হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন?আশা করি ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি পোস্ট লেখা শুরু করছি।আজকে আমি রসগোল্লা নিয়ে আলোচনা করবো।
রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার মধ্যে বহু বছর ধরে এক বিতর্ক চলমান, যা শুধু মিষ্টির প্রতি ভালোবাসাকেই নয়, বরং এই দুই রাজ্যের সাংস্কৃতিক গর্বকেও তুলে ধরে। দুই পক্ষই এই সুস্বাদু মিষ্টির জন্মস্থান হিসেবে নিজ নিজ ঐতিহ্যের ওপর জোর দিয়ে আসছে।
১. পশ্চিমবঙ্গের দাবি: নবীনচন্দ্র দাস ও রসগোল্লার সাফল্যগাথা
পশ্চিমবঙ্গে রসগোল্লার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নবীনচন্দ্র দাসের নাম। ১৮৬৮ সালে কলকাতার বাগবাজারে তার মিষ্টির দোকানে প্রথমবারের মতো রসগোল্লা তৈরি হয়েছিল বলে বলা হয়। "রসগোল্লার জনক" হিসেবে খ্যাত নবীনচন্দ্র দাস, নরম ছানার বল চিনির মিষ্টি সিরায় ডুবিয়ে এক নতুন ধরনের মিষ্টির সূচনা করেন। তার পুত্র কন্দললাল দাস এই মিষ্টির খ্যাতি দেশ এবং দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দেন, যা বাংলার মিষ্টি শিল্পকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছিল। নবীনচন্দ্র দাসের নিরীক্ষার ফলে সঠিক পরিমাণে উপকরণ মিশ্রণ এবং সঠিক তাপমাত্রায় মিষ্টি রান্নার কৌশল রসগোল্লার পরিচিত নরম ও রসালো গঠন তৈরি করে, যা ক্রমে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে।
২. ওড়িশার মতবাদ: পুরীর মন্দির সংস্কৃতি ও রসগোল্লা
ওড়িশার দাবী অনুযায়ী, রসগোল্লার উৎপত্তি তাদের জগন্নাথ মন্দিরের সাথে যুক্ত একটি প্রাচীন প্রথার অংশ। তাদের মতে, মন্দিরের পুরোহিতরা ছানা থেকে তৈরি "খিরমোহনা" নামক মিষ্টি দেবতা জগন্নাথকে নিবেদন করতেন। এই মিষ্টির ঐতিহ্যকে ওড়িশার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো। ওড়িশার সংস্কৃতিতে, এই মিষ্টি মন্দিরের প্রসাদের অংশ ছিল এবং সেই প্রেক্ষাপটে রসগোল্লা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।
৩. আইনি ও ঐতিহ্যিক সংঘাত
রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যে চলমান বিতর্ক ২০১৫ সালে আরও জটিল আকার ধারণ করে, যখন ওড়িশা সরকার এই মিষ্টিকে তাদের জিআই (Geographical Indication) ট্যাগ হিসেবে দাবি করার উদ্যোগ নেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং ২০১৭ সালে "বেঙ্গলি রসগোল্লা" নামে জিআই ট্যাগ অর্জন করে। এটি রসগোল্লার উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। যদিও এই স্বীকৃতি পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বড় অর্জন, তবে ওড়িশার পক্ষ থেকে তাদের দাবী অব্যাহত রয়েছে।
৪. রসগোল্লার বিস্তৃত জনপ্রিয়তা
রসগোল্লা এখন শুধু পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি পুরো ভারতবর্ষ এবং বিশ্বের বিভিন্ন কোণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নরম, সুমিষ্ট এবং রসালো এই মিষ্টি প্রতিটি মিষ্টিপ্রেমীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। আজকের দিনে বিভিন্ন ধরণের রসগোল্লা যেমন—"গুড়ের রসগোল্লা", "নলেন গুড়ের রসগোল্লা" ইত্যাদি নানা বৈচিত্র্যে পাওয়া যায়।
রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে দুই রাজ্যের দাবি যতই ভিন্ন হোক না কেন, এটি এখন শুধুমাত্র একটি মিষ্টি নয়, বরং বাংলার এবং ওড়িশার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আবেগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।