মেয়েটির বয়স মাত্র ১০ বছর। নাম সাথি আক্তার। ছোট্ট এই মেয়ের দেহের নানা স্থান ক্ষতবিক্ষত। মুখমণ্ডল রক্তাক্ত। পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে গত বুধবার রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় এই গৃহকর্মী শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা রহমত আলী পেশায় দিনমজুর।
আজ রোববার ঢাকার আদালতে সাথিকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গৃহকর্ত্রী কাজল রেখা ওরফে জুঁই (২৭)। এখন তিনি কারাগারে আছেন। রেখার বাড়ি যশোরে। এ ঘটনায় রেখার মা ও তাঁর আত্মীয় শরিফুলকে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এঁরাও এখন কারাগারে আছেন।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, তিন মাস আগে কাজল রেখার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে সাথি। কাজে সামান্য ভুলত্রুটি পেলে হাতের কাছে যা পেতেন, তা–ই দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করতেন আসামি। বুধবার আসামি রেখা নৃশংসভাবে সাথিকে হত্যা করেছেন। ওসি জানান, কাজল রেখা পেশায় একজন ডিজে (ডিস্ক জকি)।
সাথির বাবা রহমত আলী মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার শিশু সাথি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। সাথি তার বাবাকে বলেছিল, সে ঈদের সময় বাড়িতে আসবে। এর দুই দিন পর বুধবার তাকে হত্যা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ রেখার জবানবন্দির বক্তব্য প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতের খাবারে ভাতের মধ্যে চুল থাকা নিয়ে সাথিকে মারধর করেন রেখা। প্রথমে সাথিকে চড়থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে সাথির মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেন। এরপর সাথির মৃত্যু হয়।
কাজল রেখা ছয় মাস আগে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় ছয়তলার ওই বাসা ভাড়া নেন। বাসায় তিনি একাই থাকতেন। তিন মাস আগে সাথিকে তিনি তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন। কথা ছিল, মাসে সাথির পরিবারকে দুই হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু সাথির বাবা রহমত আলী বলছেন, কাজল রেখা এখন পর্যন্ত তাঁদের একটি টাকাও দেননি।
পুলিশ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলছেন, সাথি খুন হওয়ার পর তাঁর লাশ সেদিন বাসায় রেখে দেন আসামি রেখা। পরে তিনি তাঁর আত্মীয় শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিও দক্ষিণখানে বসবাস করেন। শরিফুল পরদিন বৃহস্পতিবার নতুন লাগেজ কিনে রেখার বাসায় এসে সাথির লাশ ভরে ফেলে। সেদিন সকালে সকালে শরিফুল যখন লাশ ভর্তি লাগেজ নিয়ে আবদুল্লাহপুর যাচ্ছিলেন, তখন চেকপোস্টে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলছেন, শরিফুল ধরা পড়ার পর গৃহকর্মী সাথি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। পরে অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে কাজল রেখাকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে তোলা হয়।
গত বুধবার সাথি খুন হলেও তাঁর বাবা রহমত আলী বিষয়টি জানতে পারেন গত শুক্রবার। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ময়মনসিংহ থেকে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাথির লাশ শনাক্ত করেন। সেদিনই তিনি বাদী হয়ে গৃহকর্ত্রী কাজল রেখা, তাঁর মা খোদেজা বেগম ও রেখার আত্মীয় শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
সাথির মায়ের নাম নাজমা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সাথি তাকে বলেছিল, ঈদের সময় বাড়ি আসবে।
সাথির একটি বোন আছে। তার নাম শান্তি আক্তার। বয়স সাত বছর। আর ভাই হুসাইন। বয়স চার বছর।
সাথির বাবা রহমত আলী বলেন, ছোটবেলায় সাথি প্রায় অসুস্থ থাকত। চিকিৎসা করাতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। রহমত আলী বললেন, সাথি খুব ভালো ছিল। তার মেয়েকে লেখাপড়া করানোর কথা বলে কাজে নেন কাজল রেখা।
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
http://blues.nhl.com/
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit