জীবনের সঠিক অর্থ বুঝাটা আজ কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।প্রতিটা স্হর যেন শ্বাসরুদ্ধকর। এই কেমন বিচার প্রকৃতির। দিন যায় ক্ষণ হারায়, আজো চেয়ে রই পথপানে।কেউ কি এসেছিল এই মেঠোপথে? হ্যা,সে তো কথা দিয়েছিল প্রতিটা মুহূর্তে ঝিলিক হাসি মুখে হেঠে চলত এই সবুজ বাহারে।আজকাল তার দেখা তো পাওয়া যায় না।যেন সে অমাবস্যার চাঁদের সাথে চলে মিলিত হয়েছে।
হারানো সে দিন গুলো আজ স্মৃতিতে উঁকি দিচ্ছে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে।ভালবাসা যেন তখন হাতছানি দিতে শুরু করল।পড়তাম শহুরে অঞ্চলে এক প্রতিষ্ঠানে, যেখানে তার সাথে দেখা।সে ছিল খুব অপূর্ব, তেমনি তার 'তানশা'নামটা ও সুমিষ্ট।সে দিন ছিল দোয়া অনুষ্ঠান।ওই আয়োজনে সংগীত পরিবেশনের জন্য নাম ঘোষণা করলেন শিক্ষক -জাহেদুল ইসলাম।
কেউ জানত না আমায় এর আগে।তবে স্যার আমাকে জানত এবং আমার আবৃত্তি, গান পরিবেশনা সম্পর্কে। সবাই থাকিয়ে আছে মঞ্চের পানে।ধীর পায়ে হেটে গেলাম মাইকের সামনে।এখন সবাই এক আগ্রহের দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আমার পানে।নজরুল সঙ্গীত শুরু করলাম কন্ঠের যত সুমধুরতা আছে সব দিয়ে।সব শেষে যখন খাওয়ার সময় আসল,তখন দেখি তানিশা আমার পানে চেয়ে আসে।যখনই চোখাচোখি হল তখন মিষ্ট হাসতে আমাকে পাগল করার মত।
এভাবে কয়ক মাস অতিক্রান্ত হল।সব ভাবের আদান প্রদান হত নেত্র ইশারায় আর হাসিতে।মাঝে কয়েকটা চিঠি ও প্রেরণ করেছে সে।এর মাঝে আমাদের পঞ্চম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটা পরীক্ষায় তার সাথে দেখা হত, কিন্তু কোন কথা হত না।
পরীক্ষা শেষের দিন সবাই গেলাম সাগর পাড়ে।এই তো দেখি সাগর আমায় আজ নতুন সম্পর্কে সম্পৃক্ত করে দিল।আমার সাহস ছিল না তানিশাকে প্রেম নিবে করব।কিন্তু সে ছিল সাহসী। সুযোগ বুঝে আমায় তার ভালবাসা প্রকাশ করেছল।ওই দিন অনেক কথা হল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে পছন্দ করার কারণ কি জানতে পারি?
সে বলেছিল তোমার সুমিষ্ট কন্ঠের কলকাকলীতে সারাজীবন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাব আর ছোট স্বপ্ন বুনব।তাছাড়া তুমি সে যার কথা আমাকে ভাবায়।তার কথায় আমি আত্মহারা হয়েগিয়েছিলাম।কিন্তু ক্ষণিক পরে আনন্দ হরিয়ে গেল।যখন বিদয় ক্ষণ আসল আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।তার চেহারা দেখে বুঝলাম তার ও মন খারাপ। তবে এই লম্বা ছুটির দিনে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে আসলাম।
গ্রামে এসে মনটা শূন্য হয়ে গেল। তবে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তা ভুলে গেলাম।এমনকি তার কথা ও মনে থাকত না।তবে একা থাকলে মনে পড়ত তার হাসিটা।
দুই মাস পর আজ ক্লাসে যাচ্ছি খুব আগ্রহের সাথে।তানিশাকে দেখার পর আবার আগের আবেগটা জেগে উঠল।কিন্তু কথা বলতে পারি নাই তার সাথে।আমাদের মধ্যেস্ততা কারী মিথিলা আমাদেরকে নিয়ে নাস্তা খেতে গেল ক্লাস শেষে।ওখানে যাওয়ার পথে কথা বলা শুরু করল তানিশা।
আমি তোমাকে কত মিস করেছি জান কি, জাহু?তার মুখে জাহু ডাকটা শুনে আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম।মনে হল আমার অন্তরে এক প্রশান্ত আাতাস বয়ে চলল।সে আরো বলল,বাড়িতে আমি গলা কাটা মুরগির মত কত চটপট করেছি তুমি কি জান?কতবার তোমার বাসার গলির দিকে গিয়েছিলাম আমি আার মিথিলা।কিন্তু তোমার কোন হদিসই পেলাম না।আমি সব কিছু চুপ করে শুনতে লাগলাম।তানিশা দেখি কান্না করতেছে।তার নেত্রজল গুলো আলতো করে মুছে দিলাম, আর রবী ঠাকুরের মাঝে মাঝে তব দেখা পায় গানটা শুনালাম।এখন দেখি সে খুব ফুরফুরে।হঠাৎ একটা কান্ড ঘটে গেল।গান শেষ হতে না হতে তানিশা আমায় আচমকা জড়িয়ে ধরল।আমি পাথর হয়ে গেলাম, আর মিথিলা তাকিয়ে আছে আমাদের পানে।
তানিশা বলল, যখন আমার মন খারাপ থাকবে তখন তুৃমি আমায় এইভাবে গান শুনাবে তো?আর জড়িয়ে ধরে গল্প বলবে।আমি শুধু বললাম হ্যা।আরো অনেক কথা বললাম এবং তানিশাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আসলাম।
এভাবে আমাদের দিন চলতে লাগল।কখনো হাসি আবার কখনো মনোমালিন্য কখনে বা ঝগড়া।এককথায় সব মিলিয়ে এক আনন্দ ঘন মূহুর্ত।মাঝখানে তাদের বাড়িতেও যাওয়া হয়েছিল।তানিশার বড় আপু আর আম্মুর সাথে কথা হয়েছিল। তারপর থেকে আপুর সাথে প্রায় কথা হত। আপু ও নাকি প্রেম করত।আর তিনি আমাদেরকে ও সাহায্য করত।এবং বলত কখনে যেন কেউ কাউকে ছেড়ে না যাই।
তানিশার পরিবারের সাথে আমার খুব একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠল।মাঝখানে একদিন ক্লাসে দেখলাম তানিশার মন খারাপ।জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম তার ছোট ফারিহা খুবই অসুস্থ। তার কন্ঠনালিতে সমস্যার কারণে ভালভাবে কথা বলতে পারতেছে না।কারণবশত অপারেশনের দরুন তানিশা সহ বিদেশে যেতে হবে।মাস খানেক লাগবে তাদের ওখানে।ওই কিছু কথাবার্তা বলে চলে গেল।
ঔরা বিদেশে যাওয়ার কিছুদিন পরে আমাদের একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়।আমার আব্বুর ব্যবসায়িক লেনদেনের দরুণ অনেক দেনা হয়ে যায়। ফলে আমকে সহ আব্বু গ্রামে চলে যায় এবং ওখানে একটা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেন।ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে আমি কাউকে কিছুই জানাতে পারলাম না।তানিশার কথা খুব মনে পড়ত।কিন্তু কি করব আমি বুঝতে পারতেছি না।হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আমি তানিশার সাথে দেখা করতে শহরে যাব। যে ভাবা সে কাজ।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!