সনাতন (হিন্দু) ধর্মের সুপ্রাচীন এবং শ্রদ্ধার সাথে অনুসরনীয় বিশ্বস্ত ধর্মগ্রস্থ বিষ্ণু পুরান। বিষ্ণু পুরানের ষোড়শ অধ্যায় বা ১৬তম অধ্যায়ে কোন হিন্দু ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার বংশধর গণ কর্তৃক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য একটি খাদ্য তালিকা দেয়া আছে। কোন খাদ্য দ্বারা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে আগত ব্রাক্ষণ বা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হলে মৃত ব্যক্তিগণের আত্মা পরিতৃপ্ত থাকেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা বিষ্ণু পুরানের ১৬তম অধ্যায়। শ্রাদ্ধের খাদ্য তালিকার মুল সংস্কৃতি শ্লোক ও অনুবাদসহ উল্লেখ করা হলো।
ষোড়শ: অধ্যয়
হবিষ্য-মৎস্য-মাংসৈ¯ত্ত শশস্য শকুনস্য চ।
শৌকরচ্ছাগলৈরৈণৈরৌবৈর্গবয়েন চ।। ১
ঔরভ্রগব্যৈশ্চ তথা মাসবৃদ্ধ্যা পিতামহাঃ।
প্রয়াঅন্তি তৃপ্তিং মাংসৈ¯ত্ত নিত্যং বাধ্রীণসামিষৈঃ।।২
খড়গমাংসমতীবাত্র কালশাকং তথা মধু।
শস্তানি কর্ম্মণ্যত্যন্ত-তৃপ্তিদানি নরেশ্বর।। ৩
ষোড়শ অধ্যায়
[শ্রাদ্ধে মধু-মাংসাদি দানফল এবং ক্লীবাদি দ্বারা শ্রাদ্ধ দর্শন দোষ বর্ণন]।
ঔর্বব্ বলিলেন,-শ্রাদ্ধের দিনে ব্রাক্ষণদিগকে হবিষ্য করাইলে পিতৃগণ একমাস পর্য্যন্ত পরিতৃপ্ত থাকেন, মৎস্য প্রদানে দুইমাস, শশকমাংস প্রদানে তিন মাস, পক্ষিমাংস প্রদানে চারি মাস, শূকরমাংস প্রদানে পাঁচ মাস ছাগ-মাংস প্রদানে ছয় মাস’ ত্রণ (মৃগবিশেষ) মাংস দিলে সাত মাস, রুরুমৃগমাংস প্রদান করিলে আট মাস, গবয়মাংস প্রদানে নয় মাস, মেষমাংস প্রদানে দশ মাস, গোমাংস প্রদান করিলে এগার মাস পর্য্যন্ত পিতৃগণ পরিতৃপ্ত থাকেন। পরন্ত
যদি বাধ্রীণস* মাংস দেওয়া যায়, তাহা হইলে পিতৃলোক চিরদিন তৃপ্ত থাকেন। হে রাজন! গন্ডারের মাংস, কৃষ্ণ শাক ও মধু –এই সমূদায় দ্রব্য শ্রাদ্ধকর্ম্মে অত্যন্ত প্রশন্ত ও অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক।
পৃষ্ঠা নং-২২৯-২৩০
শ্রী মহর্ষি বেদব্যাস প্রনীত বিষ্ণু পুরান।
আচার্য্য পঞ্চানন তর্করতœ সম্পাদিত প্রকাশক নবভারত পাবলিকার্স ৭২ মহাত্মা গান্ধী, রোড কলিকাতা ভারত। প্রকাশ কাল ১৩৯০ বাংলা।
সনাতন হিন্দু ধর্মের বিধি বিধান বা ফিকাহ শাস্ত্র হিসাবে বিবেচিত গ্রন্থ মনুসংহিতার পঞ্চতম অধ্যায়ে ভক্ষ ও অভক্ষ মাংস বা মাংস ভক্ষনের বিধি বিধান বর্ণনা করা আছে।
শ্লোক নং-।।১৭।। এব এবং।। ১৮।। বাংলা অনুবাদসহ মুল সংস্কৃত শ্লোক উদ্বৃত করা গেল।
ন ভক্ষয়েদেকচরানজ্ঞাতাংশ্চ মৃগদ্বিজান॥
ভক্ষ্যেদ্বপি সমুদিষ্টান সর্বান, পঞ্চনখাংস্তথা।। ১৭।।
অনুবাদ একচর প্রার্ণী (যেমন, সাপ, পেঁচা প্রভৃতি), এবং অজানা মৃগ (অর্থাৎ পশু) ও পাখী ভক্ষণ করবে না॥ আবার সামান্য ও বিশেষ রূপে নিষেধ না থাকায়, পঞ্চনখ প্রাণীও (যাদের পাঁচটি করে নখ আছে, যেমন, বানর, শৃগাল, প্রভৃতিও) ভক্ষণ করবে না।।১৭।।।
শ্বাবিধং শল্যকং গোধাং খড়গকুর্মশশাংস্তা।
ভক্ষ্যান্ পঞ্চনখেদ্বাহুরনষংশৈচকতোদতঃ।। ১৮।।
অনুবাদ : পঞ্চনখ প্রাণীদের মধ্যে শ্বাবিধ (শজারু), শল্যক, গোধা অর্থাঃ গোসাপ, গন্ডার, কুর্ম (কচ্ছপ), শশক (খরগোস)-এই ছয়টি ভোজন করা যায়। একতোদৎ অর্থাৎ এক পাটী দাঁত বিশিষ্ট পশুদের মধ্যে উট ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর (যথা, গরু, মেষ, ছাগল, হরিণ) মাংস ভোজ্যরূপে গ্রহণ করা যায়।।। ১৮।।
শ্রাদ্ধের জন্য নিবেদিত মাংস যদি শ্রাদ্ধ কারী স্বয়ং ভক্ষন না করেন তার কি পরিমান পাপ হয় বা মৃত্যুর পর তার কি শাস্তি হয় তার বর্ণনা পঞ্চম অধ্যায়ের।। ৩৫।। তম শ্লোকে বলা আছে। সংস্কৃত মুল শ্লোকটি বাংলা অর্থসহ উদ্ধৃত করা গেল।
নিযুক্ত¯ত্ত যথান্যায়ং যো মাংসং নাত্তি মানবঃ।
স প্রেত্য পশুতাং যাতি সম্ভবানেকবিংশতিম॥।৩৫।।
অনুবাদ : যে মানুষ শ্রাদ্ধে দেবলোক ও পিতৃলোকে যথাবিধি মাংস নিবেদন করে ঐ মাংস ভোজন না করে, সে মৃত্যুর পর একুশ জন্ম পশুযোনি প্রাপ্ত হয়। (সম্ভব শব্দেৃর অর্থ জন্ম)।। ৩৫।।
অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি গোমাংশ দ্বারা তাহার মৃত পিতৃ পুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করেন আর স্বয়ং গোমাংশ ভক্ষণ না করেন সে মৃত্যুর পর অন্তত কুড়ি বার পশুযোনীসহ জন্ম গ্রহণ করবে। অর্থাৎ পশু হিসাবে জন্ম গ্রহণ করবে।
সনাতন হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত বিশস্ত ২টি মূল ধর্মগ্রন্থ’ থেকে আমি একথা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, সনাতন ধর্মমতে গো বলীদান এবং গো-মাংস ভক্ষণ ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত। শুধু স্বীকৃতই নয় বরং পরলোকগত পিতৃ পুরুষের আত্মার মুক্তি কামনার জন্য শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের সর্বাপেক্ষা উচ্চ বর্ণের অধিকারী এবং ধর্মীয় গুরু ব্রাক্ষনগণকে গো মাংস দ্বারা আপ্যায়ন করালে ১১ মাস যাবৎ মৃত ব্যক্তির আত্মা পরিতৃপ্ত থাকে।
