বাবা মায়ের মত হতে চাওয়াটা অনেকেরই আজীবনের স্বপ্ন। ছোটকাল থেকেই বাবা মায়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে বড় হতে হতে তাদের মধ্যে এই স্বপ্নটা জেঁকে বসে। বাবা মায়েরাও চেষ্টা করেন নিজেদের বৈশিষ্ট্য আর জানা ব্যাপারগুলো ছেলে মেয়েদের মধ্যে তৈরি করে দিতে। সেই সাথে নিজেদের জীবনের অপূর্ণ সাধগুলো ও চেষ্টা করেন সন্তানের মধ্য দিয়ে যতটুকু সম্ভব ফুটিয়ে তোলার।
অনেক মেয়েরই জীবনের ১ম হিরো থাকে তাদের বাবা। জীবনের স্বপ্নপুরুষ কিংবা রাজকুমার খুঁজতে গিয়েও ছেলেদের মধ্যে বাবার ছায়া খুঁজে মেয়েরা। আর প্রেমিকা কিংবা বউ খুঁজতে গিয়ে মায়ের মত অনেক গুণাবলী দেখতে চায় ছেলেরা। কেউ কেউ সফল হয়, কেউ কেউ হয় না।
আর বাবা মা বিদায় নেয়ার পর রয়ে যায় উনাদের স্মৃতি আর স্মৃতিচিহ্নগুলো। মেয়েরা এইক্ষেত্রে ভাগ্যবতী। মায়ের জিনিসগুলো তারা ভাগাভাগি করে নেয়। আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে মেয়েরা মায়ের কানের দুল পরে, হাতে মায়ের চুড়ি পরে আর মায়ের লাল শাড়ি পরে দেখে নিজেকে কতটা মায়ের মত লাগছে। ছেলেরা অতটা ভাগ্যবান না। বাবার শরীরের সাইজ হুবহু না হলে রেখে যাওয়া কাপড় গায়ে ফিট করে না।
বাবার গুণাবলী অনেক কিছুই পাইনি কিংবা কাছাকাছি মানেও পৌঁছাতে পারিনি। বাচ্চাদের অসম্ভব আদর করতেন। খালি হাতে কখনো বাচ্চা আছে এমন কোন বাসায় যেতেন না সহজে। হাতে অবশ্যই চকলেট, আইসক্রিম জাতীয় কিছু থাকত। সকালে কুরআন শরিফ পড়ে দিন শুরু করতেন। কোথাও কেউ ইন্তেকাল করলে জানাজা মিস করতেন না। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ অসুস্থ শুনলেই পৌঁছে যেতেন রোগীর পাশে। আর কারো কোন সমস্যা আছে জানলেই সামর্থ্যের চাইতেও বেশী করার জন্য চেষ্টা করতেন। কুরবানি করেই ছুটতেন আগে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিলি করার জন্য। অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে দেখিনি। প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী হলেও খর্বকায় মানুষটা দাঁড়িয়ে যেতেন বুক চিতিয়ে। দিন শেষে নিজের ক্ষতি হলেও মেনে নেননি সেই অন্যায় সিদ্ধান্ত।
এক যুগ ধরেই বাবার একজোড়া স্যান্ডেল আছে আমার কাছে। অল্প ছোট হয়। সেই স্যান্ডেল জোড়া পরে মাঝে মাঝে হাঁটি। বেশির ভাগ সময়ে বাসায়, কখনো হয়ত বাইরেও বেরিয়ে পড়ি। অনুভব করার চেষ্টা করি সেই পায়ের ছোঁয়া।
স্যান্ডেল সাইজে একটু ছোট হলেও মানসিকতায় অনেক বড় মানুষটার মত হবার ভাব করি। প্রতিবারই পা একটু বাইরেই থাকে। স্যান্ডেল এর মাপে পৌঁছান হয় না, হয়ত হবেও না কখনো !!