মনোগত অবসন্নতা ও তার উপশম।

in mental •  2 years ago 

মনোগত অবসন্নতা ও তার উপশম বলতে বুঝায়, মানসিক অবসাদ এবং তার প্রতিকার। এই প্রবন্ধে বা Article এ মানসিক অবসাদ কেন হয়? এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বা প্রতিকার সম্বন্ধে আমার সাধ্যমত আলোকপাত করার চেষ্টা করব। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক ভারসাম্যহীন দের ও তার পরিবারের মানুষদেরকে, তাদের সমস্যার বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি এবং বর্তমানেও সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, ফলস্বরূপ বেশিরভাগ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। বিভিন্ন মানুষের মানসিক সমস্যা শ্রবণ করে ও সাইকোলজি বিষয়ের উপর লেখা পত্রপত্রিকা,বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে যা অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায়- দেশ তথা বিশ্বের 85 ভাগ মানুষ কমবেশি মানসিক সমস্যার শিকার ৷ দীর্ঘ মানসিক সমস্যায় ভোগান্তির ফলে মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়। যাকে বেশিরভাগ মানুষ অবহেলা করে, কিন্তু মানসিক রোগ কে সকল রোগের 'মা' বলা হয়। দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ভোগান্তিতে বিভিন্ন শারীরিক রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে এবং তা বড় মাত্রায় বিকশিত হয়। যেমন- সুগার, হাই-প্রেসার, লো-প্রেসার, থাইরয়েড, কলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসেরাইড (Triglycerides), মাথাযন্ত্রণা, স্থূলতা (Obesity), অল্প বয়সে মাথার চুল পেকে যাওয়া, মুখমন্ডলের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, এবং দ্রুত অপরিণত বয়সে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation), অনিদ্রারোগ, অতিরিক্ত ঘুম, ক্লান্তি, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ইত্যাদি।

এই প্রবন্ধে বিশেষভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব - প্রথমতঃ মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন বিষয়ে, দ্বিতীয়তঃ অবসাদের কারণ, তৃতীয়তঃ অবসন্নতার লক্ষণ, চতুর্থতঃ প্রতিকার ও নিরাময়ের উপায় সম্বন্ধে।
মানসিক অবসাদ কি?:- মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন, এককথায় মনের অসুখ, এর উপর আলোচনা করতে গেলে প্রথমে যে বিষয়টি আসবে তা হলো মনের অসুস্থতার ব্যাপকতার সীমারেখা, পরিমণ্ডল, বৃত্তের বেষ্টনরেখা(Circumference) বেড়(Periphery) বিত্তীর্ণ বা বিরাট। নানা প্রকার হেতু বা কারণে বিভিন্ন ধরনের মনোগত সংকটময় অবস্থা দেখা দিতে পারে। তবে মানসিক অসুখের বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং স্কিজোফ্রেনিয়া অন্যতম। বিশ্বায়ন ও উন্নত- ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, অত্যাধুনিক এর যুগে হুহু করে মানুষ ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু স্কিজোফ্রেনিয়া একটি দুর্বোধ্য জটিল মানসিক ব্যাধি, রোগী অনেক সময় নিজের সমস্যা সম্পর্কে অবগত বা অবহিত থাকেন না। রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তার কোন প্রকার পীড়া(Disease) হয়েছে বলে দায় গ্রহণ (স্বীকার) করতে অস্বীকার করেন। ডিপ্রেশন ও স্কিজোফ্রেনিয়া- দুটোই আলাদা মানসিক রোগ, ডিপ্রেশন বা অবসাদ সম্বন্ধে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় Major depressive episode. যে অবস্থায় মানুষের মন কোন কারনে পদানত(subdued) বা নমিত হয়ে যায়। অর্থাৎ Mind বা চিত্ত উদ্যমের অভাব বোধ করে। একজন 'মানুষ' যিনি Depressed বা অবনমিত, বিষণ্নের শিকার হন।তাতে তার সমস্ত ধরনের কার্যকলাপ, প্রাকৃতিক, স্বাভাবিকের তুলনায় অধিকাংশটাই কমে যায়। বর্তমান সারা পৃথিবীতে যে সমস্ত রোগের ডিসএবিলিটি মাত্রা বেশি, ডিপ্রেশন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, যেকোনো সময় প্রথম স্থান দখল করতে পারে।মানসিক রোগের অন্তর্ভুক্ত- ডিপ্রেশন এবং স্কিজোফ্রেনিয়া দুটি অসুখের অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়া-কলাপের সাদৃশ্য থাকে। কিন্তু বৈসাদৃশ্য হলো ডিপ্রেশন রোগী নিজে নিজের সমস্যা উপলব্ধি করতে পারেন। এবং তিনি অতি তাড়াতাড়ি নিরোগ হয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চান, এদের মধ্যে ভালো থাকতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রবল থাকে। অপরদিকে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী, অনেক সময় তাঁর কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা? সেটাই রোগীর বোধগম্য হয়না। তার কোনো মানসিক অসুখ আছে কি না সেটা বুঝার ক্ষমতাটা স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হবার ফলে চলে যায়। ঠিক সেই কারণে এই কোয়ালিটির অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কারণ তারা তো মনে করেন না, তাঁরা অসুস্থ। স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের অনেক ভাগ আছে তার মধ্যে একটি হলো "প্যারেনয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া' যেসব ব্যক্তি "প্যারেনয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া'য় আক্রান্ত হন তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো জটিল, কারণ তাদের ব্যক্তিত্বের অন্য অর্গান খুবই স্বাভাবিক থাকে যে অপরের নজরেও অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না। কখনো কখনো অর্থহীন অবান্তর আচরণ করে, এবং বাক্যলাপ এর মাধ্যমে কিছু কিছু অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, বিশেষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। এই সমস্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন, চাকরি, কাজ, আড্ডা, ঘোরা-ফেরা, করে।যার জন্য এই ধরনের রোগীদেরকে আরোগ্য করা খুবই কঠিন কাজ। এঁরা যাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় থাকেন বা সময়কাটান(Spending time) তাদের চোখে এঁদের মানসিক রোগ ধরা পড়ে।

