গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে এসি ছাড়া এক রাত্রি কাটানোর গল্প

in life •  8 months ago 

IMG_4250.jpeg
মাত্র দিন দুই আগের কথা । আমার বেড রুমের এসিটা হঠাৎ, বিকেলবেলা ধুম করে নষ্ট হয়ে গেলো । সঙ্গে সঙ্গে এসি রিপেয়ারারকে কল দিলাম । আধা ঘন্টার মধ্যেই দুই এসির মিস্ত্রি এসে হাজির । প্রথমে তারা এসি চালালো । দেখলো যে ঠান্ডা হাওয়া বের হচ্ছে না । তখন তারা ছাদে গিয়ে আউটডোর ইউনিট চেক করে জানালো যে এসির গ্যাস বেরিয়ে গিয়েছে । ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক বোধগম্য হলো না । এসি চলতে চলতে হঠাৎ করে কী করে গ্যাস শূন্য হয়ে গেলো বুঝলাম না ।

যাই হোক আমার এসি ছিল Daikin ব্র্যান্ডের । গ্যাস ছিল R 22 | মিস্ত্রি দু'জন বাইরে থেকে গ্যাস কিনে এনে রিফিল করে তারপর চেক করলো । ঠান্ডা হাওয়া শুরুতে একটুক্ষণ বের হয়েই ওমনি আবার গরম হাওয়া বের হতে লাগলো । তখন আবার ছাদে গিয়ে চেক করে বলে Capacitor খারাপ । আবার তারা মার্কেট থেকে Capacitor কিনে এনে লাগলো ।

এরপরে সন্ধ্যা ৬ টা অব্দি বিস্তর ধস্তাধস্তি করে অবশেষে তারা জানালো যে আমার এসির নাকি আউটডোর ইউনিটের কুলিং ফ্যানের মোটর নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সারতে এক সপ্তাহের মতো লাগবে । আর খরচ পড়বে হাজার দশেকের মতো । এই বলে তারা গ্যাস রিফিলের দাম আর ক্যাপাসিটরের দাম সহ সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলো ।

সাথে সাথেই আমি নিলয়কে মার্কেটে পাঠিয়ে একটা এসি অর্ডার দিলাম । নেক্সট ডে ডেলিভারি আর ইন্স্টলেশন হবে । কিন্তু, এই একটা রাত এসি ছাড়া কাটাবো কি করে ? অবশ্য ইচ্ছে করলে এসি ওয়ালা অন্য রুমে শিফট করতে পারতাম, কিন্তু, গেলুম না । ইচ্ছে করেই থেকে গেলুম এসি বিহীন রুমে । তনুজার আবার নিজের বেডরুম ছাড়া ভালো ঘুম হয় না, আর আমিও ভাবলুম একটা মাত্র রাত তো, তাই এসি ছাড়া থেকে দেখিই না কেমন এক্সপেরিয়েন্স হয় ।

কিন্তু, এই এক্সপেরিয়েন্স না হওয়াটাই বোধ হয় ভালো ছিল আমার জন্যে । ওরে বাপরে বাপ্ ! কী যে একটা ভয়ানক রাত কেটেছে আমার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । মাথার ওপরে সিলিং ফ্যান আর পায়ের কাছে cooler । দুটোই সমান তালে চালিয়েও রাতে ঘুমোতে পারিনি । ভোর ৫ টায় টিনটিন উঠে বসলো, তার খানিক পরে তনুজা । কারোই ঘুম হয়নি । বিশ্রী গরম । এই গরমে আবহাওয়া অতি শুষ্ক, বিন্দুমাত্র জলীয় বাষ্প নেই বাতাসে । ঘাম হয় না । গা জ্বালা করে শুধু । আর সেই বিকেল থেকে পরের দিন ভোর অব্দি একটানা এসি ছাড়া থেকে আমি একদম সত্যি সত্যি আধমরা হয়ে গেলুম ।

সারাটা সকাল-দুপর বসে বসে ঝিমোলাম । সকাল থেকে মনে হয় আট-দশ লিটার জল খেয়ে ফেললুম । সন্ধ্যেতে অন্য রুমে এসির তলায় বসে শরীরটা একটু শীতল করছি এমন সময় নিলয় এসে খবর দিলো যে আমার বেড রুমে নিউ এসি লাগানো কমপ্লিট । শুনেই কয়েক লাফে আমার রুমে এসেই ছোট্ট একটা ঘুম দিয়ে নিলাম । আঃ কী শান্তি ! জল ছাড়া মাছ এতক্ষণ খাবি খাচ্ছিলো, এখন জলে এসে সে নতুন জীবন ফিরে পেলো ।

বুঝলাম, গরমের সময় এসি ছাড়া এখন একটি মুহূর্তও আমাদের জীবন চলে না ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...