২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মিয়ানমারের জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৩ ভাগ মুসলমান। এ হিসাবে মিয়ানমারে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২২ লাখ। অল্প কিছু বাদে এদের অধিকাংশের বসবাস রাখাইন বা আরাকান রাজ্যে, যারা রোহিঙ্গা মুসলমান হিসেবে পরিচিত।
এই আদমশুমারিতে দেশের বাইরে শরণার্থী হিসেবে বসবাসকারী প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে হিসাবে আনা হয়নি। তাদেরসহ হিসাব করা হলে মিয়ানমারে মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩৩ লাখ।
২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রাখাইনের জনসংখ্যা ৩১ লাখ ৮৮ হাজার। রাখাইন, কামান, ম্রোং জাতির পর চতুর্থ স্থানে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দেখানো হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা মুসলমানরাই ছিল একসময়ে রাখাইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী। উইকিপিডিয়াতে রাখাইন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশের বাইরে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের হিসাবে আনা হলে রাখাইনে তাদের সংখ্যা হবে শতকরা ৬২ দশমিক ৭ ভাগ। তাদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূল করে ২০১৪ সালেই তাদের অবস্থান চতুর্থ স্থানে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০১৬ সালের নির্মূল অভিযানে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। অন্যান্য দেশেও পালিয়ে যায় অনেকে। গত ২৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের হিসাবে পাঁচ লাখ এক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অন্য যারা রাখাইনে রয়েছে, তারাও সবাই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়ার পথে; যেহেতু এখনো নির্মূল অভিযান চলছে। সুতরাং বর্তমানে রাখাইন সম্পর্ণরূপে মুসলিমশূন্য হওয়ার পথে।
দেশে ও দেশের বাইরে মিলিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংখ্যা ২৭ লাখ ধরা হয়। রোহিঙ্গা ছাড়াও মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলে কমপক্ষে ছয় লাখ অরোহিঙ্গা মুসলমান বসবাসের তথ্য পাওয়া যায়। তবে মিয়ানমারের সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা চার লাখ।
ইউরোপ প্রবাসী মিয়ানমারের নাগরিক নে সান লুইন লিখেছেন রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যা তাদের ধর্মীয় পরিচয়। মিয়ানমার থেকে সব মুসলমানকে মুছে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে সেনাবাহিনীর। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ২০ বছরের মধ্যে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গামুক্ত করার পর তারা অন্য কোনো সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের পেছনে লাগবে।
এই একই ধরনের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। এ মর্মে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। ১৯৩০ এর দশকে গড়ে ওঠা বর্মি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের স্লোগান ছিল বার্মা ফর বার্মিজ। বার্মা বর্মিদের জন্য। এখন এই আন্দোলনকে আরো উগ্র এবং চূড়ান্ত বর্ণবাদী পর্যায়ে নিয়ে বলা হচ্ছে বার্মা শুধু বার্মার বৌদ্ধদের জন্য। মুসলমানদের জায়গা হবে না এ দেশে।
গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা গণহত্যা বিচারে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে বার্মা বা মিয়ানমারের পাঁচজন অরোহিঙ্গা মুসলিম সাক্ষ্য দিতে এসেও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চৌ উইন লন্ডনভিত্তিক বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক। তার বাড়ি ইয়াঙ্গুন শহরতলীতে। তিনি গণ-আদালতে বলেছেন ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মিয়ানমারের মুসলমানেরা মিয়ানমার ছেড়ে চলে যায়। রোহিঙ্গা ছাড়া যেসব মুসলমান মিয়ানমারে রয়েছে, তাদেরও রাষ্ট্রবিহীন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নীতি হলো, বার্মা হলো বুর্মনদের জন্য, অন্য কারো জন্য নয়।
নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী মিয়ানমারে কাউকে নাগরিকত্ব পেতে হলে তাকে প্রমাণ করতে হবে তার পূর্বপুরুষেরা ১৮২৪ সালের আগে মিয়ানমারে বসবাস শুরু করেছেন। নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া বিষয়ে চৌ উইন গত ২০ সেপ্টেম্বর গণ-আদালতে বলেন, এটা কোনোভাবেই যাচাই করা সম্ভব নয়। আবার তারা সময়ে সময়ে সরকারি আদেশে নতুন নতুন কার্ড পদ্ধতি চালু করে আবার তা বিলোপ করে থাকে। যেমন গত বছর থেকে তারা এনভিসি বা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড চালু করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গা বাদেও মিয়ানমারে যারা মুসলমান আছে কৌশলে তাদেরকে রাষ্ট্রবিহীন করা। ২০১৫ সালে তারা হোয়াইট কার্ড চালু করে আবার বিলোপ করে। কারো নাগরিকত্ব বাতিলের আগে তারা একটা অজুহাত তোলে। এরপর তারা তাকে এনভিসি দেবে। এর ফলে আপনা-আপনি নাগরিকত্ব চলে যাবে অনেকের। কারণ, এনভিসির কোনো মেয়াদ থাকবে না।