     স্কিজোফ্রেনিয়া বহু ধরনের হয় - রাস্তায় আমরা যে সকল পাগল দেখতে পাই, সেই সমস্ত পাগল যে ধরনের স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত তাকে বলে হেভিফ্রেনিয়া।



   মানসিক অবসাদের কারনে অনেক প্রকার মনোগত রোগের সৃষ্টি হয় যথা - 1.mania (Mania excitement) 2.Hallucination (মতিভ্রম) 3.Dementia 4.Depression 5.Alzheimer's disease 6.Anxiety 7.Stress 8.panic 9.Agoraphobia 10.Body dysmorphic disorder. ইত্যাদি। আমার এই 'ব্লগ সাইটে' প্রত্যেকটি রোগের সম্পর্কে পৃথক-পৃথক ভাবে, আগামী দিনে ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করবো। রোগের- কারণ, লক্ষণ, ও প্রতিকার সম্পর্কে।

 পুনরায় ফিরে আসি এই প্রবন্ধের মূল   আলোচনার বিষয়।

মানসিক অসুখের কারণ:-

মানসিক অসুখের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে, এই প্রবন্ধে মানসিক অসুখ এর প্রধান দুটি রোগের বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করেছি। তাই মানসিক অসুখের আলোচনা তেও রোগ দু'টির কারণ একটু বিশেষভাবে উল্লেখ করব।

 দর্শনের ভাষায় "কারণ ছাড়া কোনো কার্য হয়না"‌ একজন সুস্থ ব্যক্তি মানসিক অসুখে আক্রান্ত হন মূলত দুটি প্রধান কারণে :- প্রথমতঃ জিনগত (Genetic Abnormality) দ্বিতীয়তঃ পারিপার্থিক বা পারিপার্শ্বিক(Surrounding)

● জিনগত কারণে মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়, বংশে যদি কারো মানসিক অসুখ থাকে, বা বংশের কেউ যদি পাগল থাকে, এক্ষেত্রে এক‌ই বংশের ব্যক্তির মধ্যে সেই ব্যাধি সংযোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

● পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ধরনের ছোট, বড় ঘটনা থেকে মানসিক অসুখের সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীকালে বৃহৎ আকার ধারণ করে। যেমনঃ-

৹> গুরুত্বহীন:- একজন ব্যক্তি পারিবারিকভাবে, কর্মক্ষেত্রে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যদি সে গুরুত্ব না পায়, তাহলে তার মনে 'গুরুত্বহীন' ধারণাটা সৃষ্টি হতে থাকে। যে, 'আমার কোন গুরুত্ব নেই' 'আমি একজন গুরুত্বহীন ব্যক্তি' প্রথমত সে মনে মনে আপ্রাণ চেষ্টা করে, গুরুত্ব পাওয়ার, কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্ব না দিলে বা গুরুত্ব না পেলে ধীরে ধীরে সে মানসিক অসুখে আক্রান্ত হয়।

৹> অবহেলা:- এই সমস্যাটি মারাত্মক। সমস্যাটা সকলের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে, যেমন শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বয়স্ক। একটি শিশু যদি অবহেলিত ভাবে বড়ো হয় যেমন অনাথ হয়ে (যেখানে স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতার অভাব থাকে), বা, মা-বাবার নিজেদের সমস্যার জন্য বাচ্চা কে অবহেলা করা, এবং পারিবারিক অশান্তির মধ্যে বাচ্চার বড় হয়ে ওঠা, এতে দুই প্রকার কার্য ঘটে। ১) শিশুটি মানসিক অসুখ আক্রান্ত হয়ে বড় হবে এবং পরবর্তীকালে তার মানসিক বুদ্ধি ঠিকমতো বিকশিত হবে না। আই কিউ কমে যাবে। ২) না হয় শিশুটি বড় হবে হিংস্রভাবে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা জন্ম নেবে। উল্লেখ্য যে একটা শিশুর বড় হওয়ার সাথে সাথে শিশুর বিবেক, মায়া-মমতা, দুঃখ, কষ্ট, আবেগ, হিংসা, স্বার্থপরতা, মনুষত্ব, ইত্যাদি গুণগুলি তারমধ্যে বিকশিত হতে থাকে। কিশোর কিশোরীর ক্ষেত্রেও শিশুর মত একই সমস্যা দেখা দেয়।যেহেতু এই বয়স (11 থেকে 15 বছর) টা পরিপূর্ণ সুন্দর মানুষ হওয়ার সময়, আর এই বয়সে অবহেলা পেলে ভালো মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। তবে ব্যতিক্রম কিছু লক্ষ্য করা যায়, যারা মানসিকভাবে সবকিছুকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। এক‌ই ভাবে যুবক-যুবতী,মধ্যবয়স্ক, বয়স্ক, ব্যক্তিদের কেউ অবহেলা করা হলে বা তাঁরা পারিবারিক, সামাজিক ভাবে অবহেলিত হলে, প্রথমত হতাশায় ভোগেন, তারপর মানসিক অবসাদ থেকে মানসিক রোগী তে পরিণত হন।

৹> বন্দীদশা:- কোন ব্যক্তির যদি বন্দি অবস্থায় দিন কাটে। সে অপরাধের কারণে হোক, বা সামাজিক কারণে হোক, বা আত্ম ভয়ে হোক তাহলে তার মধ্যেও মানসিক অসুখ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

৹> প্রণয়:- প্রণয়ঘটিত কারণে মানসিক অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। কোন ব্যক্তি যদি প্রেমে ব্যর্থ হয় বা তার ভালবাসার মানুষটিকে যদি সে হারায় বা তাকে ছেড়ে চলে যায়, এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ভাবনা কেবলমাত্র এক দিকে ধাবিত হয় তা হলো তাঁর 'ভালোবাসা'। মস্তিষ্কের ভাবনা বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার কারণে ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সেই ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে মানসিক রোগের শিকার হন। এমন কি পরিণতি সম্পূর্ণ পাগল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

