রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প

in love •  last year 

এই অদ্ভুত ব্যাপারটা কেন আমার সঙ্গেই ঘটল! ভোর থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অচেনা উত্তেজনায় সঙ্গে অনিশ্চয়তা জুড়ে দিল সকালটা। কোনোমতে জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে, মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ নিয়ে ভোরে বেরিয়ে পড়েছি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা পেছন থেকে ডেকেছিলেন কিছু মুখে দেওয়ার জন্য।

সেদিকে ফিরে তাকানোর অবস্থায় ছিলাম না। মায়ের ‘কোথায় যাচ্ছিস?’ এর জবাবে ‘আসছি মা’ বলে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি। বাইরে ইজিবাইক বা রিকশার কোনোটিই না পেয়ে হাঁটতে শুরু করি।

পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে বারবার গ্যালারিতে সেভ করা ইমেজটা দেখতে থাকি। জুম করে যতবার দেখি অন্য রকম ভালো লাগা ছুঁয়ে যায়। তারপরও সরাসরি পত্রিকার পাতায় নিজের নামটা দেখতে উন্মুখ হয়ে আছি।

২.
কলেজে পড়ার সময় থেকেই টুকটাক গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বিজ্ঞানের জটিল-কঠিন পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কিছু ভাবার সময় ছিল না। অধিকাংশ গল্প তাই পরিণতি পায়নি। মাঝখানের সময়টাতে লেখালেখির বিষয়টা মাথাতেই আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যখন একটু ফুরসত পেলাম, তখন অসমাপ্ত গল্পগুলো নিয়ে আবার বসলাম। তখনকার ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে কয়েকটা লিখেও ফেললাম। সেখান থেকেই একটা গল্প পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম।

2.jpg

পাঠানোর পর থেকে প্রতিদিন ভোরে মুঠোফোনে পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠা তন্নতন্ন করে নিজের নামটা খুঁজেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সেই গল্পটা আজ ছাপা হয়েছে। মুঠোফোনে ই-পেপার সংরক্ষণ করেছি, তবু কাগজের ওপর ছাপার অক্ষরে পড়ার জন্য তর সইছে না। টানা এক ঘণ্টার বেশি সময় স্টলে দাঁড়িয়ে আছি পত্রিকার জন্য।

অথচ আজ নাকি পত্রিকাটি এখানে পাওয়া যাবে না! শহর থেকে আনাতে হবে।

৩.
কেবল একটা পত্রিকা কেনার জন্য পঁচিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরে এসেছি। অথচ ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক বা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে না। বাস থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে পত্রিকা স্টলের দিকে যাই। আশপাশে মানুষের তেমন ভিড় নেই। পত্রিকার স্টলে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছেন। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, তিনি বোধ হয় আমার গল্পটাই খুঁজছেন! আমি স্টলে পৌঁছানোর ঠিক আগে একটা মেয়ে রিকশা থেকে নেমে কয়েকটি ম্যাগাজিন আর একটা পত্রিকা কিনে নিয়ে যায়।

আমার ছুটে যাওয়া দেখে পত্রিকা বিক্রেতা ফোকলা দাঁত বের করে বলে, ‘বুঝছি, আজ মনে হয় লটারির ড্র হইছে। আইছেন নাম্বার মিলাইতে। বাঁধব না। লটারি জিতা অত সুজা না। আজ তামাতি কাউরে জিততি দেখি নাই।’ লোকটার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না। আমি পত্রিকা চাইতেই উনি আরেক প্রস্থ হেসে দিলেন। ‘পত্রিকা তো আইজ আর পাইবেন না। একটা কপি ছিল, ওই আপায় নিছে।’ মেয়েটি ততক্ষণে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে। আমি প্রায় দৌড়ে তার পিছু নিলাম। কাছে গিয়ে ডাকতেই আমার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াল। আমার বুকের ভেতরেও মোচড় দিয়ে উঠল। ফারিহা! অপ্রস্তুত কণ্ঠে জানতে চাইলাম—

‘তুমি এখানে?’
‘আমি পত্রিকা কিনতে এসেছিলাম। তুমি?’
‘আমিও। আজকের পত্রিকায়…।’
‘তোমার গল্প আছে।’
‘আমাকে থামিয়ে ও বলে।’
‘তুমি কীভাবে জানলে?’

‘আমরা যখন এক ব্যাচে পড়তাম, প্রায়ই তোমার খাতাপত্র ঘাঁটতাম। কেন করতাম জানি না। তবে ভালো লাগত। একদিন একটা খাতায় কিছু অসমাপ্ত লেখা পাই। কয়েক লাইন পড়েই ভালো লেগেছিল। তোমার অনুপস্থিতির এক ফাঁকে লেখাগুলোর ছবি তুলে রেখেছিলাম। তারপর থেকেই অপেক্ষা করেছিলাম আজকের দিনটার জন্য।’

‘তার মানে, তুমি আমার আগে থেকেও অপেক্ষায় আছ?’

‘হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস ছিল। সঙ্গে…’
বাকি কথাটুকু বলার প্রয়োজন হয় না। তার আগেই আমি ওর চোখের ভাষা পড়ে নিয়েছি। সেখানে ভালোবাসার রঙিন বর্ণগুলো খেলা করছে। একটা গল্প কত কিছুই না দিল। স্বস্তি, বিশ্বাস, প্রেরণা আর সবচেয়ে মূল্যবান ফারিহার ভালোবাসা!

source link : https://www.banglalovestory.in/2023/05/bangla-romantic-love-story.html

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!