একবার এক বনের ধারে ছিলো বড় এক জুতো। জুতোটি এতো বড় যে ভেতরে এক মহিলা তার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করতো।
কিন্তু মহিলার এতো বেশি ছেলেমেয়ে ছিলো যে সে তাদের নামই ভুলে যেতো! কাকে কখন কী নামে যে ডাকবে এ নিয়েই ঝামেলা হয়ে যায়।
তবে মহিলা তার সব ছেলেমেয়েকে ভালোবাসে, আর তাদের কীভাবে খুশি রাখা যায় সারাক্ষণ এ চিন্তা করে। ছেলেমেয়ারাও তাদের মা’কে অনেক ভালোবাসে ও সব কাজে সহযোগিতা করে।
সবচেয়ে বড় ছেলে ব্রায়ান বন থেকে গাছের ডালপালা ও পাতা জোগাড় করে দেয়। পিটার সেগুলো টুকরো টুকরো করে কাটে।
মার্ক কাজ করে বাগানের মালি হিসেবে। বাগানের ঘাস কাটা, শাকসবজি ও চারা গাছের যত্ন নেওয়া তার কাজ। লিজা গরুর দেখভাল করে আর জেনি অন্য ছোট বাচ্চাদের পড়তে শেখায়।
মহিলা কিন্তু আগে জুতোয় বাস করতো না। সে তার স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতো বনের ওপাশে একটা সুন্দর বাড়িতে। তার স্বামী ছিলো কাঠুরে। বনের একপাশে একটা দূর্গের মধ্যে ভয়ংকর এক দৈত্য থাকতো।
একদিন দৈত্য তাদের বাড়ি আক্রমণ করলো। সবকিছু পায়ে পিষে দিলো, সামনে যা পেলো তা-ই ধ্বংস করে দিলো। আর যাওয়ার সময় কাঠুরেকে হাতের তালুর মধ্যে তুলে নিয়ে গেলো। মহিলা বাড়ি এসে দেখলো সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে, তার স্বামী নেই, শিশুরা কাঁদছে।
রাত নেমে এসেছে। মহিলা ও তার ছেলেমেয়েরা কাঠুরের খোঁজে বনে বেরিয়ে গেলো।
খুঁজতে খুঁজতে তারা চলে এলো বড় আকারের এ জুতোটির কাছে। ছেলেমেয়েরা চারদিকে তাদের বাবাকে খুঁজলো, কিন্তু কোথাও পেলো না। কাঁদতে কাঁদতে যতবারই ডাকে কোন উত্তর আসে না।
জুতোটি দেখে মহিলা ভাবলো, নতুন বাড়ি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তারা এর মধ্যেই বসবাস করতে পারে। ইতোমধ্যে এমন বড় আর কিম্ভূত জুতো পেয়ে ছেলেমেয়েরা খেলা শুরু করে দিয়েছে।
পিটার জুতোটির ওপর একটা ছাদ বানিয়ে দিলো, ব্রায়ান বানালো দরজা। লিজা ও জেনি তৈরি করলো দুটো জানালা। এভাবে পুরো জুতোটা একটা চমৎকার ঘর হয়ে গেলো। তারা এর মধ্যে সুখে দিন কাটাতে লাগলো।
অনেক বছর কেটে গেছে। মহিলা তার স্বামীর কথা ভুলে গেলো না। তার এগারো ছেলেও এ কথা ভেবে মন খারাপ করে। একদিন পিটার সিদ্ধান্ত নিলো তার অন্যান্য ভাইদের নিয়ে দৈত্যের দূর্গে যাবে। সেখানে আটকে পড়া তাদের বাবা কাঠুরেকে মুক্ত করে আনবে। কিন্তু মহিলা জানতো, দৈত্য অনেক শক্তিশালী। তাই সে ছেলেদের যেতে নিষেধ করে।
কিন্তু ভাইয়েরা যাবেই যাবে। তারা লোহা পিটিয়ে ধারালো তলোয়ার বানালো, বর্ম বানালো। আর বানালো তীক্ষ্ণ বর্শা। এবার তারা দৈত্যের দূর্গ আক্রমণ করতে প্রস্তুত।
পরদিন তারা ঠিক ঠিক পৌঁছে গেলো জঙ্গলের ভেতর ওই দূর্গের কাছে। প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা ঢুকে গেলো ভেতরে। সেখানে তারা এক বুড়োর দেখা পেলো। বুড়ো খুব ভালো মানুষ। সে সব কিছু শুনে দুঃখ প্রকাশ করলো আর জানালো, কাঠুরে যেখানে বন্দি আছে সে অনেক ভয়ংকর জায়গা। একটা ড্রাগন সারাক্ষণ তাকে পাহারা দিয়ে আছে।
তারপর ছেলেরা আক্রমণ করলো ড্রাগনকে। ড্রাগনকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেললো। ইতোমধ্যে দূর্গের মধ্যে দৈত্যের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ভেঙ্গে সে দেখলো তার একটা জুতো নেই।
আরেকটি জুতো খুঁজতে খুঁজতে দৈত্য চলে এলো বনের এপাশে। পেছন পেছন এগারো ভাইও চলে এসেছে। দৈত্য এসে দেখলো তার জুতোটা পড়ে আছে এখানে, যেখানে মহিলা ও তার ছেলেমেয়েরা বসবাস করে। দৈত্য যেইনা জুতোতে পা দিতে যাবে, তখনই এগারো ভাই মিলে দৈত্যের বুকে মারলো তীক্ষ্ণ বর্শা। বর্শার আঘাতে দৈত্য গেলো মরে।
আর দৈত্যের মৃত্যুর পরই কাঠুরে ভয়ংকর দূর্গ থেকে মুক্তি পেলো। তারপর সে তার স্ত্রী ও সব ছেলেমেয়েকে নিয়ে জুতোর ঘর ছেড়ে গেলো।
তারা বনের অন্য দিকে বানালো নতুন এক বাড়ি, আর সুখে বসবাস করতে লাগলো।
জোসেফ মার্টিন ক্রনহিম (১৮১০-১৮৯৬) একজন জার্মান লিথোগ্রাফার ও কাঠ খোদাইকারী শিল্পী। তিনি শিশুদের বই অলঙ্করণ করতেন। তার লেখা ও আঁকা ছবিতেই ১৮৭৫ সালে ‘দ্যা লিটন ওল্ড ওমেন হো লিভড ইন অ্যা শু’ শিরোনামে এ বইটি প্রকাশিত হয়।