বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৮৮ লাখ ডলার অনুদান দিচ্ছে কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (কিউএফএফডি) ও কাতার চ্যারিটির (কিউসি)। ২১ মে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি সই করেছে সংস্থা দুটি।
এ চুক্তির আওতায় ইউএনএইচসিআর বেশ কিছু জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কিত একটি প্রকল্প রয়েছে। একই সঙ্গে শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিভিন্ন সেবা প্রদানের বিষয়টিও রয়েছে।
এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে কিউএফএফডি ও কিউসি জানায়, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষত ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে কিউএফএফডি ও কিউসি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাতার সরকারের দেওয়া মানবিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এই দুই সংস্থা আগের মতোই কাজ করে যাবে।
এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে দ্য পেনিনসুলা জানায়, ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে হওয়া চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে বর্ষা মৌসুমের আগেই ৫২ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে। এসব ঘরে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থী আশ্রয় পাবে। এ ছাড়া আরও ৩৭ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আসা হবে আশ্রয়ণের আওতায়। একই সঙ্গে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শিবিরের রাস্তাঘাট ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংস্কার করা হবে।
কিউএফএফডির উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মিসফের হামাদ আল শাহওয়ানি রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে অনুদানের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মানবেতর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এই যন্ত্রণা লাঘবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা সবার দায়িত্ব। শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে সার্বিক সহযোগিতা দিতে কিউএফএফডি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চুক্তি সইয়ের পর দেওয়া বক্তব্যে ইউএনএইচসিআরের আঞ্চলিক প্রতিনিধি খালেদ খলিফা বলেন, কিউএফএফডি ও কিউসির এই সময়োপযোগী সহায়তার জন্য তাদের স্বাগত জানাই। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দিন দিন আরও বাজে দিকে যাচ্ছে। বিশেষত সামনের বর্ষা মৌসুমে শরণার্থীদের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই দুই সংস্থার দেওয়া অনুদান এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাসে বড় অবদান রাখবে।
একই প্রসঙ্গে কিউসির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী আল ঘামদি বলেন, যে নারী-পুরুষ ও শিশু তাদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছে, একটি সহনশীল পরিবেশ তৈরি করে তাদের জীবন ধারণের পথকে সহজ করার জন্য এই উদ্যোগ খুবই জরুরি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শরণার্থীদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে আমরা আগ্রহী।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এইড অ্যান্ড ট্রেড সম্মেলনের এক ফাঁকে হওয়া বৈঠক থেকে কাতারের এই দুই সংস্থার সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের এই সমন্বিত উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সময় সহিংসতার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য সহায়তামূলক প্রকল্প গ্রহণ ও তাতে কিউএফএফডি ও কিউসির যৌথ অর্থায়নের বিষয়ে সমঝোতা হয়।