সপ্তাহখানেক আগে বিবিসির করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূত্র ধরে একজন কুখ্যাত মানব-পাচারকারী গ্রেফতার হন।
ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড বারজান মাজিদকে ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু বিবিসি খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত তার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।
তাকে খুঁজে বের করার সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন বিবিসি সাংবাদিক সু মিচেল।
আমি ইরাকের একটি শপিং মলে বসে আছি, ইউরোপের দুর্ধর্ষ এক মানব-পাচারকারীর মুখোমুখি।
তার নাম বারজান মাজিদ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছে তার নাম।
ওইদিন শপিং মলে এবং পরের দিন তার অফিসে কথা হয় আমাদের। কথোপকথনে বারজান মাজিদ বলেন, কত জন অভিবাসীকে ইংলিশ চ্যানেল পার করেছেন তা তিনি নিজেও জানেন না।
“এক হাজারও হতে পারে আবার ১০ হাজারও হতে পারে। জানা নেই, হিসাব রাখিনি।”
কয়েক মাস আগেও তার সাক্ষাৎ পাওয়াটা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিল। সেটা বাস্তবে রূপ পেয়েছে অবশেষে।
আমার সঙ্গে ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা রব লরি। মি. লরি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন।
দু’জনে মিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম এই লোকটার খোঁজে, যার আরেক নাম স্করপিয়ন।
কয়েক বছর ধরে তিনি ও তার গ্যাং বা দল, ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে নৌকায় ও লরিতে করে মানব পাচার বাণিজ্যের বেশির ভাগ অংশই নিয়ন্ত্রণ করছেন।
মানব পাচারের প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৭০ জন অভিবাসী নৌকায় পাড়ি দিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত মাসে ফ্রান্সের উপকূলে পাঁচ জন মারা যান, যাদের মধ্যে একটি সাত বছরের মেয়েও ছিল।
যাত্রাপথ হিসেবে এটা ভয়ংকর, কিন্তু পাচারকারীদের জন্য খুবই লাভজনক।
নৌকা পারাপারের জন্য জনপ্রতি ছয় হাজার পাউন্ড (প্রায় নয় লাখ টাকা) পর্যন্ত নেন তারা। গত বছর ২০২৩ সালে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ এই পথে পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে বোঝাই যায় যে লাভের অংকটা কত বড়।
স্করপিয়নের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহটা তৈরি হয় ফ্রান্সের একটা অভিবাসী ক্যাম্পে একটা ছোট্ট মেয়ের সাথে পরিচয় হওয়ার পর।
রাবারের ডিঙ্গিতে করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে মরতে বসেছিল সে।
ডিঙ্গিটা সাগরের উপযোগী নয় – বেলজিয়াম থেকে সস্তায় সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসটা কেনা হয়েছিল। কোনও লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই সেই ডিঙ্গিতে সওয়ার হয়েছিল ১৯ জন মানুষ।