রাখাইনে পুড়ছে বাড়িঘর

in news •  7 years ago 

দমন-পীড়নের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি জন তিন দিনেই বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

মিয়ানমারে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও।

গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে সীমান্তে ঠাঁই নিয়েছে; এলাকা ছাড়ছে রাখাইনরাও।

সহিংসতার মধ্যে গুলির জখম ও আগুনের ক্ষত নিয়ে অনেকে বাংলাদেশে এসে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উপগ্রহ চিত্র দেখে রাখাইন প্রদেশে পোড়ার ঘরের চিহ্ন দেখার কথা জানাল।

এইচআরডাব্লিওর এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, নতুন উপগ্রহ চিত্র খুবই উদ্বেগের এবং রাখাইন প্রদেশে যা হচ্ছে, তা থামাতে জাতিসংঘ ও দাতা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নেওয়ার দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, গত ২৫ অগাস্ট দুপুরে জে দি পেইন ও কোয়ে তান কুক এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২৮ অগাস্ট মংডু শহর এবং মংডুর বিভিন্ন গ্রামে আরও আটটি এলাকায়ও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
উপগ্রহ চিত্রে পাওয়া ঘটনাস্থল এবং গণমাধ্যমে আসা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার মিল পেয়েছে এইচআরডাব্লিও।

রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের পক্ষে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলা মোকাবেলাকে যুক্তি দেখাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। তবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নির্বিচারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলছেন।

রবার্টসন বলেন, “বিদ্রোহীদের উপর সব দায় চাপিয়ে মিয়ানমার সরকার নির্যাতনের পথ থেকে সরে আসতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত এড়াতে পারে না।”

মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে দেশটির সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রেখেছে এইচআরডাব্লিও।

দমন-পীড়নের মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় না দিলে তা তাদের আরও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

কয়েক দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তবে এর মধ্যেও মানবিক কারণে গত বছরের সহিংসতার সময় অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়া হয়। এবারও সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেই বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করেছেন।

ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৫ অগাস্ট সহিংসতা শুরুর পর তিন দিনেই ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সীমান্তে এই শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারতে সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকার কথাও জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা মিয়ানমারের এই মুসলিম নাগরিকদের জন্য এনজিও ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহায়তায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে ইউএনএইচসিআর।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তার প্রশংসাও করেছে জাতিসংঘ সংস্থাটি। বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন স্বাধীন কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তাতে ঢাকার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, মিয়ানমার সরকার সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাও প্রত্যাশা করেন মাহমুদ আলী।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে সীমান্তে যৌথভাবে কাজ করতে ইতোমধ্যে মিয়ানমারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

এলিস ওয়েলস জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করে এক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে ইউরোপে বসবাসরত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জনগোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

দি ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল ও রোহিঙ্গা কমিউনিটি আয়ারল্যান্ড বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে।

সংগঠন দুটি রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের হাত থেকে রক্ষায় মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আসিয়ান জোট এবং বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!