#বাজি
#৪র্থ_পর্বঃ-
••••••••• তানিয়া: কি হলো? উত্তর দিন আমার প্রশ্নের?
আয়াতঃ দেখো তানিয়া তুমি যা জেনেছো বা বলছো তা সত্যি কিন্তু বুঝেছো ভুল।
তানিয়া: ভুল? কিসের ভুল? কেমন ভুল? তাহলে সঠিকটা বুঝিয়ে বলুন। বলুন?
আয়াতঃ এখন তোমাকে বললেও তুমি তা বুঝবে না তানিয়া। এখন যাই বলবো তুমি তার উল্টোই বুঝবে। এ কথা গুলো আমি নিজেই তোমাকে বলতাম কিন্তু সঠিক সময় হলে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কে তোমায় এ কথা গুলো বললো।
তানিয়া: সেটা আপনার না জানলেও চলবে। আগে বলুন কিসের বাজি? আর বাজির মোহরা আমাকে কেন বানালেন? আমি কি কোন বাজারের পন্য নাকি?
আয়াতঃ প্লিজ তানিয়া ওভাবে বলো না। আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি। তুমি আমার কাছে উপরওয়াল প্রদত্য আমার ভালোবাসার প্রতিক। তোমাকে পন্য ভেবে আমি নিজেকে ছোট করতে চাই না। হ্যা আমার আর সিয়ামের মধ্যে বাজি হয়েছিলো। আর বাজির বিষয়টাও তুমি ছিলে। কিন্তু আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্যে বাজি ধরিনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবসময় তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছি। আর সেদিন যে বাজিটা হয়েছে সেটা তোমার ভালো জন্য। সেদিন সে বাজিটায় আমি না জিতলে হয়তো তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতো। সেটা তুমি হয়তো এখন বুঝবে না। না আমি এটা বলছি না যে সিয়াম বাজে ছেলে। সিয়াম ভালো ছেলে। আর তোমাকে অনেক পছন্দও করতো। কিন্তু কিছু কিছু সত্যি ভালোকে খারাপ করতে সময় নেয় না। তোমার জীবনে এমন কিছু সত্যি আছে যেটা তোমার জীবনটাকে একটা ঘূর্নি ঝড়ের মত তছনছ করে দিতো। আমি শুধু তোমাকে সে ঝড় থেকে বাঁচাতে চাই। যাকে এতদিন ধরে পাগলের মত ভালোবাসি তার জীবনটা নিজের চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যেতে দি কি করে বলো?
তানিয়া: দেখুন কথার মারপ্যাঁচে আমাকে ফেলবেন না। আগে বলুন কি এমন সত্যি যার কারনে আপনারা আমার জীবনটা নিয়ে বাজি খেললেন?
আয়াতঃ প্লিজ তানিয়া এখন এ প্রশ্ন করো না। আমি উত্তর দিতে পারবো না। এ প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় এখনো হয়নি। আর এ এমন এক সত্যি যা শুনলে তোমার পুরো পৃথিবী কেঁপে যাবে। আমাদের বাজি ধরা নিয়ে তুমি যতটা না আঘাত পেয়েছো তার থেকে তিনগুন বেশি আঘাত পাবে।
তানিয়া: এত কথা আমি শুনতে চাই না। এর থেকে বেশি কি আঘাত পাবো বলেন? আমি জানতে চাই এখুনি।
আয়াতঃ স্যরি তানিয়া ! আমি সেটা পারবো না।
তানিয়া: বলবেন না তো? দরকার নাই বলার। আমি নিজেই জেনে নিবো। গোল্লায় যান আপনি আর সিয়াম। আর শোনেন এত সব জানার পর আপনার সাথে সারা জীবন থাকা আমার পক্ষে পছিবল না। আমি এখনি আপনার বাবা মাকে গিয়ে সব সত্যি কথা বলে দিবো।
আয়াতঃ তার দরকার নাই। বাবা মা আপু সব জানে।
তানিয়া: (ভিষন অবাক হয়ে) কি? তারমানে আপনারা সবাই মিলে আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছেন? এখন তো আমি আপনার সাথে মোটেও থাকবো না। এখনি এ বাড়ি থেকে চলে যাবো। আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
ডিভোর্স কথাটা শুনে আয়াতের বুকটা ধক করে উঠলো। চোখ দুটো যেনো ঝাপসা হয়ে গেছে। তানিয়া বাইরে যেতে নিবে ওমনি আয়াত তানিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে। তানিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আয়াত শক্ত করে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
তানিয়া: কি করছেন ছাড়ুন?
