গল্প: আয়না
____হুসনা
.
অনেকবেলা করে ঘুম ভাঙলো আজ নিহির।এরকমটা সাধারণত হয় না।কাল সারারাত অনিকের সাথে ছাদে ছিল।একসাথে অনেক অনেক গল্প করেছে আর জোৎস্না বিলাস করেছে। এই পাগলামো গুলো করতে করতেই রাতটা পার হয়ে গেল।ভোরের দিকে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়ায় উঠতে এতটা দেরি হয়ে গেল।
.
স্নান সেরে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো নিহি।এই আয়না টা ওর খুব প্রিয়।১ম বিবাহবার্ষিকীতে অনিক এটা বাসায় এনেছিল।বিয়ের ১ম বছর টা ওদের খুব কষ্টে পার করতে হয়েছে।অনিক চাকরি করতো, কিন্তু খুবই স্বল্প বেতনে।তা দিয়ে সংসার চালাতে দুজনেরই হিমশিম খেতে হতো।তবুও ভালোই চলছিল তাদের টোনাটুনির সংসার।
নিহির একটা আয়নার শখ ছিল, সেটা অনিক জানতো ।তাই এই টানাটানির সংসারেও ১ম বিবাহবার্ষিকী তে নিহির শখ পূরণ করতে এটা এনেছিল।তারপর তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এলো,কত ফার্নিচার এলো....সবকিছু ছাপিয়ে এই ড্রেসিং টেবিল টা এখনো নিহির প্রিয়।কেননা,এ আয়না তাদের দুজনের অনেক স্মৃতির সাক্ষী।
.
আজ তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনিক ছুটি নিয়েছে।আজ সারাদিন ও বাসায় থাকবে,ভাবতেই প্রচণ্ড ভালোলাগা কাজ করছে নিহির মাঝে।
.
অনিক এখনো ঘুমোচ্ছে।ততক্ষণে নিহি সেজে নিচ্ছে।
চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিয়েছে।একটা নীল শাড়ি পড়েছে সে।পাড়টা কালো রঙ এর।সাথে একটা কালো রঙ এর ব্লাউজ। চুলগুলো আঁচড়ে ছেড়ে দিল।চোখে একটু কাজল,কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ,আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক।
ব্যস! এতেই নিহি পুরো অপ্সরী!
.
হাতে কিছু নীল কাঁচের চুড়ি পড়েছে নিহি।চুড়ির টুং টাং শব্দে অনিকের ঘুম ভেঙে গেছে।ঘুম থেকে উঠে নীলপরী টাকে দেখে অনিক অভিভূত!
"কি হলো? কি দেখছো অমন করে?"
নিহির ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলো অনিক।
-তোমাকে
_আমাকে নতুন করে দেখার কি হলো?২ বছর ধরেই তো দেখছো.....
-আজ তোমায় খুব বেশি সুন্দর লাগছে!
-ও! আগে বুঝি সুন্দর লাগতো না?
ঠোঁট ফোলালো নিহি।
অনিক দেখছে মেয়েটা অভিমান করেছে।
রাগ ভাঙানোর জন্যে নিহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বললো...
"আগে তো এই অপ্সরী কে ভালো করে দেখাই হয় নি কখনো। আজ দেখবো... আয়নায় দেখো, আমাদের দুজনকে কত সুন্দর লাগছে!"
আয়নায় তাকিয়ে নিহি লজ্জা পেলো।
.
-আমি তোমার জন্য চা করে আনছি।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও...
বলেই নিহি রান্নাঘরে ছুটে গেলো।
অনিকের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
.
.
এদিকে নিহি চায়ের পানি বসিয়ে আনমনে তাদের বিয়ের আগের কথাগুলো ভাবছে।একসময় সে ভেবেছিল অনিক বিয়ের পর আর তাকে আগের মত ভালোবাসবে না।কিন্তু আজ সে ভুল প্রমাণিত হলো।অনিক তাকে এখন আগের চাইতেও অনেক ভালোবাসে।
.
কিসের যেন পোড়া গন্ধ আসছে..কোত্থেকে?
পোড়া গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে নিহি আবিষ্কার করলো তার চুলে আগুন ধরে গেছে এবং সেই আগুন খুব দ্রুতই মাথার কাছে এসে গেছে।
নিহি আর সহ্য করতে পারলো না।
অনিইইইইইইইইক.... বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো।
.
জ্ঞান ফেরার পর নিহি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো।নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো...
-আমি এখানে কেন?
নার্স: আপনার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।গ্যাসের চুলা থেকে অসাবধানতা বশত চুলে আগুন লাগে মাথা এবং ঘাড়ের অনেকটা পুড়ে গেছে।আপনার হাজব্যান্ড আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।একটা সার্জারী করতে হয়েছে। আজ ৩ দিন পর আপনার জ্ঞান ফিরলো।এখন কেমন লাগছে?
নিহির কাছে সব অন্ধকার লাগছে।কোনো কথাই মুখ থেকে বের হচ্ছে না।অনেক কষ্টে বলতে পারলো,
-আমার হাজব্যান্ড কে একটু ডেকে দেবেন?
.
.
পরদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে নিহিকে নিয়ে অনিক বাসায় এলো।বেডরুমে ঢুকতেই আয়নায় চোখ গেলো।
আয়নায় নিজের যা চেহারা দেখলো তাতে নিহি কান্নায় ভেঙে পড়লো।
কোথায় তার সেই ঘন, কালো, লম্বা চুল!
কোথায় সেই চুল...যে চুলে মুখ ডুবিয়ে গত রাতেও তার প্রিয় মানুষ টা বলেছিল,"ভালোবাসি"।
সেই চুলের জায়গায় এখন শুধুই পোড়া চামড়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
ভাগ্যের জোরে সেদিন বেঁচে গিয়েছিল।সময়মত হাসপাতালে নেয়া না হলে মাথার ভেতর টাও পুড়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল।
যেভাবে পুড়েছে...তাতে পোড়া ক্ষত টা শুকিয়ে গেলেও আর কোনোদিন ও চুল ওঠার সম্ভাবনা নেই।
এটা ভেবেই নিহি ডুকরে কেঁদে উঠলো।চুলবিহীন চেহারাটা অনিকের পাশে কল্পনা করতেই নিহির কান্নার বেগ বৃদ্ধি পেল।
অনিকের আর সহ্য হলো না...কাঁদতে কাঁদতে নিহির মুখটা তুলে বললো,
-এই বোকা মেয়ে? কাঁদছো কেন?
-তোমার পাশে এই চুলবিহীন অদ্ভুত, কদাকার চেহারা টা নিয়ে কিভাবে দাঁড়াব আমি?
-তোমার চেহারা নয়,আমার কাছে তুমিই সব।এত বড় একটা এক্সিডেন্ট এর পর তুমি যে বেঁচে আছো, আমার কাছে এটাই বেশি।
-বাইরে যাওয়ার কথা বাদ ই দিলাম।কিন্তু এই বেডরুম ছেড়ে তো কোথাও পালাতে পারবো না।এই আয়নার সামনে তোমার পাশে কিভাবে দাঁড় করাবো নিজেকে?
অঝোরে কেঁদে চলেছে নিহি।অনিক আর সহ্য করতে পারলো না।
বেড সাইড টেবিলে রাখা ফুলদানিটা দিয়ে সজোরে ওই আয়নায় আঘাত করলো।মুহূর্তেই কাঁচের আয়নাটা ভেঙে চৌচির হয়ে গেলো।
.
নিহির মুখ টা দুহাতে নিয়ে অনিক কাঁদতে কাঁদতে বললো...
-এই মেয়ে শোনো? আজ থেকে তুমি আর কখনো আয়নার সামনে যাবা না।আমার দুচোখ ই তোমার আয়না। বুঝতে পেরেছো?
বলেই নিহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
নিহি এখন কাঁদতে ব্যস্ত।উহু,এই কান্না কষ্টের নয়...আনন্দের।সে এখন একটা স্বচ্ছ আয়নার খোঁজ পেয়েছে,যে আয়নায় তাকে চিরকালই সুন্দর দেখাবে।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
nice
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
wow
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
:(
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit