রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

in romantic •  7 years ago  (edited)

অদ্ভুতুড়ে ছেলেঃ

ধুর!! ফোনটা চার্জ শেষ হওয়ার সময় পেলো না আর!
এখন কিভাবে বাসায় জানাবো?
বেশ বিরক্তির সাথেই নিজের সাথে কথাগুলো বলল নুসাইবা।
রাস্তা খারাপ থাকায় সন্ধ্যা ৭ টার জায়গায় এই রাত ৯ টা বাজে পৌঁছাল।
এদিকটা মফস্বল হলেও রাত ৮ টার পর সাধারণত বেশি মানুষ থাকে না।
নুসাইবা পড়াশোনার জন্য ঢাকায় থাকে,ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে কাল।তাই তো অপেক্ষা না করে নাড়ির টানে ছুটে এসেছে....
এই এলাকাটা নতুন লাগছে নুসাইবার কাছে,কারণ কিছু সমস্যার জন্য আগের এলাকাটা ছেড়ে দিয়েছে।
বাবা বলেছিল বাস থেকে নেমে সোজা রাস্তা ধরে সামনে একটা চায়ের দোকান থাকবে এর বিপরীত পাশে একটা বিল্ডিং আছে ওখানে গিয়ে ফোন দিতে,বাবা নিতে আসবে।
এখন ফোনটাই তো বন্ধ হয়ে গেছে,বাবাকে ফোন দিবে কিভাবে? এদিকে বাবার বলা মত জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষন।চায়ের দোকানে থাকা দুই-একজন লোক বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে।
তাকানোটাই স্বাভাবিক,এত রাতে একা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই ভালো কথা না।
নুসাইবার প্রথমে বিরক্তি লাগলেও,আস্তে আস্তে বিরক্তিটা ভয়ে রুপান্তর হচ্ছে।
একে তো একলা মানুষগুলো তাকিয়ে দেখছে তার উপর অচেনা এলাকা।বাইরে লাগানো বাল্বের আলো আগুনের শিখার মত কমছে-বাড়ছে।
এমন সময় রাস্তায় একটা কুকুর ওর সামনে এসে ঘেউঘেউ করায় ও ভয়ে দু'পা পিছিয়ে যায়।আবার,হঠাৎ করেই কুকুরটা দৌঁড়ে চলে যায়।
নুসাইবা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল,এমনিতেই ও কুকুর ভয় পায়।
-"বাসায় যাবেন না?"
কারো পুরুষকন্ঠ শুনে নুসাইবা চমকে যায়,ভয়ে এবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
ভয়ে পুরো ঘেমে-নেয়ে একাকার,বুকের ধুকপুক শব্দ জোরে জোরে হচ্ছে যে এখনি বুঝি হৃৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসবে।মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারছে না।
-"বলছি,আপনি কি বাসায় যাবেন না? একা এত রাতে এখানে কি করছেন?"
মিহি-মিষ্টি কন্ঠে ছেলেটা বলল।নুসাইবা ভালো করে বিল্ডিং এর বাইরে কম পাওয়ারের বাল্বের আবছা আলোতে দেখল একটা লম্বা-সুন্দর মতন ছেলে,চোখগুলো হালকা নীল,ঠোঁটে মুচকি হাসি।কেমন একটা পবিত্র ভাব।নুসাইবা অবাক হয়ে যায় কোনো ছেলে এত সুন্দর হয়? অল্প হলেও মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে যায় ওর।
এবার ইশারায় কিছুটা রাগ ভাব প্রকাশ করল ছেলেটা।নুসাইবা ভয় পেয়ে গেল
-"পানি....পানি খাবো,আমি"
মুখ ফুটে এতটুক কথাই বলতে পারল ও।ছেলেটা ওর হাতে পানির বোতল দিল।নুসাইবা বোতলটা হাতে নিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে চোখে-মুখে দিল।বোতলটা ফিরিয়ে দিয়ে দেখল ছেলেটা ঠিক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
-"ভালো লাগছে?"
-"জ্বী"
-"এবার বলুন"
-"কি?"