আয়াতঃ কি বললে তুমি? ডিভোর্স চাও ডিভোর্স হুমম। এত সোজা! তাও কি সম্ভব? তোমায় বলিনি যে ইহকাল পরকাল দুকালের জন্য তোমায় আমি নিজের করে নিয়েছি। চাইলেও তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারবে না। চেষ্টা করে দেখো যদি পারো? তুমি ছাড়তে চাইলেও আমি তোমায় কখনো ছাড়বো না। বিয়েটা কি বাজারের পন্য নাকি যে ইচ্ছা হলো ব্যবহার করলাম ইচ্ছা হলো ছুড়ে ফেলে দিলাম। তোমায় পাবার জন্য যদি আমি বাজি ধরতে পারি। তাও জীবন মরনের বাজি। তাহলে তোমাকে নিজের করে রাখার জন্য আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। গত তিন বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি। জীবনের বাজি রেখে জিতে তারপর তোমায় বিয়ে করেছি কি ডিভোর্স দেবার জন্য। দরকার হলে তোমার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবো তবুও আল্লাহ ব্যাতীত তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
তানিয়া: আয়াত ছাড়ুন। ভালো হচ্ছে না কিন্তু । আমি চিৎকার দিবো।
আয়াতঃ আচ্ছা দিয়ে দেখাও তো?
তানিয়া চিৎকার দিতে যাবে অমনি আয়াত তানিয়ার ঠোট দুটোকে নিজের ঠোট দিয়ে চেপে ধরলো। তানিয়া চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললো। তানিয়ার হাত পা যেনো অবশ হয়ে গেছে। নিজের শরীরের সব শক্তি ফুরিয়ে গেছে। শরীরের সব ভার আয়াতের ওপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। তানিয়া এমনটা করায় আয়াত নিজেও অনেকটা হতভম্ব যায়। তানিয়াকে পাজকোলে করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। হাতের পাল্স চেক করে দেখে ঠিক আছে। আয়াত ভাবে এমন কি করলাম যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো? একটা কিসই তো---------! তাতে কেউ এত ভয় পায়? নাহ ভুলটা আমারই। এরকম করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু দোষ তো ওরই ও কেন আমার থেকে দূরে যাবার কথা বললো?
ধুর মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে। কেন যে রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না। এখন নিজেকে নিজেই জুতো পেটা করতে ইচ্ছা করতেছে। আয়াত তানিয়ার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে
আয়াতঃ তুমি এমন কেনো তানিয়া? যে তোমায় নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তাকে তুমি চিনতে পারলে না। আর যে তোমায় ভালোবাসে না তার কাছে যেতে চাইছো। কেনো তানিয়া? তুমি কি বোঝনা যে, তুমি মরিচিকার পেছনে ছুটছো। বিলিভ মি তানিয়া তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন। তুমি আমার হৃদয়ে মিশে গেছো। মিশে গেছো আমার আত্নায়। তোমাকে ছাড়া জীবনটা কল্পনাও করতে পারি না। তুমি যে আমার কল্পনার রং। হৃদয়ের রংধনু। মনের ক্যানভাসে তোমায় নিয়ে যে খেলি হাজারো রংয়ের খেলা। ভালোবাসি তোমায়। খুব ভালোবাসি তানিয়া।
তারপর তানিয়ার মুখে হালকা পানির ছিটা দেয়। তানিয়া চোখ মেলে দেখে আয়াত ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তানিয়া দ্রুত উঠে বসে।
আয়াতঃ রিলাক্স। এতো দ্রুত ওঠার কোন দরকার নাই।
তানিয়া রাগি চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে চোখ দিয়েই আয়াতকে মেরে ফেলে। আয়াত তানিয়ার হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো
আয়াতঃ আই এ্যাম স্যরি তানিয়া। প্লিজ মাফ করে দাও। দেখো তুমি যে রকম রিয়াক্ট করতে ছিলা আর ডিভোর্স এর কথা শুনে আমারও রাগ ওঠে গেছিলো। তাই। স্যরি। তানিয়া হ্যা আমাদের ঘরের সবাই আমার আর সিয়ামের #বাজির বিষয়টা জানে। কিন্তু তাই বলে এত মানুষের মধ্যে তুমি যদি এরকম সিনক্রিয়েট করো তাহলে শুধু আমাদের পরিবারের না তোমার পরিবারেও মান সম্মান যাবে। আর তানিয়া তুমি খুব ভালো করেই জানো আমাদের পরিবারের লোক তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসে। তারা যা করেছে তোমার ভালোর জন্য। আর মা সে তো দূরের কেউ নয়? তোমার ফুপি। হ্যা হয়তো তোমার বাবা আর আমার মা খালাতো ভাইবোন তবুও ভাই বোন তো। আর সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে। মা বাবা তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। এ বিষয়ে তোমার যদি কিছু বলাও থাকে তাহলে প্লিজ যখন আত্নীয় স্বজন কেউ থাকবে না তখন বলো। আর একবার তোমার বাবা মায়ের কথাও তো ভাবো?
