বেষ্টফ্রেন্ড বউ। পার্টঃ- ০৩

in steemit •  7 months ago 

গল্পঃ বেষ্টফ্রেন্ড বউ
পর্বঃ ০৩

২য় পর্বের পর থেকে,,,,,,,,,,

তারপর আমি, আরমান, সানি আর ফারিয়া তন্নিদের বাসা থেকে চলে আসলাম। পরে আমি আব্বু আর আম্মুকে বললাম তন্নির কথা।

আমার কথা শুনে উনারা তো অনেক খুশি । বললেন তোর পছন্দই আমাদের পছন্দ আর তন্নি মেয়েটাকে আমারও অনেক ভালো লাগে।

অবশেষে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো, তন্নিকে এক রকম জোর করেই বিয়েটা দেওয়া হয়েছে। কবুল বলার সময় দেখলাম সে বলতে চাচ্ছে না। ফারিয়া আর ওর মায়ের জোরাজোরিতে বললো।

এখন প্রায় রাত ১২.০০ টা। আমি সানি আর আরমান সাদের উপর বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় ফারিয়া উপরে আসলো, আর এসেই আমাকে বললো....

ফারিয়াঃ কিরে তুই এখানে? (অবাক হয়ে)

আমিঃ তো কোথায় থাকবো?

ফারিয়াঃ আজকে না তোর বাসর রাত? তন্নি অনেক আগে থেকে একা একা বসে আছে। যা ঘরে যা।

আরমানঃ হুম বন্ধু যা। আর বসে থাকা ঠিক হবে না।

এরপর আমি উঠে আস্তে আস্তে রুমের দিকে হাটা দিলাম, এমন সময় সানি বললো....

সানিঃ মামা মনে করে বিড়ালটা মারিস। আর কোনো দরকার হলে আমাকে কল দিস।

ফারিয়াঃ এই ফাজিল! তোর মুখে কি কিছুই আটকাই না? সবাই কি তোর মতো নাকি।

আমি আর কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সাদ থেকে চলে আসলাম।

বাসরঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কেমনে জানি ভয় লাগতেছে আবার লজ্জাও। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।

দেখলাম তন্নি মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম। এমন সময় তন্নি আমাকে বললো....

তন্নিঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আমিঃ কি কথা বল। আর শুন আজকে থেকে আমি তোর স্বামী, সো আর তুই করে বলবি না। তুমি করে বলবি এন্ড আমিও বলবো।

তন্নিঃ দেখ তোকে আমি কখনোই স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। তুই জাস্ট আমার ফ্রেন্ড।

আমিঃ তাহলে বিয়েতে মত দিলি কেন?

তন্নিঃ তোর কি ধারনা আমি নিজে থেকে মত দিছি? জীবনেও না। মা আমাকে উনার মরার কসম দিয়েছে। সেজন্য আমি বিয়েটা করেছি।

আমিঃ তোর মায়ের কসম এর জন্য তুই আমার জীবন নষ্ট করবি নাকি? তো তুই এখন কি চাস?

তন্নিঃ তুই জীবনেও আমার কাছে স্বামীর অধিকার দেখাতে পারবি না। তুই তোর মতো আর আমি আমার মতো।

আমিঃ ওকে, আমি তোর উপর কোনো অধিকার খাটাবো না। অন্তত আমার মা বাবার সামনে একটু নাটক করিস। না হলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে।

তন্নিঃ চেষ্টা করবো।

আমি আর কিছু না বলে খাটে ঘুমাতে যাবো এমন সময় তন্নি আবারও চিৎকার দিয়ে উঠে আর আমাকে বলে....

তন্নিঃ কি করছিস তুই?

আমিঃ কি করলাম, ঘুমাতে যাচ্ছি।

তন্নিঃ ঘুমাবি ভালো কথা কিন্তু খাটে কেন?

আমিঃ তাহলে কোথায় ঘুমাবো?

তন্নিঃ যেখানে খুশি সেখানে ঘুমা, দরকার হলে সোফায় ঘুমা বাট খাটে ঘুমাতে পারবি না।

আমিঃ এটা আবার কেমন কথা, খাট থাকতে সোফায় কেন ঘুমাবো?

তন্নিঃ কারন তোর সাথে এক খাটে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। সো তুই খাটে ঘুমাবি না।

আমি আর কিছু না বলে একটা বালিশ নিয়ে লাইট অফ করে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম, তন্নিও খাটের উপর শুয়ে পড়লো। আমার কিছুতেই ঘুম আসছে না। পরে আমি উঠে বেলকনিতে চলে গেলাম।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আমার মতো অভাগা হয়তো পৃথিবীতে আর ২য় টা নেই। এই বাসরঘর নিয়ে কতো কিছু চিন্তা করে রাখছি বাট কিছুই হলো না। মনে মনে ভাবলাম তন্নির সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা না হলেই ভালো হতো। সুন্দর একটা জীবন পেতাম। নিয়তি বার বার ওর কাছেই আমাকে নিয়ে আসে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়েছে, বুঝতেই পারিনি। এমন সময় খেয়াল করলাম রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আমি তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে লাইট টা অন করলাম।

দেখলাম তন্নি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। লাইট অন করাতেই কান্না বন্ধ করে দিলো। তারপর আমি বললাম....

আমিঃ কিরে তুই এখনো ঘুমাস নি, আর কান্না করতেছিস কেন?

তন্নিঃ না এমনি। তুই কোথায় ছিলি?

আমিঃ বারান্দায় ছিলাম। ঘুমিয়ে পড় বেশি রাত জাগলে আবার শরীর খারাপ করবে।

তন্নিঃ হুম, তুইও ঘুমিয়ে পড়।

আমি আর কিছু না বলে লাইট টা অফ করে দিলাম। খেয়াল করে দেখলাম ওর মোবাইলে রায়হান ছেলেটার ছবি। এবার বুঝতে পারছি তন্নি কেন কান্না করছে। হয়তো ছেলেটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।

মনে মনে বললাম বালিকা তুমি আমাকে চেনো না, আমি কোন জলের মাছ, তোমাকে আমার প্রতি দূর্বল করে তারপর প্রত্যেক টা কথা প্রতিশোধ নিবো। কোথাকার একটা ছেলের জন্য তুমি আমার ভালোবাসাকে ২ টাকার দামও দিচ্ছো না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।

সকালবেলা একটা মিষ্টি কান্ডে ঘুম ভাঙলো, তাকিয়ে দেখি এটা তন্নি। এই মাত্র গোসল করে আসছে। ওর চেহারাটা অনেক মায়াবী লাগছে। আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তন্নি বললো....

তন্নিঃ ওই এই ভাবে ছ্যাঁচড়াদের মতো তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। আম্মা এসে কয়েকবার ডেকে গেছে, নাস্তা করার জন্য।

আমি কিছুই না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হতে হতে ভাবলাম তন্নি মনে হয় জীবনেও আমাকে মেনে নিবে না। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতে দেখালাম তন্নি মনমরা হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখেই নিচে চলে গেলো।

আমিও রেডি হয়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখি আমি ছাড়া সবাই বসে আছে। সবাই একসাথে নাস্তা করলাম। এরপর বাবা বললেন...

বাবাঃ নাস্তা করে দেখতো আরমান আর সানি কোথায়? ওদেরকে বাবুর্চির কাছে পাঠাইছিলাম।

বাবার কথা শুনে আমি হাসা শুরু করলাম, হায়রে আমার বন্ধু গুলা বাবুর্চির কাজ করছে। তারপর বাবা বললেন....

বাবাঃ না হেসে বাইরে গিয়ে ওদের দেখ। আর শুন কালকে তাড়াতাড়ি উঠিস অফিসের কলিগদের সাথে পরিচিত হবি আর অফিস বুঝে নিবি। আমি আর যাবো না।

আমিঃ কিন্তু বাবা...(পুরোটা বলতে না দিয়ে)

বাবাঃ কোনো কিন্তু না যেটা বলেছি সেটাই।

তারপর নাস্তা করে সানি আরমানকে খুঁজতে লাগলাম। বেশ ভালোভাবেই বউ ভাতের অনুষ্ঠান টা শেষ হয়।

এরপরে রাতে যখন আবার ঘুমাতে যাই, গিয়ে দেখি তন্নি আগে থেকেই বিছানায় শুয়ে আছে। আমি কিছু না বলে সাদে চলে গেলাম। সারা রাত ওখানেই কাটিয়ে দিলাম।

পরের দিন সকালবেলা নাস্তা করে বাবার সাথে অফিসে চলে গেলাম, বাবা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং এটাও বললেন যে আজ থেকে আমিই ওদের বস। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালো। সেদিন সবার সাথে পরিচিত হয়ে বাসায় চলে আসলাম।

এইভাবে ১ সপ্তাহ চলে গেলো । তন্নির সাথে আমার আর তেমন কথা হয় না, দরকার ছাড়া আর কোনো কথা নেই। সেদিন সকালে নাস্তা করে অফিসে এসে কিছু দরকারি কাজ সেরে নিলাম। তারপর চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ টা বন্ধ করলাম, এমন সময় ইউসুফ এর কল....

ইউসুফঃ কিরে দোস্ত কি অবস্থা? বিয়ে করে তো আমাদের ভুলে গেলি।

আমিঃ আরে না কি যে বলিস। তোদের কেন ভুলবো?

ইউসুফঃ দোস্ত তোর বিয়েতে আসতে পারি নি, আম্মু অসুস্থ ছিলো। কিছু মনে করিস না।

আমিঃ আরে না। তো বল আন্টি কেমন আছে?

ইউসুফঃ আগে থেকে ভালো। তোর বাসার সবাই কেমন আছে?

আমিঃ নারে দোস্ত তেমন ভালো নাই। আম্মু আব্বু দুজনই অসুস্থ।

ইউসুফঃ এক কাজ কর উনাদের কে নিয়ে দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আয়। যদি পারিস দেশের বাইরে চলে যা। ভালো লাগবে...

আমিঃ ঠিক বলেছিস। আচ্ছা দেখি কি করা যায়।

একথা বলেই কলটা কেটে দিলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম কোথাও থেকে ঘুরে আসলে মন্দ হয় না। এগুলো ভাবতে ভাবতে দেখি টিফিনের সময় হয়ে গেছে। আমি হালকা কিছু খেয়ে নিলাম, এরপর চিন্তা করলাম তন্নিকে একটা কল দিই। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করি। এরপর তন্নিকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর কলটা ধরলো, বিরক্ত নিয়ে বললো....

তন্নিঃ কি ব্যাপার তুই এ সময় কেন কল দিলি?

আমিঃ না মানে খেয়েছিস কিনা জানার জন্য।

তন্নিঃ দেখ তোর আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। আমাকে আমার মতো থাকতে দে।

এ কথা বলে কলটা কেটে দিলো। তারপর..........

চলবে.......
To be Continue.......

পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন ।
গল্পটি ভালো লাগলে ভোট দিন।
ধন্যবাদ ।

1000009845.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!