল্লামা শানকীতি মালেকী (রাহেমাহুল্লাহ) তার প্রসিদ্ধ তাফসীর “আযওয়াউল বায়ান” ৫/২৬৩-এ বলেনঃ “জেনে রাখুন! সাধারণ জনগণ যেভাবে জাবালে রহমতে আরোহণ করে এর কোন ভিত্তি নেই, তাতে কোন ফযীলত নেই। কেননা এ ব্যাপারে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি; বরং তা আরাফার অন্যান্য সমস্ত এলাকার মতই এবং আরাফার সমস্ত স্থানই অবস্থানের স্থল।

আল-জুহাইনী আশশাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ আরাফার মধ্যবর্তী স্থানে একটি পাহাড় রয়েছে যাকে বলা হয়ঃ জাবালে রহমত (রহমতের পাহাড়) তার উপর উঠাতে কোন নেকী নেই, যদিও সাধারণ মানুষ তা করে থাকে। ইমাম নববী আশশাফেয়ী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল-মাজমূ’” (৮/১০৭)-এ বলেনঃ সাধারণ জনগণের মধ্যে আরাফায় অবস্থিত জাবালে রহমতে অবস্থানের প্রতি গুরুত্বের ব্যাপারে যা কিছু প্রসিদ্ধ রয়েছে (যা ইতিপূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে) এবং আরাফার অন্যান্য স্থান হতে তার প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া, এমন কি কারো কারো অজ্ঞতা এমন স্তরে পৌঁছে যে, তাতে অবস্থান না করলে আরাফা অবস্থানই সিদ্ধ হবে না। এমন মনে করা স্পষ্ট ভ্রান্তি ও সুন্নাতের পরিপন্থী।

আল-মুহিব আতত্বাবারী আশশাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ) আল-কেরী (পৃষ্ঠা ৩৮৬) তে বলেনঃ “যে পাহাড়টিতে জনগণ আরোহণের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে তার ব্যাপারে কোন ধরণের হাদীস বা দললি সাব্যস্ত নেই।”

ইবনে জামায়া আশশাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ) হিদায়াতুস সালেকে বলেনঃ “সাধারণ জনগণের মধ্যে আরাফার অন্যান্য স্থান হতে জাবালে রহমতে অবস্থানের অগ্রাধিকার দেয়া বা সেখানেই অবস্থানের সময় হওয়ার পূর্বে সেখানে তাদের আনুষ্ঠানিকতা উকূফের পূর্ব রাতে তাদের সেখানে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালান ও এর প্রতি গুরুত্বরোপ করে তা নিজ দেশে হতেই বহন করা এবং তাতে আরোহণ-অবতরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সংমিশ্রন এক বড় ভ্রান্তি ও অজ্ঞতা এবং সালাফে সালেহীনের অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর এক জঘন্য আবিস্কার। আমরা আল্লাহর নিকট এর ও যাবতীয় বিদ‘আতের আপসারণ কামনা করি।

ইবনেতাইমিয়্যা আল-হাম্বলী (রাহেমাহুল্লাহ) তাঁর মাজমু’ ফাতাওয়ায় (২৬/১৩৩) বলেনঃ “সেখানে (আরাফায়) যে পাহাড়টি রয়েছে তাতে আরোহণ করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

তিনি আল-ইখতিয়ারাত আল ইলমিয়্যাহতে (৯৬) আরো বলেনঃ “জাবালে রহমতে আরোহণ করা ঐক্যমতে (ইজমা কর্তৃক) শরীয়তসম্মত নয়।”

আল-মার দাউই আল-হাম্বলী তাঁর “আল-ইনসাফ” (৪/২৯) গ্রন্থে বলেনঃ সুন্নাতসম্মত হলো নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থান স্থল নিশ্চিত করা; কিন্তু জাবালে রহমতের ব্যাপারে কোন দলীল সাব্যস্ত নেই।

তৃতীয়তঃ কোন কোন হাজী জাবালে রহমতে যে সব বিদ‘আত ও কুসংস্কারে পতিত হয়ে থাকেঃ

জাবালে আরাফায় অনেক হাজীই বেশ কিছু বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হয়। তার কারণ হলো তাদের নিকট এ পাহাড়ের পবিত্রতা ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট থাকার ভ্রান্ত বিশ্বাস। তাদের এ ভ্রান্ততার প্রমাণে ইতিপূর্বে আলেমদের মতামত বর্ণনা করা হয়েছে; যেন হাজীগণ সে সব বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কর্ম হতে সতর্ক হন। তার মধ্য হতে নিম্নে কতিপয় উল্লেখ করা হলঃ

১। আরাফার অন্যান্য স্থান হতে এ স্থানের ফযীলত বেশি মনে করা।

২। পাহাড়ের উপর খুতবা ও নামা আদায় করা।

৩। পাহাড়ে আরাফায় অবস্থানে র পূর্ব রাত্রিতে মোমবাতি ও আগুন জ্বালানো।

৪। পাহাড়ের ধুলো-বালি নেয়া।

৫। পিলার ছোয়া ও চুম্বন করা।

৬। পিলারের দিকে নামায আদায় করা।

৭। পিলারের নিকট দু‘আর প্রবণতা ও তার দিক হয়ে হাত তুলে দু“আ করা।

৮। পিলারে লেখা-লেখি করা।

৯। পিলারের চতুর্দিকে ত্বাওয়াফ করা।

১০। সেখানে কাপড় বা সুতা বাঁধা।

১১। সেখানে বিভিন্ন ম্যসেজ লিপিবদ্ধ করা বা চুল, টাকা-পয়সা, চিত্রাঙ্কন ও নেকড়া ইত্যাদি নানা বিশ্বাসে স্থাপন করা। যেমনঃ যেন আবার সেখানে ফিরে আসতে পারে, বা অমুকে হজ করতে পারে, অসুস্থ লোক সুস্থ হয়ে যায়, সন্তান হয় না তার সন্তান হয়।

১২। যে হজ করেনি তাকে সেখান থেকে আহবান করা যেন সে আগামী বছর হক করতে আসতে পারে।

ইত্যাদি বিদ‘আত, শরীয়ত পরিপন্থী ও কুসংস্কারে সেখানে তারা লিপ্ত, আল্লাহ যে সবের কোন দলীল অবতীর্ণ করেননি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!