৹> একা একা থাকা:- অনেকে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বা পারিবারিক চাপে একা একা থাকেন। কোন মানুষের সাথে মিলামিশা করেন না। ফলে ব্রেইনের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়, এবং বিভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের ক্ষতি জনক 'চিন্তাগ্রস্ত' হয়ে পড়েন। এর ফলে একা একা থাকার জন্য একাকীত্ব বোধ এর জন্ম নেয়, যা থেকে তার মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠা পায় 'আমার কেউ নেই' এই বাক্যটি তার জন্য খুব ক্ষতিকারক। ফলস্বরূপ সে আস্তে আস্তে মানসিক অসুখের শিকার হন।

৹> পরকীয়া ও দাম্পত্য জীবনের অশান্তি:- স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যদি তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশ করে, তাহলে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়, তা থেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এর পরিণতি আত্মহত্যা পর্যন্ত হতে পারে।এছাড়াও অর্থনৈতিক কারণে, পছন্দ-অপছন্দ ও বিভিন্ন কারণে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দেয়। সেখান থেকেও এই রোগের জন্ম নেয়।

৹> সন্তানহীনতা:- দাম্পত্যজীবনে বাচ্চা জন্ম না দিতে পারার কারণে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের জীবন টাকে ব্যর্থ বলে ঘোষণা করে। পরিবারের লোকেরা একে অপরকে দোষারোপ করে, 'বাচ্চা নেই' কথাটি বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেকের সন্তান আবার গর্ভ অবস্থায় নষ্ট হয়ে যায় ও অনেকের সন্তান না ফেরার দেশে চলে যায়। উভয় সকল অবস্থা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর ফলে স্বামী স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনেরা বিশেষ করে স্ত্রীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানসিকভাবে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন।

৹> ব্যর্থতা:- মানুষ বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হয়। উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি না পাওয়া বা বেকার অবস্থায় থাকা, এছাড়াও যে কোনো কাজে উপযুক্ত পরিশ্রম করে বারবার ব্যর্থ হয়ে সেই পরিশ্রমকে আর না ধরে রেখে, ফলাফল ভালো না হওয়ার কারণে ব্যক্তিটি মানসিক অসুখ এর শিকার হয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের দুঃখজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সাক্ষী থাকা, প্রচণ্ড মানসিক চাপ, ইত্যাদি কারণে মানসিক অসুখ এর শিকার হতে পারে।

     এই অসুখে অতিরিক্ত ওষুধ খেলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দৈহিক গঠনের ও দেহের কিছু ত্রুটি ও সমস্যার জন্য বিষণ্নতা বা মানসিক অসুখ আসে। দীর্ঘ সময় শারীরিক যেকোনো রোগ গ্রস্থ থাকলে যেমন Chronic disease (chronic bronchitis,chronic diarrhoea,chronic dyspepsia,chronic eczema etc) any Acute disease, diabetes, Heart disease, hart attack, influenza. এছাড়াও অত্যাধিক নেশাদ্রব্য পান ও পুষ্টির সমস্যা(Nutritional problem) থেকে এই রোগ হতে পারে।Depression যেমন port Manteauterm, Schizophrenia তা নয়। স্কিজৎস এবং ফ্রেনোস দুটি শব্দ একসঙ্গে যোগ করে তৈরি হয়েছে স্কিজোফ্রেনিয়া(schizophrenia) স্কিজৎস কথার অর্থ ভাঙ্গা এবং ফ্রেনোস এর অর্থ মন। অর্থাৎ "ভাঙ্গা মন"।সেই কারণে বহু বিজ্ঞ মানুষেরা একে Splitemind ও বলে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। Scientist Biolar এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। স্কিজোফ্রেনিয়া কে অনেকে একাধিক অসুখের সমন্বয় বলেন।

●লক্ষণ :-

  1. রোগীর কোনো কিছুই বা কাউকে ভালো লাগছে না। একা একা থাকতে ইচ্ছা যাচ্ছে। মন খারাপ, খেতে, কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। 'আমার দ্বারা কিছুই হবে না' অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

