মিতু ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করল, ‘মিস ইউ, হাব্বি। মিস ইউ, বরটুস আমার।’ জিসান ও মিতুর সংসার দু’বছরের। মিতু অনেকদিন থেকেই চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাদের এখন পর্যন্ত কোনো বাচ্চা-কাচ্চাও নেই। মিতু বেবি নিতে চায় আরও পরে। জিসান একটি প্রাইভেট কোম্পানির সেলস ম্যানেজার। টাকা আছে কিন্তু অসম্ভব খাটনি। ট্যুরের চাকরি। দেখা যায়, মাসে চব্বিশদিনই তাকে ঢাকার বাইরে থাকতে হয়। মিতুর শ্বশুর-শাশুড়িও থাকেন গ্রামের বাড়িতে। তাই তার সময়গুলো একাকী কাটে।
প্রকাশ না করলেও ফেসবুকে মিতুর ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুরা তার ওপর ভীষণ খ্যাপা। ‘এত সুখ আমি সইব কেমন করে’ টাইপের একজন মানুষ ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা মানেই নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত! সেই সুখী মানুষের আনন্দ উদযাপনের ফটো-স্ট্যাটাস জলোচ্ছ্বাসের মতো এসে ফেসবুকের ওয়াল ভরিয়ে ফেলে। বন্ধুরা ভেবে পায় না, এই দুঃখদগ্ধ পৃথিবীতে সুখরাশি এত ফুলেফেঁপে ওঠে কীভাবে! বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সুখ মোটাতাজাকরণ করেও তো এত সুখী হওয়া সম্ভব নয়।
মিতুর মতো দেখতে সুন্দর মেয়েরা তাদের আনন্দ-বেদনা-অস্থিরতা আশেপাশে ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে সত্যিই সে সুখে আছে নাকি দুঃখে আছে, সেটি জানার সাধ্য তার শরীর ঘেঁষে থাকা মানুষটিরও নেই। সবসময় উচ্ছ্বসিত মনে হলেও আসলে মিতু ভয়াবহ দুখী। সে যেন তার অনুভূতি প্রকাশক অংশের মুখে ‘ইনভার্টার’ লাগিয়ে রেখেছে! তাই তার অন্তরের অবস্থা অন্তর্দহ ইঞ্জিনের মতো হলেও ‘ইনভার্টার’ উল্টে দিচ্ছে বহিঃচিত্র। সবাই তাকে নরম মনের চরম সুখী মানুষ ভাবছে।
আনন্দ করার অনাগ্রহ দিনেদিনে মিতুর মধ্যে আনন্দভীতি এনে দিয়েছে। এক কথায়, ‘চিয়ারোফোবিয়া’ বলা যেতে পারে। কেমন যেন আলগাভাবে-হালকাভাবে বেঁচে আছে সে! জীবনের সৌন্দর্যগুলো তার হৃদয়ের গহীনে পৌঁছায় না, আগেই পিছলে যায়! অসহ্য অস্থিরতা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পারদের মতো ছুটোছুটি করছে তার সত্তা। ভালো থাকার অভিনয় তার আর ভালো লাগছে না। যারা মিথ্যার সঙ্গী হয়ে জীবন যাপন করে, তাদের মনে হয় একটু বেশিই ক্যালরি খরচ হয়; তা না হলে মিতুর সারাটা ক্ষণ দুর্বল-দুর্বল লাগে কেন!
মিতু অবশ্য ঘরের মধ্যে নিজের আসল অনুভূতিগুলো লুকায় না। তার এই অতৃপ্তির কথা জিসান ও দেবর নিশান খুব ভালোভাবেই জানে। জিসান অনেকভাবেই স্ত্রীর মন জয়ের চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়েরা অতিরিক্ত জেদী হলে তাদের আহত হৃদয়ের ক্ষত কখনোই শুকায় না। মিতু জেদী ও সাহসী মেয়ে। সাহসী মেয়েদের চোখে কখনো পানি দেখা যায় না; অথচ ক্ষণেক্ষণে মাথাচারা দিয়ে ওঠা যন্ত্রণায় হৃদয় প্লাবিত হয়।
জিসান যখনই ভালোবাসার আলিঙ্গনে মিতুকে বাঁধতে চায়, সে তেতিয়ে ওঠে, ‘আমি কিন্তু সুইটহার্ট টাইপের নরম-লাজুক মেয়ে না। এসব আমার ভালো লাগে না।’ বিরক্তি নিয়ে জিসান ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কথায় কথায় তাকে অপমান-ভর্ৎসনাও হজম করতে হয়। হতে পরে, এই ঝাল ঝেড়ে মিতু নিজের আত্মাকে তৃপ্ত করতে চায়! এবার খুলনা যাওয়ার আগে জিসান মিতুকে নিয়ে শর্মা খেতে গেল। জিসানের শর্মা খাওয়া দেখে মিতু কী বিশ্রীভাবেই না বলল, ‘এমন করে খাচ্ছো কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে শর্মাটাকে একেবারে রেপ করছ!’ জিসান শর্মা শেষ করতে পারল না।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!