তানিয়া মনে মনে বলছে আয়াততো ঠিকই বলছে । এখন কিছু করলে বা বললে শুধু শুধু দুই পরিবারের মান যাবে। তার থেকে কিছুদিন পর বলি। আর বাবাকে দেয়া কথাওতো রাখতে হবে।
তানিয়া: ঠিক আছে। তবে মেহমান যাওয়ার পরই সব ক্লিলিয়ার করবেন।
আয়াতঃ ঠিক আছে। তানিয়া তুমি সত্যিই খুব ভালো।
তানিয়া: (মনে মনে) শালা হারামি , লুইচ খান, ফাজিল, আমাকে কিস করে আবার আদিক্ষেতা দেখাতে আসছে। তোর ভালোর গুষ্টি কিলাই। আজ পর্যন্ত কোন ছেলে আমাকে টাচ পর্যন্ত করতে পারেনি। আর এই শালা আমার ঠোঁটে-------- মনচাচ্ছে মাটিতে পা ছড়িয়ে কাঁদি। হারামিটাকে বাঁশ দিয়ে পিটাই।
আয়াতঃ মনে মনে আমাকে গালাগালি দেয়া কমপ্লিট হলে এবার তৈরী হয়ে নাও।
তানিয়া: হুমমমমম। ওনি কেমনে জানলো? (মনে মনে)
আয়াতঃ কিছু বিষয় এমনিই বোঝা যায়।
বৌ-ভাতের সমস্ত কাজ শেষে তানিয়া আর আয়াত তানিয়াদের বাড়ি গেলো। আয়াত নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। নীশি তানিয়াকে নিয়ে ছাদে গেলো।
নীশিঃ কিরে ভাইয়া #বাজির বিষয়ে কিছু বললো?
তানিয়া: মোটামুটি পুরোটা বলেনি। কিন্তু #বাজির বিষয়টা তুই কি করে জানলি?
নীশিঃ আয়াত ভাইয়ার এক বন্ধু সাথে গত কাল রাতে দেখা হয়েছিলো। তারপর কথায় কথায় #বাজির কথাটা বলে ফেলে। কিন্তু ডিটেলস এ কিছু বলেনি। তাই সকালে তোকে জানালাম।
তানিয়া: ওহ।
নীশিঃ আচ্ছা ----------
নীশি কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে তানিয়াকে তানিয়ার মা ডাক দিলো। ওরা নিচে চলে গেলো। সেদিন সকাল থেকে তানিয়া আয়াতের সাথে একটাও কথা বলেনি। রাতে খাবার শেষে যখন শুতে এলো তখন আয়াত বললো
আয়াতঃ কাল সকালে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।
তানিয়া: আমি কোথাও যেতে পারবো না।
আয়াতঃ সেটা সকালেই দেখা যাবে।
তানিয়া: ওকে
সকাল বেলা আয়াত এমন প্ল্যান করলো যে তানিয়াকে আয়াতের সাথে আসতেই হলো। আসলে কাজটা করার জন্য আয়াত তানিয়ার বাবার সাহায্য নিয়েছে। কারন জানে তানিয়া ওর বাবার কথা ফেলতে পারবে না। গাড়িতে বসে তানিয়া বলছে
তানিয়া: আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আয়াতঃ সিয়ামের সাথে দেখা করতে!
তানিয়া: হোয়াট?
আয়াতঃ হ্যা। সিয়াম দেখা করতে চায়। তাই।
গাড়িটা একটা পার্কের সামনে থামলো। তানিয়াকে দেখে সিয়াম ওর দিকে এগিয়ে আসছে । কিন্তু তানিয়ার চোখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না।
চলবে----------
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন.....