জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে.... ৮। অন্য কাজের সন্ধানে.....

in lifestory •  6 years ago  (edited)

পূর্ব প্রকাশের পর:

অন্য কাজের সন্ধানে.......

শুনেই ফিক করে হেসে দিলেন। কানে কানে বললেন খয়ের ছাড়া ভিজাপাতি দিয়ে একটা পান নিয়ে আয়, কেউ যেন দেখতে না পায়।........

কর্মব্যস্ততা এবং আনন্দ উল্লাশে বেশ ভালই চলছিল। সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত হোটেলে ডিউটি করতাম এবং এর পরের সময়টা বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে অথবা বাসায় ভাবিদের সাথে আড্ডা দিয়ে খুব আনন্দেই পার করছিলাম। একদিন বিকেলে হাটতে হাটতে তৎকালিন হাতির পুলের ওখানে গেলাম, কারণ সেখানে অনেক বড় একটা বিল্ডিংয়ের পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। মাটি খুড়ে অনেক নিচ থেকে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করেছেন। এরকম কাজ এর আগে কোনদিন দেখিনি তাই দেখার খুব শখ হল এবং সেখানে কাজের শেষে চলে গেলাম। কাজ দেখছি এর মধ্যে হঠাৎ চোখ গেল কয়েকজন পথশিশুর উপরে। দেখলাম তারা পুলের উপরে যে কোন রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি ঠেলে উঠিয়ে দিচ্ছে এবং বিনিময়ে কিছু পাচ্ছে। আমিও চলে গেলাম সেখানে এবং তাদের দেখাদেখি একটা রিকশার পেছন থেকে ঠেলতে ঠেলতে পুলের উপরে পৌছে দিলাম, বিনিময়ে একটাকা পেলাম। ভালই লাগল, প্রথমে অনেক পথশিশু বাধা দিচ্ছিল পরে বয়স্ক এক লোক ওদের থামিয়ে দিয়ে আমাকে সুযোগ করে দিলেন। যদিও প্রথমে অনেক কষ্ট হচ্ছিল, হাপিয়ে যাচ্ছিলাম এবং রাতে সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে যেত, কিন্তু পরে ঠিক হয়ে গেল।

ইনকাম বেশ ভালই হচ্ছিল, প্রতিদিনই হোটেল থেকে ১৫০/২০০ টাকা বকশিশ এবং বিকেলে হাতিরপুল থেকে ৩০/৫০ টাকা হাতে আসত। কখনও সিনেমায় যেতাম, কখনও নিজের জন্য ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করতাম। বাসার সবারও প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলাম। হাতের কাছে যখনই যা পেতাম দুই ভাবির জন্য কিনে নিতাম, যেমন- জলপাই, চালতা, বিভিন্ন আচার সহ আরও যা যা পাই এবং খালার জন্য চুপি চুপি পান নিয়ে যেতাম। খুব তারাতারীই যেন তাদের একজন পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম। এভাবে দুই তিন মাস পার হওয়ার পরে হঠাৎ একদিন রাস্তার পাশের দেয়ালের একটি বিজ্ঞাপনের দিকে চোখ আটকে গেল। মাত্র চার হাজার টাকায় ড্রাইভিং শেখানো হয়। ড্রাইভিং শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল, হাতের বেশ ভালই টাকা আছে। কিন্তু সমস্যা হল চাকুরি করে ড্রাইভিং শেখা হবে না, কি করা যায় ভাবতে লাগলাম। অবশেষে বুদ্ধিও একটা বের করলাম, আগে সেখানে গিয়ে দেখি তারা কিভাবে ড্রাইভিং শেখায়, যদি বলে কয়ে বিকেলে শেখা যায় তবে তাই করব।

খালার কাছে গেলাম, ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করলাম, খালা অনেক দিন হয় বাড়ী থেকে এসেছি, খুব বাড়ী যেতে ইচ্ছে করছে। খালা বল্ল তোর তো কেউ নেই তো গিয়ে কি করবি, বললাম আমার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন তো আছে তাদের সাথে একটু দেখা করে আসি। অবশেষে খালা মহাজনকে ডেকে বলে দিল, তিনিও অনিচ্ছা স্বত্তেও আমাকে ছুটি দিতে বাধ্য হলেন। পরের দিন সকালেই ছুটলাম দেয়ালের সেই পোষ্টারের ঠিকানায়, তেজগাঁও। তেজগাঁ গিয়ে নামার পরে এক রিকশা ওয়ালাকে ঠিকানার কথা বলায় সে বলল সে তো এখান থেকেও অনেক দূড়, ভাড়া ২০ টাকা। তখন ভাড়া বিশ টাকা মানে এখন ৫০ টাকারও বেশী। যাই হোক তার রিকশায় উঠে বসলাম, বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম, কথার মাখ তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলের ওখানে গিয়ে কি করব, বললাম ড্রাইভিং শিখব। তিনি রিকশাটিকে একটি সাইট করে থামিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলেন, বললেন ভাই তোমাকে তো দেখে মনে হয়না তুমি বড়লোকের ছেলে। আমি বললাম ড্রাইভিং শিক্ষা আর বড়লোকের মধ্যে কি সম্পর্ক, তিনি বললেন এগুলো সব হল ভুয়া, এরা এরকম বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরে ভেগে যায়। তাই আমাকে অনুরোধ করল আমি যাতে ওখানে টাকা পয়সা না দেই। কথাটা মনে ধরল, সেখানে গিয়ে তাদের কথা বার্তা থেকেও স্পষ্ট হলাম যে, এরা আসলেই মানুষ ঠকানো ব্যবসা করে।

তাদের ওখান থেকে বের হয়ে দেখি সেই রিকশাওয়ালা দাড়িয়ে আছে ,আমারই অপেক্ষা করতেছে। আমাকে দেখেই হেসে দিল, জিজ্ঞাসা করল কি আমার কথা ঠিক আছে? আমি কোন উত্তর দিলাম না, তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা কম পুজিতে কি ব্যবসা করা যায় বলুন তো? তিনি বললেন রিকশায় উঠে বস, আমি চিন্তা করে দেখি। রিকশা চালাতে চালাতে জিজ্ঞাসা করল কত টাকা পুজি আছে, আমি সত্য গোপন করে বললাম এই আছে ....... তিনি বললেন একটা ব্যবসা আছে, তুমি করবে? ব্যবসাটা হল কাপড়ের ব্যবসা, লটে কাপড় কিনে সেগুলোকে ফ্রেশ করে বিক্রী করা, ঠিকভাবে বিক্রী করতে পারলে অনেক লাভবান ব্যবসা এটা। তারও এই ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে কিন্তু তার পুজি নেই। বললাম কোথা থেকে মাল কিনতে হবে? তিনি বললেন তুমি করতে চাইলে আমি তোমাকে সাহায্য করব। রাজি হয়ে গেলাম, সে আমাকে তার রিকশার গ্যরেজে নিয়ে গেলেন। কোথায় থাকি, কোথা থেকে আসছি ইত্যাদি নানান প্রশ্ন, প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সে আমাকে বল্ল ঠিক আছে এই গ্যারেজে রাতে আমি থাকি, তুমি চাইলে এখানেই আমার সাথে থাকতে পার। তবে খাবার হোটেল থেকে খেতে হবে। কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম।

পরদিন সকাল পাঁচটার সময় রিকশাওয়ালা ভাই আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তারাতারী নিয়ে চললেন বেগম বাজারের দিকে। তিনি রিকশা চালাচ্ছেন কিন্তু মনে হচ্ছে প্লেন চালাচ্ছেন। খুব জোরে চালাচ্ছেন তিনি, সেই তেজগাঁ থেকে বেগম বাজার মাত্র কয়েক মিনিটেই পৌছে গেলেন, অবশ্য রাস্তাও ফাঁকা ছিল। যাই হোক রিকশাটাকে একপাশে রেখে তরিঘরি করে আমাকে নিয়ে একটি চিপা গলির ভেতরে ঢুকে গেলেন, দেখলাম সেখানে অনেক লোকের সমগম। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেলাম, সেখানে বস্তা ভর্তি কাপড়ের ডাক হচ্ছে। রিকশাওয়ালা ভাই একটা বস্তার ডাকে অংশগ্রহন করলেন এবং ৬৫০ টাকায় বস্তাটি কিনে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরিশোধ করে কাপড়ের বস্তা নিয়ে আমরা আবার চললাম তেজগাঁয়ের দিকে।

গ্যারেজে এসে বস্তা খুললাম। এর মধ্যে ছোট বড় শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি সহ বিভিন্ন পোশাক। এর ভেতর থেকে ফ্রেশগুলো বাছাই করলাম। কুড়িখানেক শার্ট সহ বেশ কয়েকটি প্যান্ট, গেঞ্জি পেলাম। সবগুলোকে আলাদা করে ধোলাইতে পাঠালাম। ত্রুটিযুক্ত, ছেড়াগুলো পথ শিশুদের দিয়ে দিলাম। বিকেলে প্যাক করার জন্য কিছু পলি এবং শপিং ব্যাগ কিনে নিয়ে আসলাম। একদিন পরে ঢোলাই থেকে আমারেদ প্রদানকৃত পোশাগুলি আসল। সেগুলোকে যায়গামত ক্লিপ আটকে সাথে স্টিকার ও ট্যাগ লাগিয়ে পলির মধ্যে প্যাক করে ফেললাম। একেবারে নতুন হয়ে গেল সব, এগুলো কোথায় বিক্রী করতে হবে রিকশাওয়ালা ভাই ঠিক করে দিলেন, তিনিই আমাকে সেখানে পৌছে দেবেন এবং সময় মত নিয়ে আসবেন। সব কিছু ঠিকঠাক করে রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন সকালের অপেক্ষায়। আগামীকাল থেকে আমার নতুন ব্যবসা শুরু হবে.......

চলবে...........

Halo Dear Friends,
We can do anything for ourselves if we want. We do not have to pay any attention to this. So I have made the following decisions. The ones who complete the following steps will also give him the same reprisal.

Follow 👉 @sohelsarowar

👉 Resteem any post from my Blog

👉 Upvote any post from my Blog

I request be honest and kind, once you completed all steps then don't forget to leave your post URL in the comment box i will do sometime instant otherwise confirm in 4-24 hours. respect everyone. Thank You!

Note: Please do not post multiple Post URL in the same blog. 1 person Allow 1 URL then after 24 hours i will new post then you can give me the new one.

Thank you...

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by sohelsarowar from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.