আদালত হৃদয়হীন এক পশুর ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। পৃথিবীতে হাজারো রকমের পশু আছে। কিন্তু আজকাল মানুষরুপী কিছু পশু বেশি বেশি দেখা যায়। যারা সমাজে মানুষেরই মত বসবাস করে। কিন্তু সমাজে একের পর এক বিশৃংখলা লাগিয়ে রাখে, এই মানুষগুলোর কারনে আমাদের সুন্দর এই পৃথিবীটা আজ ভালো মানুষের জন্য বসবাসের অনুপোযুগী হয়ে উঠছে। আমরা সাধারনত বুঝি- প্রান থাকলে প্রাণী হওয়া যায় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না। একটু বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে বলা যায়- মানুষ হতে গেলে মন, জ্ঞান, মনুষ্যত্ব, বিবেক, বিবেচনা করার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োজন। আর এই বিষয় গুলো যার মধ্যে না থাকে সে মানুষ হয়েও বিবেক, মনুষ্যত্ব হীন বর্বর পশু হয়ে যায়। তাই আমি মনে করি মানুষ থেকে যেমন পশুতে পরিণত হওয়া জায়। তেমনি মানুষ থেকেও আবার মহামানবে পরিণত হওয়া যায়।
মানূষ হয়েও যার শরীরে হৃদয় বলতে কিছুই ছিলনা, এমন এক পশুর কুমিল্লার আদালতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই পশুটির মামলা পরিচালনা করার জন্যেও তার কোন আপনজন ছুটে যায়নি। বরংচ রায়ের পর মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন।
ঘটনার বিস্তারিত----
নাছরুল হাছান স্বপন। শারীরিক প্রতিবন্ধ, উচ্চতা- সাড়ে ৩ ফুট। তার বাড়ি- কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। নতুন বিয়ে করে এবং বউ কয়েক মাসের অন্তঃস্বত্তা, নতুন সংসার ও প্রথম সন্তান আগমনের আশায় কঠোর পরিশ্রম শুরু করে স্বপন। বাড়ির অদূরে ঔষধ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু মানুষের সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়না! স্বপনের ক্ষেত্রেও এর বিপরিদ কিছু হয়নি, মানুষরুপী এক শুকুনের চোখ পড়ে স্বপনের ব্যবসার উপর।
ঘটনার দিন---
২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বপন বাড়িতে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা গলায় ছুরিকাঘাত করে আহত করে। এসময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরদিন ৬ অক্টোবর ২০০৯ নিহত স্বপনের পিতা আবদুল জলিল সরকার বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে দেবিদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যার পর ঘাতকরা আত্মগোপন করে। হত্যার সময় স্বপনের লুটে নেয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ৬ দিন পর পুলিশ ঘাতকদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন দেবিদ্বার থানার সাবেক এসআই ও বর্তমান ময়মেনসিং রেঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক শাহ কামাল আকন্দ (পিপিএম)।
পুলিশের অভিযান ও ঘাতক আটক---
স্বপনের লুট হওয়া মোবাইল সূত্র ধরে ঘটনার পর থেকে থানার মহিলা কনষ্টেবল নুরজাহান আক্তার নুপুর কৌশলে হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তির সাথে প্রেমের অভিনয় করে এবং তাকে অনেকটা ঘায়েল করে ফেলেন। ২০০৯ সালের ৬অক্টোবর সোমবার মধ্য রাত থেকে দেবিদ্বার থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ কামাল আখন্দ পিপিএম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে অভিযানে বের হন। ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দুপুরে থানার মহিলা কনষ্টেবল নুরজাহান আক্তার নুপুর তার মোবাইল ফোনে কৌশলে প্রেমের অভিনয় করে দুপুর ১২ টারদিকে রাউজান থানার কুন্ডেশ্বেরী এলাকায় ডেকে এনে হুমায়ুন কবিরকে এবং তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ডবলমুরিং থানার ঈদগাহ এলাকা থেকে আড়াইটায় অপর ভাই আঃ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে বাহির হয়ে আসে ঘাতকের পরিচয়। সে আর কেউ নয়, আটক হুমায়ুন কবির ও আঃ কাদের এর ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম। পরে উভয়ের স্বীকারোক্তি মোতাবেক দেবিদ্বার উপজেলার কালিকাপুর বাসষ্টেশন এলকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক শফিককে গ্রেফতার করেন।
ঘাতকের স্বীকারোক্তি--
ঘাতক শফিক জানায়, ৫ অক্টোবর রাতে লক্ষীপুর গ্রামের আঃ জলিল সরকারে পুত্র শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যবসায়ী নাছরুল হাসান স্বপন এর নিকট ৫হাজার টাকা ধার চায়। কিন্তু স্বপন টাকা ধার দিতে রাজি হয়নি। টাকা ধার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ির অদূরে লক্ষীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে উৎপেতে থাকে শফিক। রাতে স্বপন বাড়ি ফেরার পথে পেছন থেকে এক হাতে মুখ চেপে ধরে এবং অন্য হাতে ছুরি দিয়ে তাকে জবাই করে পকেটে থাকা দু’টি মোবাইল ফোন সেট লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
হত্যার পর ঘাতক শফিক দৌড়ে বাড়ী গিয়ে গোপনে ঘরে প্রবেশ করার সময় তার ভাই আঃ কাদেরের সামনে পড়ে যায়। ভাই তার গায়ে রক্ত কেন জানতে চাইলে পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করে ওই হত্যাকান্ডের কথা প্রকাশ করে। হত্যাকান্ডের বিষয়ে এলাকায় পুলিশি তৎপরতা শুরু হলে পরদিন সে বাড়ি থেকে চট্রগ্রামে চলে যায়। চট্টগ্রামে যাবার পথে ময়নামতি বাস ষ্টেশনে মাত্র ৫শ’ টাকায় লুটকরে নেয়া দু’টি মোবাইল সেটের একটি মোবাইল ফোন সেট বিক্রি করে দেয়। ওই দিন ট্রাক যোগে চট্টগ্রামে গিয়ে রাউজান থানা এলাকায় তার সৎ ভাই হুমায়ুন কবিরের বাসায় উঠে। সেখানে গিয়েও সে স্বপন হত্যার কথা স্বীকার করে ভাইয়ের নিকট আশ্রয় চায় ও অপর একটি মোবাইল সেট বিক্রি করে দেবার অনুরোধ করলেও তার ভাই তাতে রাজি হয়নি। পরদিন সে পূনরায় বাড়ি চলে আসে।
বিচার কার্য শুরু---
হত্যা মামলায় শফিককে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ৮ নভেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে ১৫ অক্টোবর শফিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছিল। বিগত ৯ বছর ধরে আলোচিত নাছরুল হাছান স্বপন হত্যা মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তি তর্ক শেষে গত সোমবার (২৭ আগষ্ট, ২০১৮) বিকালে কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান অভিযুক্ত শফিককে ফাঁসির রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. মো. মুজিবুল হক। তিনি জানান, ২৯ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ২১ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার আদালত।
thanks for update news, good job @journalist-akter
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
welcome
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit