কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে দেওয়ার পর আইপিএলে দল পাবেন কি না, এমন অনিশ্চয়তা যে সাকিব আল হাসানের মধ্যে একেবারে ভর করেনি, সেটি হলফ করে বলা যায় না। শেষ পর্যন্ত আইপিএলে দল ঠিকই পেয়েছেন। কিন্তু নিলামে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে নিয়ে খুব টানাটানি হয়নি। রাজস্থান রয়্যালস কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছিল, সেটি সানরাইজার্স হায়দরাবাদের চেয়ে বেশি নয়। খুব একটা টানাটানি না হওয়ায় সাকিবের দাম ২ কোটি রুপির বেশি হয়নি।
এবার আইপিএলে যে পারফরম্যান্স, হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি তৃপ্তির হাসিতে বলতে পারে, ‘অল্প পয়সায়’ সাকিবকে কিনে বিরাট লাভবান! খাঁটি অলরাউন্ডার তিনিই, যিনি বোলিং করতে পারেন, ব্যাটিংয়ে দলের অন্যতম ভরসা। আবার ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ—এই পুরো প্যাকেজটা হচ্ছেন সাকিব, একের মধ্যে তিন! এই শ্রেণিতে সাকিবের সঙ্গী হবেন বেন স্টোকস, আন্দ্রে রাসেল, হার্দিক পান্ডিয়ারা। কিন্তু এঁদের দামটা দেখুন, স্টোকসকে রাজস্থান কিনেছে সাড়ে ১২ কোটি রুপিতে। রাসেলকে কলকাতা দিচ্ছে সাড়ে ৮ কোটি আর পান্ডিয়া পাচ্ছেন ১১ কোটি রুপি। এই তিনজনের সঙ্গে যদি তুলনা করেন সাকিব সব অলরাউন্ডারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফর্ম করছেন। কখনো স্টোকস-রাসেলদের চেয়েও এগিয়ে থাকছেন।
ব্যাটিংয়ে মনিশ পান্ডে, ইউসুফ পাঠান ও ঋদ্ধিমান সাহা ব্যর্থ হলেই কেন উইলিয়মাসনের সঙ্গে হায়দরাবাদের মিডল অর্ডার সামলানোর বড় দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে সাকিবকে। এখনো একটি ফিফটি পাননি যদিও, তবুও পরিস্থিতি বিবেচনায় সাকিবের ৩০-৩৫ রানই অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্টোকস-রাসেল-পান্ডিয়ার চেয়ে হয়তো বেশি রান করেননি সাকিব। কিন্তু মনে রাখতে হবে সাকিবকে বেশির ভাগ সময়েই ব্যাটিং করতে হচ্ছে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের বোলার-বান্ধব উইকেটে।
এবার আইপিএলে সাকিব সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হচ্ছেন বোলিংয়ের কারণে। এই মৌসুমে হায়দরাবাদের বোলিং যে সবচেয়ে সেরা বলা হচ্ছে, সেটির বড় কৃতিত্ব পাবেন সাকিবই। স্পিনারদের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় পাওয়ার প্লেতে। সাকিবকে আক্রমণে আসতে হচ্ছে এ সময়টাতেই। অধিনায়কের আস্থার যথার্থ প্রতিদানও দিচ্ছেন তিনি। প্রতিপক্ষে টপ অর্ডারে আঘাত হানছেন, কৃপণ বোলিং করছেন। এবার যে ১২ উইকেট পেয়েছেন, চারটিই পেয়েছেন পাওয়ার প্লেতে। পাওয়ার প্লেতে তাঁর ইকোনমি ৭.৮০, ডট বলের শতাংশটা আরও দুর্দান্ত—৪১.৬৬। সাকিবকে একটা বাউন্ডারি মারতে এ সময়ে ব্যাটসম্যানদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৫ বল।
হায়দরাবাদ যে ছয়টি লো স্কোর (১৫০ রানের নিচে) ডিফেন্ড করে জিতেছে, বেশির ভাগ ম্যাচেই বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সাকিব। দুটিতে তো ম্যাচসেরার জোরালো দাবিদারও ছিলেন। কেন তাঁর হাতে পুরস্কার ওঠেনি, সেটি নিয়ে জোর তর্ক হতে পারে। শুধু পারফরম্যান্স দিয়েই নয়, যেহেতু বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে উইলিয়ামসনকে নানাভাবে সহায়তা করছেন।
বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং, দলের থিঙ্ক ট্যাংক—একের ভেতর তিন নয়, সাকিব হচ্ছেন চার! স্টোকস-রাসেলের পারিশ্রমিকের সঙ্গে তুলনা করলে হায়দরাবাদ ‘সস্তা’ই পেয়েছে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো সাকিবকে তাই বলছে, ‘আন্ডাররেটেড’!