১৮৫৩ সালের আগ পর্যন্ত মান্দালয় ছিল মিয়ানমারের রাজধানী। মান্দালয়ের তখন নাম ছিল আভা। ব্রিটিশরা আভা থেকে রাজধানী ইয়াঙ্গুনে নিয়ে আসে। মান্দালয় মিয়ানমারের প্রাচীন একটি শহর। ১৭৮৪ সালে বর্মি রাজা ভোদাপায়া আরাকান দখলের পর তিন হাজার ৭০০ মুসলমান আরাকান থেকে নিয়ে এসে রাজধানী আভায় বসবাসের ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য ছিল আরাকানের আদলে বার্মার বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও মুদ্রাব্যবস্থা চালু করা। কারণ আরাকানের চেয়ে তখনো বার্মা অনেক পশ্চাৎপদ ছিল বিভিন্ন দিক দিয়ে। মান্দালয়ে অনেক শিক্ষিত, ধনী, ব্যবসায়ী মুসলমান বসবাস করছেন প্রাচীন কাল থেকে।
তবে সেখানকার মুসলমানেরা অনেক দিন ধরে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মিয়ানমার থেকে আগত সাক্ষীরা কুয়ালালামপুর আদালতে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গা ছাড়াও আদিবাসী মুসলমানেরাও মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার হচ্ছে। এক সময়ে মান্দালয়ে বসবাসকারী তু সামাও ওরফে রাশিদা আবদুল আজিজ গত ২০ সেপ্টেম্বর গণ-আদালতে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করে দেখান মান্দালয়ে ২০০১ সালের ১৬ মে সংঘটিত এক দাঙ্গার পরে সরকার ওই অঞ্চলের ১৪টি মসজিদের মধ্যে ১১টি বন্ধ করে দেয়। এরপর মাত্র চারটি আবার খোলার অনুমতি পেয়েছে। আরেকটি মসজিদকে তারা ভেষজ ওষুধের স্কুলে পরিণত করেছে। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে যেকোনো অজুহাতে মসজিদ দখল করে ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়।
গোটা মিয়ানমার থেকে মুসলমানদের মুছে ফেলার বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে তার অনেক লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান মিন অং ছাতিলাইং। গোটা বর্মি আজ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। রোহিঙ্গাদের প্রতি চলমান পৈশাচিকতা মেনে নিয়েছে এবং সমর্থন করছে তারা। রোহিঙ্গাদের যে প্রক্রিয়ায় সব বর্মির ঘৃণার পাত্রে পরিণত করা হয়েছে। এরপর একই প্রক্রিয়ায় বার্মার অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়কে ঘৃণাবিদ্বেষের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করছেন দেশ-বিদেশের অনেকে।
১ অক্টোবর বার্তা সংস্থা এএফপিতে একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে রাখাইন রাজ্যের বাইরের এলাকার। এ ছবিতে দেখা যায় একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘এই গ্রাম মুসলমানশূন্য এলাকা’।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ মিথ্যাভীতি, আতঙ্ক বর্মিদের মনমগজে প্রবেশ করিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন মহল, সেটা হলো তারা এক দিন গোটা মিয়ানমার দখল করে নেবে। মিয়ানমারের জন্য প্রধান হুমকি তারা।
ইতোমধ্যে খবর বেরিয়েছে রোহিঙ্গা গণহত্যার কারণে ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ অন্যান্য এলাকার মুসলমানদের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ঘর থেকে বের হতে ভীত। বিভিন্ন সময় পরিচালিত গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে মান্দালয়ের অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবার ঘরের চার দিকে উঁচু দেয়াল তুলেছেন। এরই মধ্যে ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়ের মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতা, মসজিদের ইমামদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রতিবাদসহ কোনো কিছু করা যাবে না, খুতবা দেয়া যাবে না, গণমাধ্যমের সাথে কথা বলা যাবে না। এমনকি মানবিক সাহায্যও করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসন ও সু চির দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে তাদের সাবধান করে দেয়া হয়েছে মর্মে খবর বেরিয়েছে।
thanks for your info
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
thanks bro
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
back koro
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
thanks......
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Congratulations @mdfazlulsaif! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
You made your First Vote
Click on any badge to view your own Board of Honor on SteemitBoard.
For more information about SteemitBoard, click here
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit