“দাঁড়কাক একা একা সারারাত জাগে”

in short •  7 years ago 

রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা। রাস্তাঘাট আজ ভেজা, আর বাতাসে সেই ভেজা রাস্তার আশটে গন্ধ নাকে লাগছে। এ ধরনের বৃষ্টি হলে আলী হোসেনের খুব বিরক্ত লাগে। ঘুপটি মেরে বসে থাকতে ইচ্ছে হয় কোথাও। এখন আবার রাত, ঘুমানো কোথায় যাবে এটাও একটা বিশাল ঝামেলা। ভ্যানচালকের রেখে যাওয়া ভ্যান ভিজে গিয়েছে, সুতরাং ঘুমাতে হবে তার নিজের চায়ের দোকানের বেঞ্চে!!!
হঠাৎ রাতে বৃষ্টির এমন আবেগ দেখে বোধ হয় নাইট গার্ডরাও রাতের বেশ্যাদের সাথে আড্ডা জমিয়েছে! শুয়ে শুয়ে সেও তার পুরোনো রেডিও চালু করলো, রবিন্দ্রসঙ্গীত বাজছে বোধ হয়। সে আবার এসব সঙ্গীত শুনে কিছু বুঝে না, তারপর ও ঘুমানোর একটা খোরাক তো লাগবে। চোখ মুদে আসছে ক্রমেই, একটা লাইন এরকম,
"ক্ষূদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়ে, সদাই ভাবনা,
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে সান্তনা
যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে সান্তনা"
অনেকদিন আসিয়াহ বেগম-কে দেখা হয় না। সে যখন ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর কপালে একটা কালো টিপ পড়ে তার দিকে ফিরে হাসত তখন যেনো নিজেকে মনে হতো সে এক অন্য কেউ। টি স্টলের সেই ‘আলী মামা’- না। মেয়েটা ভারী দুষ্টুমী করতে জানে। আলী হোসেন তার কাছেই প্রথম ‘চা’ বানানো শিখেছিলো।
“মরীচিকা, ধরিতে চায়, এ মরু প্রান্তরে”!
টিনের ফাঁক দিয়ে সোডিয়ামের আলো চোখে নেশার মতো লাগছে, মনে হচ্ছে আসিয়াহ বেগম হলুদ শাড়ি পড়ে তার পানে চেয়ে হাসছে, পানে খাওয়া লাল ঠোটগুলো দেখা যাচ্ছে, উহু! নিশ্চয়ই আজো সে লাল লিপস্টিক দিয়ে রেখেছে। সে নাকি আজকাল বাসাবাড়িতে ‘রাধুনী’ হয়ে আছে। আধুনিক ভাষায় যাকে বলে “আয়া”! সেখানেও কি লাল লিপস্টিক পড়ে হাসি দেয় কোর্ট-টাই পড়া সাহেবদের সামনে? আসিয়াহ কি আসলেই মরীচিকা নামক কিছু? আর ভাবতে ভালো লাগছে না তার। চোখ জ্বালা করছে খুব।
“কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে?
তোমারে দাও, আশা পূরাও, তুমি এসো কাছে।
তোমারে দাও, আশা পূরাও, তুমি এসো কাছে!”
আজকের চাঁদ অনেক বড়ো! তবু ক্যামন যেনো চ্যাপ্টা লাগছে। আসিয়াহ বেগম পাশে থাকলে বোধ হয় চাঁদটা গোল হতো আর সেই চাঁদের রঙ যদি মেখে দেয়া যেতো আসিয়াহ বেগমের গালে?

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!