গোরক্ষনাথ নাথ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান গুরু। ঐতিহাসিক ব্যক্তি হয়েও তিনি ভক্তের চোখে প্রথমে ‘কিংবদন্তি পুরুষে’ এবং পরে সাধারণের চোখে একজন ‘দেব পুরুষে’ পরিণত হন। গুরুবাদী নাথধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু ছিলেন মৎস্যেন্দ্রনাথ। তিনি সাত শতকে, মতান্তরে নয় শতকে জন্মগ্রহণ করেন; তাঁর জন্মস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ। গোরক্ষনাথ তাঁর সাক্ষাৎ শিষ্য ছিলেন; তাঁরই চেষ্টায় নাথ ধর্মমত দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে এবং বঙ্গদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের নানা প্রদেশে, এমনকি নেপাল ও সিকিমে প্রচার লাভ করে। এজন্য গোরক্ষপন্থীরা তাঁকেই নাথধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করে।
অনেকে মনে করেন, গোরক্ষনাথের জন্মভূমি ছিল পূর্ববঙ্গে। তাঁর শিষ্য ছিলেন হাড়িপা ও ময়নামতী; ময়নামতীর পুত্র গোপীচন্দ্র ছিলেন হাড়িপার শিষ্য। মৎস্যেন্দ্রনাথ ও গোরক্ষনাথকে কেন্দ্র করে ‘গোরক্ষ-বিজয়’ এবং হাড়িপা-ময়নামতী-গোপীচন্দ্রকে কেন্দ্র করে ‘মানিকচন্দ্র রাজার গান’ বা ‘গোপীচন্দ্রের গান’ নামে লিখিত ও মৌখিক ধারার একাধিক বাংলা কাব্য পাওয়া যায়। ষোল শতকের কবি শেখ ফয়জুল্লাহ ‘গোরক্ষ-বিজয়’ নামে প্রথম একখানি কাব্য রচনা করেন। এতে নাথগুরুর মাহাত্ম্য ও নাথ ধর্মমতের মহত্ত্ব প্রকাশ বিধৃত হয়েছে। আদি গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ শিব কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে কদলীর ‘স্ত্রী-রাজ্যে’ নারী সংসর্গে এসে ধর্মকর্ম বিসর্জন দেন। শিষ্য গোরক্ষনাথ যোগ-সাধনাবলে বহু কষ্টে গুরুকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
নাথধর্ম ছিল নিষ্কাম কায়া-সাধনার ধর্ম।। গোরক্ষ-বিজয় কাব্যে তাঁর বিজয় অর্থাৎ চারিত্র্যিক মাহাত্ম্যের কথা প্রচার করা হয়েছে। বাংলা কাব্য ছাড়া সংস্কৃত ভাষায় গোরক্ষ-সংহিতা ও গোরক্ষ-সিদ্ধান্ত নামে দুখানি গ্রন্থ আছে। প্রাচীন ও মধ্য যুগে গোরক্ষনাথ যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন, বাংলাদেশের ও ভারতের নানা স্থানে অসংখ্য মঠ ও মন্দিরের অস্তিত্ব থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। গোরক্ষনাথের মঠ-মন্দির ও পূজারী মোহন্ত-যোগীর অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান। রাজশাহীর ‘যোগীর ঘোপা’, বগুড়ার ‘যোগীর ভবন’, রংপুরের ‘গোরক্ষ মন্ডপ’, দিনাজপুরের ‘গোরকুই’ (
গোরক্ষকূপ), দমদমের ‘গোরক্ষ বাসুলী’ প্রভৃতি স্থানে গোরক্ষনাথের পূজার প্রচলন ছিল। রাজশাহীর যোগীর ঘোপা (
গোফা)-র একটি কক্ষে শিবলিঙ্গ ও ত্রিশূল আছে। শিবের অঙ্গ থেকে গোরক্ষনাথের জন্ম বলে শিবলিঙ্গের মাধ্যমে গোরক্ষপূজা হয়ে থাকে।
যোগীর ধ্যানের স্থানকে ‘গোফা’ বলে। বগুড়ার যোগীর ভবনের চারটি মন্দিরের মধ্যে একটি গোরক্ষনাথের বলে মনে করা হয়। দিনাজপুরের গোরক্ষকূপে এক চূড়াবিশিষ্ট তিনটি মন্দিরের একটি গোরক্ষনাথের মন্দির; এর অন্ধকার কক্ষে শিবলিঙ্গ ও কালীমূর্তি সংরক্ষিত আছে। দমদমের গোরক্ষ বাসুলীর তিনটি মন্দিরের মধ্যে গোরক্ষনাথের মন্দিরে গোরক্ষ কর্তৃক প্রজ্বলিত ধুনি আজও সংরক্ষিত আছে। ধর্মভীরু ভক্তের চোখে ঐতিহাসিক গোরক্ষনাথ এভাবে পৌরাণিক গোরক্ষনাথে পরিণত হয়েছেন।
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit