World News Bengali ' ইরান চুক্তি নিয়ে ইউরোপ ও চীন-রাশিয়ার লাভ-ক্ষতি'

in news •  7 years ago 

rashedkhan11.png

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান ইস্যুতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে লাভ-ক্ষতির বড় হিসাব-নিকাশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে বহুজাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেওয়ায় ইরানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চীন ও রাশিয়ার কী সুবিধা হবে, পশ্চিমা গণমাধ্যমে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

সিএনএন তাদের এক বিশ্লেষণে বলছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্রেমলিন খুশিই হবে। যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের জোট যদি ভাঙা যায়, তা হবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতিরই জয়। মস্কো তখন যুক্তরাষ্ট্রকে অনির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, বিশেষ করে তুরস্ক, সিরিয়া, লিবিয়ায় আরও ইতিবাচক নীতি গ্রহণ করতে পারবে।

এ তো গেল রাশিয়ার লাভের কথা। চীন কেন জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) বা ‘ইরান চুক্তি’ টিকিয়ে রাখার পক্ষে? এর পেছনে রয়েছে দেশটির বেশ কিছু স্বার্থ।

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতে পশ্চিমা বিশ্ব বহু বছর ধরে দেশটির ওপর বাণিজ্য অবরোধ দিয়ে রাখে। এতে কাজ না হওয়ায় ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। কথা ছিল, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হবে। সেই থেকে ওই চুক্তি মোতাবেক হচ্ছিল সবকিছু। জেসিপিওএ বলে পরিচিত ওই সমঝোতাকে ‘ইরান ডিল’ বলে। ছয়টি দেশ ইরানের সঙ্গে ওই চুক্তি করে। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন।

বর্তমানে ইরানের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে চীনের। ইরানের গ্যাস ক্ষেত্র ও সাউথ পার্স ওয়েল কোম্পানিতে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ৩০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে। এখন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ভয়ে যদি ইউরোপের টোটাল বা সিমেন্সের মতো কোম্পানিগুলো ইরানের প্রতিযোগিতার বাজার থেকে সরে আসে, তবে চীনা কোম্পানিগুলোর বিশাল সুবিধা।

বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ইরানকে তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের ব্যবসা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য ইরান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের উদ্যোগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআইকে বলা হচ্ছে এশীয় বিশ্বায়নের কর্মসূচি। সবচেয়ে বেশি দেশ, বিপুল বিনিয়োগ এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাকে জড়িত করার এ পরিকল্পনা নিয়ে এটিই একুশ শতাব্দীর বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প।

ইরানকে চীনের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হচ্ছে সেখানে দেশটির অনেক বিনিয়োগ করা রয়েছে। দেশটির সরকার-নিয়ন্ত্রিত সিআইটিআইসি গ্রুপ দেশটিকে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আরও দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইরানের মানুষের কাছে ভালোভাবে গৃহীত হয়নি। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ ঘটনাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের কথার বরখেলাপ’ বলেছেন। সিএনএন তাদের বিশ্লেষণে বলছে, রুহানি দেশটির জনগণকে খুশি রাখতে তাদের সামনে ‘জেসিপিওএ’ বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে জনগণকে বলা হয়েছে, তাদের দেশ আবার সবার জন্য উন্মুক্ত হবে আরও বেশি বিনিয়োগ আসবে এবং বাণিজ্য বাড়বে। এ চুক্তি তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির কাছেও বিক্রি করতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে ইরানের এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডের বিদ্রোহ ঠেকিয়েছেন।

ইরানিদের কাছে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়াটা হতাশার। এখন ইরানের মধ্যকার ভারসাম্যে পরিবর্তন হচ্ছে। কট্টরপন্থীরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করা কখনোই ঠিক ছিল না। তেহরানে জুম্মার নামাজের ইমাম হজতোলসেলম কাজেম সেদিঘি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, জেসিপিওএ নিয়ে খামেনির অনুমান সঠিক ছিল। এ চুক্তি এখন ভেঙে ফেলার মতো অবস্থা হবে।

খামেনির এক পরামর্শক বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি এ চুক্তি না মানে, তবে আমরাও এটা আর মানব না।’

চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন তুলতে পারে। সিএনএন অবশ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব বিশ্বমঞ্চে এখনই বদল করে ফেলা যাবে না। কিন্তু কিছুটা বিকল্প তৈরি হচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ক্ষেত্রে ইউরোপ নিজেকে কোণঠাসা মনে করছে। যে রকম রাশিয়া ও চীনের ক্ষেত্রে তারা যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, সে অবস্থা এখনো হয়েছে। এখন ইরান এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াবে। রাশিয়ার কাছ থেকে নেবে জ্বালানি সহযোগিতা।

অন্যদিকে, ইরান যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির গতি বাড়ায়, তবে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ইরানকে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার দিকে ঠেলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোসহ চীন ও রাশিয়া কতটুকু ইরানের পক্ষে দাঁড়াতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব প্রতিষ্ঠান ইরানে কার্যক্রম চালাবে, সেগুলো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটাতে পারবে ইউরোপ?

ইউরোপের শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ইরানের পরমাণু চুক্তি রাখার পক্ষে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এ চুক্তি রাখার পক্ষে বাধা না দিতে বলা হয়েছে। তারা বলছে, এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোকে নিয়ে তারা কাজ করে যাবে।

ইরান এখন বলছে, চুক্তিই যদি না মানা হয়, তবে তারা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি আবার শুরু করবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, তিনি চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে তাঁর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কোনো সমঝোতায় আসার জন্য কথা বলতে বলেছেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!