গল্প : শূন্য ললাট

in shortstory •  3 months ago 

রিদোয়ান।আট বছরের এক পথশিশু।এই বিশাল খোলা আকাশের নিচে একটাই আশ্রয় তাঁর পরিত্যক্ত খোলা বারান্দা। আর ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া পচা বাসী খাবার তাঁর ক্ষুধা নিবারণের প্রধান বাহক।কোনো এক সময় তাঁর সাথে দেখা কোনো এক স্বপ্ন রাঙা স্টেশনে।
ভাইয়া ভাইয়া।হাতটা বাড়িয়ে দিলো।বোঝতেই পারলাম কি চাই।বললাম,তোমার নাম কী?রিদোয়ান।আমি আজও জানি না আমার বাবা কে! কোথায় আমার জন্মস্থান। তবে এটাই জানি আমি এখানের(চট্টগ্রাম)আলো বাতাসে বড় হয়েছি।
(এত কিছু জানতে চাই নি তবুও বলে দিলো)তাকে বললাম,তুমি বড় কই হলে?তুমি তো এখনো পিচ্ছি।না আমি পিচ্ছি নয় আমি অনেক বড় হয়েছি।কথাটা বলে অসীম আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে রইল।
আচ্ছা রিদোয়ান, তোমার মা কোথায়?
মা! নেই।
নেই মানে কোথায়?
মা আমার সাথে অভিমান করেছে। তাই আমাকে ফেলে চলে গেছে আর কখনো ফিরে আসবে না।
সে কথাগুলো বলতে লাগল কাঁন্না করতে করতে।জানো ভাইয়া,আমার ললাটটাই শূন্য।ললাট! ললাট মানে কি জানো তুমি?হ্যাঁ জানি।ললাট মানে কপাল।যখন স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এসব অজানা কিছু বলতে বলতে যায় তখন সেগুলো মুখস্ত করে পেলি।তোমারও কি তাদের মতো পড়তে ইচ্ছে হয়?কিছুক্ষণ পর বলল,না।আশ্চর্য হলাম।কেন?কেন আবার,আমাকে কে ভর্তি করাবে?কে পড়াবে?কোথায় খাবো? কোথায় থাকব?প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই।আমি কিছুক্ষণ পর আবার বললাম,আচ্ছা তুমি জামা কাপড় কোথায় পাও?সে হিসাব আমি রাখি না।এখনতো শীত আসচ্ছে।তো কি করব! তোমার কি শীতের কোনো জামা কাপড় আছে?না থাকলে কি আপনি দিবেন?আপনাদের মতো বড় মানুষদের খুব জানা আছে।দু'টা টাকা চাইলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।হাত ধরলে হাত ঝাঁড়কি দিয়ে ফেলে দেন।পিছু পিছু হাঁটলে ধূর ধূর করে তাড়িয়ে দেন।
আচ্ছা সবাই কি এক?না কিছু কিছু ভালো আছে।আর বেশীর ভাগেই হারামী।তো এখন বলো কি খাবে।কথাটা শোনে তাঁর মুখে বিস্ময়ের ছানি পড়ল।তারপর বলল,না কিছু খাবো না।পারলে টাকাগুলো দিয়ে দেন।কেন? তুমি টাকা দিয়ে কী করবে?ঐ যে দেখা যাচ্ছে (পরিত্যক্ত এক দোকানের বারান্দা) সেখানে আমার একটা বন্ধু থাকে।তার দুই দিন ধরে জ্বর।তাই দুই দিন ধরে সেখানেই পড়ে রইল।যদি টাকাগুলো দিয়ে দেন তাহলে তার জন্য ঔষুধ কিনে আনব।বাহ!তোমার তাহলে বন্ধুও আছে!তুমি না বললে তোমার শূন্য ললাট?তাঁর চেহারাটা আবার ভার হয়ে গেল।আসলে,সে আমাকে দেখতে পারে না(ঘৃণা করে)তার সাথে ভিক্ষা করতে আমাকে নিয়ে যায় না পিছে পিছে গেলে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।তাহলে তার জন্য ঔষুধ নিয়ে কী করবে?সে জানে না কেন ঔষুধ নিবে।
আমারও ফেরার সময় হলো তাঁর হাতে দুই শত টাকা দিয়ে চলে আসলাম।এর চেয়ে বেশী কিছু দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার।
............//সমাপ্ত

✍️সালাউদ্দিন নাজিম

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...