ছেলেটা কিছু না বলে অন্যদিকে ফিরে তাকাল।নুসাইবা ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়,তারপর বলতে লাগল
-"আসলে আমি এলাকায় নতুন,বাবা বাসা চেঞ্জ করেছেন তাই চিনি না"
কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে ওর।ছেলেটা এবারও কিছু বলে না,নুসাইবা ভাবে হয়ত রাগ করেছে ওর ব্যবহারে।এতে ওর দোষ কি যে কেউ ভয়ে পেয়ে যেত,এটা কি উনি বুঝে না?
কিছুক্ষন পিনপতন নীরবতা।নুসাইবা ভাবে এত ভাব কেন ছেলেটার? ও আর আগ বাড়িয়ে কথা বলবে না।
-"দরকার নেই।এখন বাসায় যান...এ জায়গা বেশি ভালো না"
-"জ্বী,বাবা আসবেন নিতে একটুপর"
-"চলুন"
-"কোথায়?"
এবার ছেলেটা কথা না বলে সামনে আগানোর জন্য পা বাড়ায়।
-"আমাকে একা রেখে যাচ্ছেন? আমার এমনিতেও অনেক ভয় লাগছে"
-"তাহলে চলুন,বাসায় দিয়ে আসি আপনাকে"
-"কিন্তু..." ইস্ততত করতে থাকে নুসাইবা,সেটাই স্বাভাবিক।
-"তাহলে থাকেন..."
বলে ছেলেটা সামনে আগায়,নুসাইবা এইজায়গায় আর একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে ব্যাগ হাতে নিয়ে ছেলেটার পিছু পিছু নিল।
ধীরধীর পায়ে হাঁটছে দুজনে।ছেলেটা সামনে নুসাইবা পেছেন।রাস্তায় দুপাশের সারিতে দালানগুলোতে দু'য়েকটা রুমে লাইট জ্বলছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো নিভু নিভু প্রায়।রাস্তার পাড়ে থাকা নেড়ি কুকুরগুলো ঘুমাচ্ছে।আশেপাশে মানুষের ছায়াটুকু দেখা যায় না।
কেউ কোনো কথা বলছে না।নুসাইবা ভাবছে আরেকটু অপেক্ষা করলে ভালো হত।বাবা যদি এসে খুঁজে না পায়? কি হবে তখন? মাও চিন্তা করছে হয়ত।
আবার কিছুক্ষন পর মনে হয়,
ওখানে একা কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা যায়? সামনে আগাতে থাকি যদি বাবার সাথে দেখা হয়? আচ্ছা ছেলেটা ভালো তো? মুখের ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে না।কত চিন্তা-ভাবনা যে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নুসাইবার।ভয়ে দোয়া-কালাম পড়ছে।
ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,ছেলেটা আলতো করে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে ফিরে মুচকি হাসছে,আজব তো ছেলেটা এমন কেনো?
-"ওখানে একলা থাকার চাইতে সামনে আগানো ভালো না?"
-"জ্বী"
-"তাছাড়া এ এলাকা সর্ম্পকে অনেক গুজব রয়েছে,ভৌতিক"
-"কি?" ভয়ে মুখটা পাংশুটে হয়ে যায় নুসাইবার
-"শুনেছি,রাতে ফাঁকা রাস্তায় পায়চারীর শব্দ শোনা যায়,হাসির শব্দ,কান্নার শব্দ...."
-"আপনি খারাপ তো..."
-..........
-"একা ভীতু মেয়ে পেয়ে ভয় দেখানো ঠিক না" কিছুটা নরম গলায় বলল নুসাইবা।
অনেকক্ষন যাবত হ্যান্ডব্যাগ আর কাপড়ের ব্যাগটা ধরতে ধরতে হাতে ব্যাথা হয়ে গেছে...
হঠাৎ করে ছেলেটা থামল,নুসাইবাও থেমে যায়।কি হল? প্রশ্ন ভাসছে ওর চেহারায়।
-"ব্যাগটা রাখুন"
গম্ভীর কন্ঠে বলল,নুসাইবা ভয়ে নিচে ফেলে দিল দুই ব্যাগ,ভদ্রবেশে ছিনতাইকারী না কি ছেলেটা?"