  2. স্বাভাবিক মানুষ যখন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার কিছু আচার-আচরণ গত ব্যবহারিক ভারসাম্যহীন লক্ষ্য করা যায়। রোগী ভাবতে থাকে তার পিছনে একটি বিরাট অদৃশ্য শক্তি আছে, যার দ্বারা সে পরিচালিত হচ্ছে, বা তার মনের ভাবনাগুলি তার কানে কানে সেই অদৃশ্য শক্তি বলছে।সে সত্যি করে অকল্পনীয় ভাবনা নিজে চিন্তা করে আর সে কল্পনা করে যে এই ভাবনা গুলি তার কানে কানে অদৃশ্য শক্তি বলছে - ফলে অদৃশ্য শক্তি কে সে কাল্পনিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে, সে, বাস্তব জগত থেকে অবাস্তব কাল্পনিক জগতে চলে যায় এবং সে পুরোপুরি বিশ্বাস করে নেয় যে তার চিন্তাভাবনা এবং সে নিজে এক অদৃশ্য শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। একে 'Made feelings' বলে।

  3. রোগী হঠাৎ তার পরিবারের লোকজন ও বাইরের মানুষদের সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। কারণ তার মনে হয় বাড়ির লোকজন ও বাইরের মানুষ তাকে নিয়েই সব সময় আলোচনা করছে, এবং তারা তার ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করছে। একে হ্যালুসিনেশন বলে।এবং এ ব্যাপারে সে (রোগী) সকলকে বলতে শুরু করে, যারা তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে, রোগীর মতের এর সাথে একমত হয়, তাদেরকে সে আপন ভাবে। আর যারা শ্রবণ করে, বিশ্বাস না করে অমূলক বলে, তাদের কে সে শত্রুদের তালিকাভুক্ত করে দেয়।

4)রোগী ভাবতে থাকে তাকে, কেউ একজন বা অনেকজন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করছে। এবং রোগী সেই ব্যক্তিদেরকে খুঁজে বেড়াতে থাকে। অহেতু তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা যায়। আবার রোগী ভাবতে থাকে যে সে যা ভাবছে তা বাইরের লোক টের পেয়ে যাচ্ছে। এই কারণে সে সব সময় দরজা জানলা বন্ধ করে, বা লোকালয়ের অন্তরালে থাকতে পছন্দ করে।

  1. তবুও ডিপ্রেশনের রোগী বাস্তবের মধ্যেই থাকেন। কিন্তু স্কিজোফ্রেনিয়া রোগী মানসিকভাবে বাস্তবে থাকেন না, স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যাদের insight থাকে না, তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। এঁরা ওষুধ একেবারেই খেতে চান না। কারণ তারা মনে করেন তাঁদের কোন রোগ নেই। অনেক সময় অশ্রাব্য বাক্যলাপ, আচার-আচরণে অস্বাভাবিকতা, উগ্রতা, নিজের মনে বিড়বিড় করে কথা বলা, নিজের মনে মনে হাঁসা, গরমে চাদর গায়ে দিয়া, আবার লেপ বা কম্বল গায়ে দিয়া, নোংরা খাদ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি। সাইকোটিক ডিসঅর্ডার হলে অর্থাৎ বাস্তব সম্পর্কে মূল্যায়ন অত্যন্ত খারাপ। বাস্তব থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজের কল্পনার জগতে চলে গেলে insight থাকেনা। বোধশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। আবার ডিপ্রেশনেও এ ধরনের লক্ষণ অনেক সময় দেখা যায়, তখন তাদের insight চলে যায়। তখন তারাও চিকিৎসা করাতে চান না।
    6)প্যারেনয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির কথা আগেই উল্লেখ করেছি অর্থাৎ যাদের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করে রোগের লক্ষণ ধরা যায় না। কিছু কিছু মানুষ, বা ঘটনার প্রতি অমূলক সন্দেহ, অকারনে ভয় পাওয়া, ইত্যাদি এইসব লক্ষণ দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ সময় এই লক্ষণগুলি ও থাকেনা। এই ধরনের রোগীদের লক্ষণ পাওয়া খুবই কষ্টকর।

