মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর রাত্রিকালিন বিশেষ ইন্টারনেট অফার ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্যাকেজ বন্ধ করার বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ব্লু হোয়েল গেম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা একটি রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার এ নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
আদেশে বলা হয়, রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিশেষ অফার বন্ধ রাখতে হবে। আইনজীবীরা জানান, প্যাকেজ বন্ধ রাখার মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর হতে পারে বলে
সোমবার আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী হুমায়ুন কবীর পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
সোমবার শুনানিতে হুমায়ুন কবীর আদালতকে বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিশেষ প্যাকেজ বন্ধ করেছে চীন। বাংলাদেশেও সেটি করা যায় কি না সে বিষয়ে আদালতের কাছে জানতে চান তিনি। এরপর আদালত বিশেষ প্যাকেজ বন্ধের নির্দেশনা দেন।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, চীন, ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচিত গেম ব্লু হোয়েল সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশেও। এছাড়া ইন্টারনেট আসক্তি, ফেসবুক আসক্তি এবং বিভিন্ন গেমস নিয়ে তরুণ-তরুণীরা সময় পার করে থাকে।
সোস্যাল মেডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক ব্যবহারের এই সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। তারা বিভিন্ন রকম প্যাকেজ দেয় রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত। এ সময় অনেক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ার নামে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। আপনারা এই সময়ের মধ্যে ফেকবুক (সোস্যাল মিডিয়া) বন্ধ করে দেন।
আদালত বলেন, আমরা আপাতত প্যাকেজ বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে পারি। ফেসবুক বন্ধের বিষয়টি পরে দেখা যাবে। এ সময় আদালত অভিভাবকদের উদ্দেশ করে বলেন, শুধু সোস্যাল মিডিয়ার দোষ দিলে হবে না, অভিভাবকদেরও দ্বায়িত্ব আছে। এ সময় খোঁজখবর রাখতে হবে ছেলে মেয়েরা কী করছে।
হুমায়ুন কবীর পল্লব জানান, বিশেষ প্যাকেজ বন্ধ ছাড়াও ছয়মাসের জন্য গেম লিঙ্ক বন্ধ রাখা, যারা এসব গেমসে আসক্ত তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করা এবং আসক্তদের কাউন্সিলিং করতে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে রোববার তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কায়সার, অ্যাডভোকেট নুর আলম সিদ্দিকী ও সুব্রত বর্ধনের পক্ষে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেছিলেন অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর পল্লব।
রুলে ডেথ গেম হিসেবে পরিচিত ব্লু হোয়েল গেমসহ আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী এ জাতীয় সব গেমের গেটওয়ের লিঙ্ক ও অ্যাপলিকেশন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, বিপদজনক এসব গেম এবং সাইবারক্রাইম থেকে জনগণকে রক্ষায় কেন গাইডলাইন করার নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক,বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, গ্রামীণ ফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক, টেলিটক, সিটিসেল কর্তৃপক্ষকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।