ছেলেটা কিছু না বলে কাপড় থাকা ব্যাগটা হাতে নিল আর ওরদিকে মুচকি হেসে সামনে আগাতে লাগল।নুসাইবা কিছুটা হতবাক,এত অদ্ভুত কেন? মানুষ না কি?"
হ্যান্ডব্যাগটা হাতে নিয়ে ছেলেটার পিছু পিছু এগুতে লাগল।হঠাৎ খেয়াল করল ছেলেটা কালো পাঞ্জাবী পড়া,ফর্সা ছেলেদের কালো পাঞ্জাবীতে মানায় খুব।যতবারই তাকিয়েছে চোখগুলো অনেকটা মায়া মায়া ভাব।মুচকি হাসিটা সুন্দর।
হঠাৎ করে নুসাইবার মনে হয় এগুলা আমি কি ভাবছি? ছিঃ ছিঃ,ছেলেটা বুঝে ফেললে?
ছেলেটা সামনে গিয়ে থেমে যায়,নুসাইবা আনমনে থাকায় ধাক্কা খেতে খেতে বাঁচল।ছেলেটার মতি-গতি কি বুঝতে পারছে না নুসাইবা।আজীব প্রাণী!
ছেলেটা মেয়েটার হাতে ব্যাগটা দিল।
-"সামনের গলিটা দিয়ে যাও"
-"আপনি যাবেন না?"
হুট করেই প্রশ্ন করে নুসাইবা,লজ্জ্বা পেয়ে যায় নিজের এমন প্রশ্নে।
ছেলেটা কিছু বলে না।
-"না মানে,এদিক দিয়ে আমি কোথায় যাবো? আমিতো চিনি না তাই আর কি..."
-"সামনে যেতে থাকেন"
নুসাইবা কি করবে ভাবতে পারে না,ছেলেটা হয়ত ওকে কি না কি ভাবছে....
ছেলেটা আস্তে আস্তে পেছাতে পেছাতে থাকে,আবছা আলোয় মিলিয়ে যাচ্ছে।
নুসাইবা উপায় না পেয়ে আল্লাহের নাম নিয়ে,ব্যাগ হাতে করে গলিতে ঢুকে।একটু সামনে আগাতেই দেখে ওর ছোট ভাই ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ওর দিকে ফেলে,
-"আরে আপু তুই???? বাবা তোর সাথে?"
-"না রে,বাবা কই?"
-"কেন তোরে আনতেই তো গেল"
-"কই? দেখি নাই"
-"একা একা আসলি? রাস্তা চিনলি কেমনে? আর তোর ফোন বন্ধ কেন?"
-"আরে ভাই,এতগুলা প্রশ্নের উত্তর পরে দিবো।আগে বাসায় নিয়ে যা,অনেক ক্লান্ত আমি"
নুসাইবা ওর ভাইয়ের সাথে বাসায় যায়।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়।একটুপরই বাবা আসে।বাবা অবাক হয়ে যায়।
-"তুই একা একা এসেছিস এতদূর?তোরে এতবার ফোন দিছি,বলার জন্য আমার একটু দেরি হবে আসতে।ফোন ধরিস নি,পরে কিছুক্ষনপর ফোন বন্ধ পাই।তারপর বাস স্ট্যান্ডে যেয়ে খুঁজি তোরে..."
নুসাইবা বাবার অস্থিরতা কমাতে সব ঘটনা খুলে বলে,কিছু লুকায় না।বাবা-মা তো খুব অবাক হয়,ভাইয়ের মুখ পুরা হাঁ হয়ে যায়।
-"সেইজন্যই চায়ের দোকানদার বলছিল তুই বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলছিলি,খটকা লেগেছিল লোকটার।পরে ভাবল হয়ত ফোনে কথা বলছিলি।আর যার কথা বললি এমন কোনো ছেলেকে এই এলাকায় এতদিন যাবত থাকছি, কখনো দেখিনি।আর তোকে কেউ চিনেও না"
নুসাইবার কথাগুলো শুনে মাথা ভনভন করতে থাকে,কি হলো ওর সাথে এটা?
ভারি অদ্ভুত তো,ভারি অদ্ভুতুড়ে.....
কথাগুলো মাথায় একটা আরেকটার সাথে ঠোকর খেতে থাকে নুসাইবার।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://chaturbate.com/bon_aventura/