7)জেনেটিক থিওরি অনুসারে যদি রোগটি বংশগত হয়। তবে সে ক্ষেত্রে সেই পরিবারের ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের শরীরে Dopamine নামে এক বিশেষ কেমিক্যাল আছে এটা বেড়ে যাওয়ার ফলে স্কিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। এই রোগে ডিল্যুশন ও হ্যালুসিনেশনের ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে অন্যকে খুন করার মানসিকতা, হঠাৎ কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলা, আত্মহত্যার ইচ্ছা বেশী থাকে, উল্লেখযোগ্য ডিপ্রেশনের রোগীরও আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে, তবে তা ধীরগতিতে পরিকল্পনামাফিক এগোয়। যদি তার ইচ্ছার কথা জানা যায়, তাহলে আত্মহত্যার ইচ্ছা রোধ করা সম্ভব। কিন্তু স্কিজোফ্রেনিয়া এর ক্ষেত্রে হঠাৎ করে এই ধরনের সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে, সেই কারণে এই রোগটি খুবই জটিল।

●প্রতিরোধ ও নিরাময়।

মানসিক রোগ একেবারে প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব নয়। প্রথমতঃ প্রচন্ড সর্তকতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। রোগের প্রারম্ভিক মুহূর্তে সচেতন থাকতে হবে। যে সমস্ত কারণে মানসিক রোগ হয় তা থেকে সাবধান থাকা। 

একা একা না থাকা, যেকোনো বিষয় নিয়ে অযথা বেশি চিন্তা না করা, বিনা কারণে বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা, অযথা ফালতু ঝামেলাতে না জড়ানো, অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য পরিহার করা, প্রত্যহ কায়িক পরিশ্রম করতে হবে,বা নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে হবে, কম করে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আধঘণ্টা করে মোট এক ঘন্টা হাঁটতে হবে এতে শরীরে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধতে পারেনা। প্রত্যহ নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, এক্সারসাইজ, মেডিটেশন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে বেশি বেশি কথাবার্তা বলতে হবে। এবং আড্ডা দিতে হবে, বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা সে কাছে হোক বা দূরে, ইত্যাদি বিষয় গুলির উপর সচেতন থাকতে হবে বা বিষয়গুলি গুরুত্ব দিতে হবে।

    এই অসুখের রোগীর পরিবারিক বা কাছের মানুষের সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। স্কিজোফ্রেনিয়া সিম্পটম তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রোধ করা যায়।Duration of untreated periode. মানসিক রোগের মেডিসিন সেবন না করার প্রবণতা বেশি থাকে, মেডিসিন অফ করলে রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে। বংশগত রোগ হলে চিকিৎসা তে ভালো ফল পাওয়া যায় না। মানসিক বড় ধরনের আঘাত প্রাপ্ত ও নেশাগ্রস্থদের স্কিজোফ্রেনিয়া হলে চিকিৎসায় বিশেষ লাভ হয় না। সাধারণত মানসিক রোগীর দুই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়,পজিটিভ ও নেগেটিভ, পজেটিভ লক্ষণ অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রাগ, সন্দেহ, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ কিছু কান্ড ঘটানোর প্রবণতা, বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা তে ভালো ফল হয়। কিন্তু যাদের নেগেটিভ লক্ষণ দেখা যায়, যেমন- মনমরা হয়ে থাকা, চুপচাপ, নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখা, বা এড়িয়ে চলা, স্নান, খাওয়া ঠিকমতো না করা, গুছিয়ে না চলা, তাঁদের চিকিৎসাতে ফল ভাল হয় না। 

   সর্বশেষে বলি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে। ও মানসিক রোগীকে নিজেকেই নিরাময় হওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে। এবং এ কাজে তাঁকে (রোগী)পাশ থেকে আন্তরিক ভাবে সাহায্য করতে হবে, তার পরিবারের লোকজন দেরকে, বা নিকটস্থ কাউকে যারা সর্বক্ষণ রোগীর ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে সমস্ত খাদ্য ডিপ্রেশনের কারণে চিকিৎসকরা রোগীকে পরিহার করতে বলেন সেই সমস্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এবং ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ধ্যান করতে হবে।  ঠিকঠাক ঘুমাতে হবে, ওষুধের মাধ্যমে হোক বা প্রাকৃতিক উপায়ে হোক, জীবনধারা ঠিক রাখা, Cognitive behaviour therapy. ইত্যাদির উপর সচেতন থাকতে হবে।

পরিশেষে বলি, চেষ্টা করলে সফল হওয়া যায়। "যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ"।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...