ইমরানের সাথে শা/ রীরিক স/ ম্পর্ক করার দুই মাস পর নিহিতা বুঝতে পারলো তার মাঝে একটি জীবনের অস্তিত্ব বড় হচ্ছে । সে আরও সিউর হলো প্রেগন্যান্সির পজিটিভ রিপোর্ট দেখে ।
ইমরানের সাথে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে নিহিতা । রিলেশনের এক বছর না হতেই , শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য ইমরান বেশ তোরজোর শুরু করে । রিলেশন টিকিয়ে রাখতে ইমরানের আবদার পূরণ করতে বাধ্য হয় নিহিতা ।
ঈদানীং ইমরানের ফোন বন্ধ থাকে । ঠিক মতো নিহিতার সাথে যোগাযোগ করে না । নিহিতা কলেজ, প্রাইভেটে যেতে পারে না লজ্জায় । দিন দিন নিহিতার শারীরিক পরিবর্তন স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে । নিহিতা ঢিলেঢোলা পোশাক পড়ে যতটুকু সম্ভব ব্যপারটা অন্যদের থেকে আড়াল করার চেষ্টা করে । তবুও সেদিন নিহিতার রুমমেট হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো
-কিরে নিহিতা , তোর চেহারা এমন হয়ে যাচ্ছে কেন ! আর এত শুকিয়ে যাচ্ছিস যে ! খালা বলল তুই নাকি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করছিস না ? আবার কলেজেও নাকি যাচ্ছিস না ! কোনো সমস্যা ?
নিহিতা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল
-না আপু, তেমন কিছু না । এই তো আগামীকাল থেকে কলেজে যাবো ।
পড়াশোনার সুবাদে ম্যাসে থাকে নিহিতা । ফ্যামিলি থেকে দূরে । ফ্যামিলির সাথে থাকলে হয়তো সবাই এতদিন সব কিছু জেনে যেত । ফ্যামিলির নজর থেকে বাঁচলেও রুমমেটদের নজর এড়িয়ে যেতে পারছে না ।
রাতে নিহিতা ইমরানকে কল দিল । রিং হচ্ছে কিন্তু ইমরান ফোন রিসিভ করছে না ।
বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পর ইমরান কলটা রিসিভ করলো ।
নিহিতা কেঁদে দিয়ে বলল
-তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন ? আমি কি দোষ করেছি !
ইমরান বিরক্ত গলায় বলল
-দেখ নিহিতা , এমন বাচ্চাদের মতো নেকামি কান্না আমার একদম পছন্দ না । কান্না থামাও নয়তো ফোন রাখলাম !
আর শোনো , এতবার কল দিবা না । আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে ।
-শোনো ইমরান , তোমার সাথে আমার একটা জরূরী কথা আছে !
-এত না প্যাচিয়ে বলে ফেল !
-আমি প্রেগনেন্ট !
ইমরান অবাক হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো । ইমরান রাগন্বিত হয়ে বলল
-দেখ নিহিতা ! ফাইজলামি একদম ভালো লাগছে না । আমি ফোন রাখছি ।
-না প্লিজ !
-তাছাড়া কি করবো ! তোমার এই বকবকানি শুনবো বসে বসে !
-ইমরান আমি সিরিয়াস বলছি ।
ইমরান শান্ত হয়ে বলল
-আচ্ছা , আগামীকাল কলেজ গেটে দেখা কর । তখন সব কথা হবে ।
নিহিতা ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করলো । তারপর দৌড়ে ওয়াশ রুমে গেল । কারণ রুমমেটরা যখন তখন চলে আসতে পারে । আর কান্না করা দেখলে তো হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে । তার চেয়ে বরং ওয়াশ রুমে নিজের আবেগটা চোখের পানির মাধ্যমে ঝড়ায় । আমরা কষ্টের কারণ গুলো অন্যর মাধ্যমে পাই । কিন্তু কষ্ট গুলো আমরা নিজেরা তৈরী করি । কোনো কষ্টের মূহুর্তে আমরা চাইলেই কষ্টের বাইরে থাকতে পারি । কিন্তু না ! ছোট ছোট কষ্ট গুলোকে আমরা বড় করে ফেলি । কষ্ট গুলোকে খুব ভাবি । আমরা আসলে কষ্টের মাঝে থাকতে পছন্দ করি । নিহিতা ওয়াশ রুম থেকে এসে দেখলো রুমমেটরা সবাই রুমে এসে হাজির । একজন বলল
-কিরে এত সময় ওয়াশ রুমে কি করছিলি ? তোর ফোনটা বেশ কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেল ।
নিহিতা দৌড়ে যেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মা ফোন করেছে । নিহিতা ভেবেছিল ইমরানের কল হবে । আশাহত হয়ে মাকে কল দিল ।
-কিরে কখন থেকে কল দিচ্ছি , ধরছিস না কেন ?
-মা , একটু ব্যস্ত ছিলাম বুঝতে পারিনি ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । শোন তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস বাড়ি চলে আয় । তোর বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে ।
নিহিতা চমকে উঠলো ! এই অবস্থায় কোনো মতেই বাড়িতে যাওয়া যাবে না । তাহলে এক কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে ।
-কিরে কথা বলিস না কেন ?
-মা , আমার তো পরীক্ষা চলছে , এখন বাড়ি যাওয়া সম্ভব না । আপুর বিয়ে কবে ?
-সামনের মাসের শেষের দিকে ।
-আমি তাহলে বিয়ের কয়েকদিন আগে আসবো ।
-আচ্ছা , সাবধানে থাকিস ।
নিহিতা ফোনে কথা বলা শেষ করতেই রুমমেট অবনি বলল
-কিরে নিহিতা ! তোর তো এখন কোনো এক্সাম নাই । তাহলে মায়ের কাছে মিথ্যা বললি কেন ?
নিহিতা কোনো কথা বলছে না দেখে , অবনি নিহিতার বেডে এসে হাত ধরে বলল
-কি হয়েছে তোর ! বল আমায় !
অবনি আরও অবাক হলো নিহিতার চোখে জল দেখে । অবনি নিহিতার দুই সেমিস্টার উপরে পরে । নিহিতার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক অবনির ।
-কিরে কথা বলছিস না কেন ?
নিহিতা চোখের পানি মুছে বলল
-আপু একটু ছাদে যাবেন ?
অবনি আর নিহিতা ছাদে বসে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করছে । পরিবেশটা মনোমুগ্ধকর হলেও নিহিতার কাছে তার বিপরীত ।
অবনি বলল
-কি রে কিছু বলছিস না কেন ?
-আপু একটা ঘটনা ঘটে গেছে !
-আরে না বললে বুঝবো কিভাবে আর সলভই বা কিভাবে করবো ।
-আপু আমি প্রেগনেন্ট !
নিহিতার মুখে কথাটা শুনে অবনি অবাকের আরও একধাপ উপরে পৌঁছালো ।
অবনি অবাক হয়ে বলল
-কি বলিস এসব ! কিভাবে সম্ভব !
-আপনাকে ইমরানের কথা বলেছিলাম না ! শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য ও বেশ কয়েকদিন ফোর্স করছিল । এক পর্যায়ে রিলেশন ব্রেকআপ করতে চাইছিল । কিন্তু আপু আমি তো ওকে সত্যি খুব ভালোবাসতাম । তাই রিলেশন কন্টিনিউ করতে !
নিহিতা হু হু করে কেঁদে দিল । আর কিছু বলতে পারছে না । অবনি বলল
-ইমরান জানে তোর এই অবস্থার কথা ?
নিহিতা মাথা দুলিয়ে বোঝালো হ্যা !
-ইমরান কি বলল ?
-ও আগামীকাল দেখা করতে বলেছে । আর আমি জানি ও আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে এত সিরিয়াস না । বিষয়টি পরে বুঝতে পারলাম । ইমরান ইদানীং আমার সাথে তেমন যোগাযোগ করে না । আপু আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না । আমার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
নিহিতা অবনিকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে দিল । অবনি বলল
-দেখ একদম কাঁদবি না । আমি আছি তো তোর পাশে । সব ঠিক হবে ।
পরের দিন নিহিতা ইমরানের জন্য অপেক্ষা করছে । প্রায় ঘন্টা খানেক দেরি করে ইমরান আসলো ।
-দেখ নিহিতা , গতকাল রাতের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে এখানে আমার কিছু করার নেই । ভুল দুজনেরই ।
নিহিতা বলল
-তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি !
-হোয়াট ! এখন বিয়ে করে তোমাকে খাওয়াবো কি ! আর আমার বাসা থেকে কখনোই এটা মেনে নেবে না । সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে , সামনে আমার পুরো লাইফ পড়ে আছে । এখন বিয়ে করে আমি আমার ভবিষ্যত নষ্ট করতে পারবো না ।
-এসব তুমি কি বলছো ! তুমি তো আমাকে ভালোবাসো , আর আমার মাঝে যে তোমার অস্তিত্ব বড় হচ্ছে সেটার কি কোনো ফিলিংস নেই তোমার কাছে ?
-এসব আবেগি কথা বাদ দাও । এবরশন করে নাও । যা খরচ হয় আমি দিব ।
-ইমরান প্লিজ আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর ! এখন যদি তোমাকে আমার পাশে না পাই তাহলে আমি সত্যিই অসহায় হয়ে যাবো ।
-আচ্ছা , আপাতত ম্যাসে যাও । আমি পরে বিষয়টি ভেবে বলবো ! আর আমি নিজেই ডাক্তারের সাথে কথা বলবো ।
দুপুরে নিহিতা ম্যাসে ফিরে অবনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে । কোনো কথা বলছে না । কেউ বলছে নিহিতার ভূতে ধরেছে , জ্বিনে ভর করেছে ইত্যাদি । কিন্তু অবনি বুঝতে পারছে যে ইমরানের সাথে ওর খারাপ কিছু হয়েছে । যার কারণে নিহিতা সেটা মেনে নিতে পারছে না ।
রুম থেকে সবাই চলে গেলে অবনি বলল
-কি হয়েছে বলবি তো ! ইমরান কি বলেছে ?
নিহিতা চোখের পানি মুছে বলল
-ও আসলে আমাকে ভালোবাসে না আপু । ও এবরশন করতে বলছে ।
-শোন , ভুল যেহেতু করেছিস , এখন আর এইটা ছাড়া উপায় নেই ।
-নিহিতা , ইমরানের ছবি আছে তোর কাছে ?
-হ্যা , কিন্তু কেন ?
-দেখি বের কর , ছেলেটাকে দেখবো !
নিহিতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে স্কিনে তাকাতেই অবনির দুইবার হার্ট মিস হওয়ার উপক্রম হলো , খুব পরিচিত মুখটা দেখে ! এটা কিভাবে সম্ভব ! না এটা কিছুতেই হতে পারে না ।
চলবে...
.
পর্ব-এক