ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরব গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিককে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা এখন দাম্মামের খোবার এলাকায় একটি ক্যাম্পের হেফাজতে রয়েছেন। দেশে ফিরতে চাইলেও ওই দেশের গৃহকর্তা ও দালালরা তাদের বাধা দিচ্ছেন। এর আগেও এমন অভিযোগ উঠেছে, তবে তথ্য প্রমাণের অভাবে বিষয়টি ধোঁয়াশাই থেকে যায়। তবে সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রিতির মাধ্যমে কিছু তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশ সৌদি আরবের কনসুলেট অফিসে পাঠিয়েছেন নির্যাচনের শিকার নারীরা। ফলে এবার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) সারওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই নারী শ্রমিকদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। তাদের তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।’
সাংবাদিক ও হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিতি ও ভিকটিমদের পরিবারের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঢাকার লালবাগের সুমাইয়া কাজল (২৬) সৌদি আরব যান গত ২৩ এপ্রিল। কয়েকদিনের মাথায় তার ঠাঁই হয়েছে দাম্মাম শহরের আল খোবারা এলাকার এক নম্বর ক্যাম্পে। গাইবান্ধার জেলার সাথী (২৪) সৌদি আরব গেছেন গত গত ২০ এপ্রিল। বাসাবাড়িতে কাজ শুরু করার তিন দিন পর শরীরিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকেও ওই ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে গত আড়াই মাসে ৯ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের ঠাঁই হয়েছে সেখানে। সবার পরিবার থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাসা বাড়ি থেকে ক্যাম্পে স্থান হয়েছে তাদের। হাসপাতালে চিকিৎসার পর কেউ কেউ সুস্থ হলেও অনেকেই অসুস্থ রয়েছেন এখনও। তারা দেশে ফিরতে চাইলেও তাদের ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না।.
সুমাইয়া কাজল ও সাথীর মতো বরিশাল জেলার ভোলার রিনা, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরের মাজেদা ও তার মেয়ে বিলকিস, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের নূরজাহান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর পিংকি, নওগাঁর লতাসহ মোট ৯ নারী গত সাড়ে তিনমাসে মধ্যে সৌদি আরব পাড়ি দিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং পরে ক্যাম্পে স্থানান্তরিত হয়েছেন। সংসারের টানাপড়েন থেকে একটু সুখের মুখ দেখতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে দালালের মাধ্যমে শ্রমিকের কাজ করার জন্য সৌদি আরব যান তারা।
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রিতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ঘটনার পর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর পিংকী তার বাসায় কৌশলে ফোন দিয়ে জানান, সৌদি আরবে এক বাসায় কাজ পাওয়ার পরদিন থেকেই তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। শুধু তিনি নন, তার মতো আর ৯ জনই নির্যাতনের শিকার। সবাই অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠার আগেই তাদের নেওয়া হয়েছে একটি ক্যাম্পে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সহায়তায় তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে।’
প্রিতি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি জানার পর নিশ্চিত হতে আমি সৌদি আরবে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করি। ভিকটিমদের বাড়ি থেকে তাদের মাধ্যমে সেখানকার ভিডিও, ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করি। সংগ্রহ করা ভিডিও, ছবি ও তথ্য কনসুলেট অফিসে পাঠালে ভিডিও দেখে সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয় দাম্মামের খেরাবা এলাকায় রয়েছেন ওই নারীরা। ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ও কনস্যুলেটের দেওয়া তথ্যে নির্যাতিত ওই সব নারীরা দাম্মামের খোরাবা এলাকার ক্যাম্পে হেফাজতে থাকার নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে বৃহস্পতিবার (১৭ মে) বিকালে ভিকটিমদের পারিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে। সুমাইয়া কাজলের ছোট ভাই লালবাগের কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৩ এপ্রিল আমার বোন সৌদি আরব গেছে। একটি বাসায় কাজ শুরু করার পর তাকে নির্যাতন করা হয়। শারীরিক নির্যাতনে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে দাম্মামের একটি ক্যাম্পে আছে। বাড়ি আসতে চায়, কিন্তু আসতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মংমনসিংহের ফুলপুরের নারী শ্রমিক মাজেদা ও মেয়ে বিলকিস দুইজনই রয়েছেন ক্যাম্পে। শারীরিক নির্যাতনের কারণে তারা অসুস্থ। বিলকিসের স্বামী আমিনুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক বাসায় গিয়ে তিন দিন কাজ করার পর আমার মেয়েকে মারধর করা হয়। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার হয়ে তার মাও ওই ক্যাম্পে রয়েছেন।’
গাইবান্ধার সাথীর বাবা জাগ্গার মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়ে সারক্ষণ কান্দে। তার নাকে-মুখে ব্ল্যাক টেপ লাগানো হয়েছিলো। সে এখনও অসুস্থ। দেশে ফিরতে পারছে না। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করেন। আমার মেয়েসহ মোট ৯ জনের কেউই কাজ করার মতো অবস্থায় নেই।’
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর নারী শ্রমিক পিংকীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে মারধর করা হয়েছিল। সে কারণে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার খুব কষ্ট।’
সোনিয়া দেওয়ান প্রিতি বলেন, ‘এই নারী শ্রমিকদের পাঠিয়েছে মনসুর আলী ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সি। তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনও জবাব পাইনি। বরং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের পর ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে যায়। দালালরা ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের নজরে রাখতে শুরু করে।’
এই অভিযোগের বিষয়ে মনসুর আলী ওভারসিজ অ্যান্ড ট্রাভেলস এর শাহ এমরান এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগেরে চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by Oliviai78 from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, theprophet0, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.
If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit