ঈদের আগে জোড়াতালির মেরামত
• কাজের চেয়ে টাকা খরচই ‘মূল উদ্দেশ্য’
• বর্ষায় সংস্কারকাজ টেকসই হয় না
• তবু বর্ষা এলে সংস্কার শুরু হয়
প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে জোড়াতালির মেরামত শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টি আর মেরামতকাজ—এ দুইয়ের প্রতিযোগিতায় মেরামতকাজ জয়ী হলে প্রায় সোয়া কোটি ঈদযাত্রী ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। আর বৃষ্টি জয়ী হলে বরাবরের মতো লেজেগোবরে হবে এবারের ঈদযাত্রাও।
বর্ষায় সংস্কারকাজ টেকসই হয় না। তবু বর্ষা এলে এ দেশে রাস্তাঘাট সংস্কার, মেরামত শুরু হয়। এবার এর সঙ্গে মিলেছে অর্থবছরের শেষ হওয়ার ক্ষণ, যখন যেনতেনভাবে বরাদ্দ অর্থ শেষ করার চেষ্টা থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঈদ। ফলে জনদুর্ভোগ পুঁজি করে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের আগে ইট, বালু, পাথর নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। কাজের চেয়ে এখানে টাকা খরচই মুখ্য বলে অভিযোগ আছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব বলছে, ৮০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৯২০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং তিন হাজার কিলোমিটার জেলা সড়ক বেহাল অবস্থায় আছে। এর মধ্যে রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের অবস্থা বেশি খারাপ। ঈদ সামনে রেখে এ পর্যন্ত কত কিলোমিটার সড়ক, মহাসড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়নি।
অন্য বছরের সঙ্গে তুলনা করে সওজ বলছে, এবার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ২০১৬ সালে ৩৭ শতাংশ সড়ক, মহাসড়ক বেহাল ছিল। মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা। এবার বেহাল ২৫ শতাংশ সড়ক, মহাসড়ক। কিন্তু এবার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্ক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিন-চার দিন ধরে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি মহাসড়ক ঘুরে দেখেছেন। মহাসড়কগুলো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ। এর মধ্যে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অর্ধেকই ভাঙাচোরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার খুবই খারাপ। ঢাকা-সিলেট পথেও স্থানে স্থানে বড় গর্ত। একমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ভালো আছে। তবে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা এবং ফেনীতে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের কাছে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।
সওজের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) সার্কেল প্রতিবছর গাড়িতে যন্ত্র বসিয়ে সড়কের বাস্তব অবস্থা নিরূপণ করে। এই যন্ত্রের প্রতিবেদন ধরে কত টাকা ব্যয় করলে সড়ক ঠিক হয়ে যাবে, তার হিসাব বের করা হয়। সার্বিক হিসাব নিয়ে প্রতিবছর এইচডিএম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে গত ১৭ মে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে জাতীয় মহাসড়ক আছে ৩ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার। এর ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ (প্রায় ৮০০ কিলোমিটার) বেহাল। এর মধ্যে রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের অবস্থা বেশি খারাপ।
সারা দেশে সওজের অধীন সড়ক আছে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার। এইচডিএম পুরোটাই সমীক্ষা করেছে। তবে আঞ্চলিক ও জেলা সড়কের পুরোটা না করে ১৪ হাজার ২১৫ কিলোমিটার সমীক্ষা করেছে তারা। এই সমীক্ষা বলছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৪ শতাংশ বেহাল; কিলোমিটারের হিসাবে তা প্রায় ৯২০ কিলোমিটার। আর জেলা সড়কের ২৯ শতাংশ বেহাল, যা প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের ২৫ শতাংশই ভাঙাচোরা।
সওজের বাইরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন সড়ক আছে ৩ লাখ কিলোমিটারের বেশি, যার সবই গ্রামীণ সড়ক।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রকাশিত সমীক্ষায় সওজ বলেছিল, তিন ধরনের সড়কের ৩৭ শতাংশ বেহাল। এই বিপুল পরিমাণ সড়ক ঠিক করতে তাৎক্ষণিকভাবে ৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা প্রয়োজন। গত বছর সড়ক নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো সমীক্ষা প্রকাশ হয়নি। এবারের সমীক্ষা বলছে ২৫ শতাংশ সড়ক বেহাল। কিন্তু মেরামতে তাৎক্ষণিকভাবে ১১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা দরকার বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, উন্নত প্রযুক্তি এবং কাজের মানোন্নয়নের কারণে মেরামতে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তি ও কাজের মানোন্নয়নের পরও সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি আর অতিরিক্ত মালবাহী যানবাহন সড়কের ক্ষতি করছে। মেরামতের পরই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ঠিকাদারের কারণে সঠিক কাজ না হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঠিকাদার রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক সেটা বড় নয়। তাঁর কাছ থেকে কাজ আদায় করা হলো মূল কথা। সওজ সেটা নিশ্চিত করছে। প্রতিবছর ঈদ বা বর্ষার আগে মেরামতের তোড়জোড় কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা বছরই কাজ হয়। তবে ঈদের আগে গণমাধ্যম বেশি সোচ্চার হয়। তখন কাজ একটু বেশি চোখে পড়ে।’
এইচডিএম তাৎক্ষণিক ব্যয়ের পাশাপাশি পরবর্তী পাঁচ বছরে কী পরিমাণ টাকা ব্যয় করলে সড়ক ঠিক রাখা যাবে, তারও হিসাব দিয়ে থাকে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সড়ক মেরামতে ২১ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছিল তারা। কিন্তু এবারের প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকার চাহিদার কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের এইচডিএম তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, পরবর্তী পাঁচ বছরে মেরামতে আট হাজার কোটি টাকা খরচ করলে সড়ক-মহাসড়ক লম্বা সময় ভালো থাকবে। পরে দেখা গেছে, ওই পাঁচ বছরে মেরামত খাতে খরচ করা হয় প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সড়ক ভালো থাকেনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এইচডিএমের সমীক্ষা বৈজ্ঞানিক। কিন্তু আমাদের দেশে এই হিসাব দিয়ে সঠিক ফল পাওয়া যাবে না। কারণ, এখানে মেরামত হয় জোড়াতালি দিয়ে। আর বেশির ভাগ কাজ করেন রাজনৈতিক ঠিকাদারেরা। কিন্তু এইচডিএম পদ্ধতিতে টানা পাঁচ বছর সড়ক মেরামত করলে তা আর খারাপ থাকার কথা নয়।’
Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
http://www.gosexpod.com/categories/indexcat.php?category=sex-toys
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit