ছোটবেলার স্কুল স্মৃতি : "অনিয়মিত শিক্ষার্থী"

in school •  last year 

আমাদের সময়ে যদিও স্কুলে উপস্থিতির জন্য এতটা কড়াকড়ি ছিল না তবুও স্কুল কামাই করলে বেত দিয়ে মারা, কান ধরে দাঁড়ানো, নিল ডাউন প্রভৃতি মজার মজার সব শাস্তির বিধান ছিল । আমি যেহেতু বাবার স্কুলেই পড়েছি তাই কোনোদিনও এসব সাজা লাভ করার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি । তবে, আমার আর সব বন্ধু বান্ধবের কপালে অনুপস্থিতির জন্য এই ধরণের সাজা লেখা ছিল অবশ্যম্ভাবী ।

যেহেতু বাবার স্কুল তাই, আমি মনের সুখে স্কুল কামাই করতাম । আর বাবাও সেই তালে তাল দিতো । প্রায়ই দিন বলতো স্কুলে আজ যেতে হবে না তোমার, স্কুলে ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা হয় । বাড়িতে বসে পড়ো । এই শুনেই মন আমার নেচে উঠতো । বাড়িতেও ওই সময়টা আমি ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা করতাম । প্রায় দিনই স্কুলের বইয়ের মধ্যে হী ম্যান আর চাচা চৌধুরীর কমিক্স রেখে পড়তাম, না হয় ছবি আঁকতাম বা ভিডিও গেম্স্ খেলতাম কম্পিউটার এ ।

তো পরীক্ষার পরে প্রগ্রেস রিপোর্টে উল্লেখ থাকতো বছরভর স্টুডেন্টদের উপস্থিতির হার । আর আমার প্রগ্রেস রিপোর্ট খুলে প্রত্যেকবারই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতো উপস্থিতির ঘরগুলোতে চোখ বুলিয়ে । শিউরে ওঠার মতো উপস্থিতির সংখ্যা -

জানুয়ারি ০, ফেব্রুয়ারি ২, মার্চ ১৩, এপ্রিল ১৬, মে ৩ (গরমের ছুটি থাকতো এ মাসে), জুন ১০, জুলাই ২ (বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাবে কোন আহাম্মক), আগস্ট ১৭, সেপ্টেম্বর ২১, অক্টোবর ১ (পুজোর ছুটি থাকতো এ মাসে). নভেম্বর ১১ (কালীপুজো, দীপাবলী এসব ফেলে স্কুলে যেতে মন চাইতো না, শুধুমাত্র নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এক্সাম শুরু হতো বলে একটানা কিছু উপস্থিতি ছিল) এবং ডিসেম্বর ৫ (ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এক্সাম শেষ হয়ে যেতো, তারপরে আর স্কুলে যেতে বয়েই গেছে আমার) ।

ক্লাস টীচার বলতেন -"তোমার বাবার কারণে তোমায় কিছু বলতেও পারি না, কিন্তু এ কেমন উপস্থিতি ? একজন ভালো স্টুডেন্টের গুণ শুধুমাত্র তার প্রগ্রেস রিপোর্টে মার্ক্স্ দেখে হয় না, উপস্থিতির হারও একটা বড় জিনিস । এখন থেকে চেষ্টা করবে ক্লাসে নিয়মিত হতে ।" শুনে আমি দুলে দুলে ঘাড় নাড়তাম, কিন্তু প্রায় তৎক্ষণাৎ এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিতাম কথাগুলি ।

গ্রামের নিচু স্কুলে পড়ার সময় তো বর্ষাকালে টিফিন পিরিয়ডে বাড়িই চলে আসতুম, আর ফিরে যেতুম না টিফিনের পরে । আমার সহপাঠীরা বাড়ি বয়ে এসে স্কুল ব্যাগ পৌঁছে দিয়ে যেতো । আর উপস্থিতির হারও ছিল একদম নগণ্য । তার ওপর আবার স্কুল শেষ হওয়ার আগেই কত দিন যে বাড়ি চলে আসতাম তার ঠিক নেই । টিচাররাও কেউ কিছু বলতে পারতেন না, কারণ আমার বাবা ছিলেন আবার ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ।

আমাদের সাথে একটা ছেলে পড়তো । পড়াশোনায় একদম যাকে বলে লবডঙ্কা ছিল । কিন্তু, উপস্থিতিতে একদম তাক লেগে যাওয়ার মতো পারমারফ্যান্স। প্রায় ১০০% উপস্থিতির হার ছিল তার । বর্ষাকালে দারুন দুর্যোগের দিনে হয়তো বেশিরভাগ টিচার এবং স্টুডেন্ট হাজির হতে পারেনি, কিন্তু আরিফ ঠিকই হাজির হয়ে যেতো । একবার শুনেছিলাম দারুন ঝড়ের একটা দিনে আমাদের সেকশন এ একটি মাত্র স্টুডেন্ট হাজির ছিল, আর সে হলো আরিফ ।

আমার ছেলে এখন সবে স্কুল জীবনে প্রবেশ করেছে । পড়ে প্লে গ্রূপে । মাত্র ৩ মাস হলো তার স্কুল লাইফ । এর মধ্যে ১ দিন মাত্র অনুপস্থিত ছিল । জ্বর হয়েছিল তার, সে জন্য । তবুও স্কুলে এপ্লিকেশন দেওয়া লেগেছিলো ওই একটি মাত্র দিন অনুপস্থিতির জন্য ।

একাল আর সেকাল । এক আকাশ তফাৎ ।
JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH81biTpCqJKQ7Pf1KQfhazBGmWK7wLSMsqcySSyvv9SQUYzVER88ds7T9uHFDFVyhq97DrdAM5WbaSER96NfzgQsNYcw3gA.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Warning,

This user was downvoted or is blacklisted likely due to farming, phishing, spamming, ID theft, plagiarism, or any other cybercrime operations. Please do your due diligence before interacting with it.

If anyone believes that this is a false flag or a mistake, consider reaching the watchers on Discord.

Thank you,