উল্লেখ্য যে, একথাও সত্য যে, কোন ব্যক্তি রাগ বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ধর্মীয় কারণ বা প্রয়োজন ছাড়া গোহত্যা হিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি উক্তরূপ কার্য করে তার প্রাশ্চয়িত্বের বিধান মনুসংহীতায় নির্দ্ধারণ করা আছে। মনুসংহীতায় গো হত্যার বদলে কোনভাবেই কোন মানুষ হত্যার বিধান নাই। মনুসংহিতার একাদশ অধ্যায়ের ১০৯-১১৬ নং শ্লোকে অন্যায়ভাবে গো-হত্যার প্রাশ্চয়িত্ব বা শাস্তির বিধান বর্ণনা করা আছে। মূল সংস্কৃত শ্লোক ১০৯-১১৬ বাংলা অর্থসহ উদ্ধৃত করা হল ঃ
উপপাতকসংযুক্তো গোঘেœা মাসং যবান্ পিবেৎ।
কৃতবাপো বসেদগোষ্ঠে চর্মণা তেন সংবৃতঃ।। ১০৯।।
চতুতর্থকালমশ্বীদায়ক্ষারলবণং মিতম।
গোমূত্রেণ চরেৎ ম্লানং দ্বৌ মাসৌ নিয়তেন্দ্রিয়ঃ।। ১১০।।
দিবানুগচ্ছেদ্গাস্তা¯ত্ত তিষ্ঠান্নর্দ্ধং রজৎ পিবেৎ”।
শুশ্রুষিত্বা নমস্কৃত্য রাত্রৌ বীরাসনং বসেতৎ।। ১১১।।
তিষ্ঠন্তী যষবুতিষ্ট ও ব্রজন্তী স্বপ্য ব্রজেৎ।
আসাীনাসু তথাসীনো নিয়তো বীতমৎসরঃ।। ১১২।।
আতুরামভিশস্তাং বা চৌরব্যাঘ্রাদিভির্ভয়ৈঃ।
পতিতাং পঙ্কমগ্রাং বা সর্বোপায়ের্বিমোচয়েৎ।।১১৩।।
উষ্ণে বষৃতি শীতে বা মারুতে বাতি বা ভৃশম।
ন কুর্বীতাতœনস্ত্রাণং গোরকৃত্বা তু শক্তিচ।। ১১৪।।
আতমনো যদি বান্যেষাং গৃহে ক্ষেতেহথবা খলে।
ভক্ষয়ন্তীং ন কথয়েৎ গৃহে ক্ষেতেহধবা খলে।
ভক্ষয়ন্তীং ন কথয়েৎ বিবসন্তঞ্চৈব বৎসকম্।। ১১৫।।
অনেনন বিধনা যস্তু গোঘেœা গামনুগচ্ছতি।
স গোহত্যাকৃতং পাপং ত্রিভির্মাসৈর্ব্যপোহিতি।। ১১৬।।
মনুসংহিতা
অনুবাদ: গোহত্যা করে যে লোক উপপাতকগ্রস্ত হয়, সে একমাস যবমন্ড বা যবের ছাতু আহার করবে এবং কৃতবাপ অর্থাৎ মুন্ডিত মস্তক ও ছিন্নশ্মশ্রু হয়ে গোরুর চামড়ার দ্বারা আচ্ছাদিতদেহে গোরুর গোষ্ঠে বাস করবে।।। ১০৯।।
চতুর্থকালে অর্থাৎ একদিন বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দিনের সায়ংকালে অকৃত্রিম সৈন্ধবাদি-লবণ-যুক্ত পরিমিত অন্ন ভোজন করবে। দুই মাস কাল সংযতেন্দ্রি হয়ে (প্রাতঃ মধ্য্হা এবং সায়াহ এই তিন বার] গোমূত্রে ম্লান করবে।। ১১০।।
যে গোষ্ঠে বাস করবে দিবাভাগে সেখানকার গোরুগুলি যখন বিচরণ করতে যাবে তখন সেগুলির পিছনে পিছনে যাবে, দাড়িয়ে থেকে তাদের খুরোত্থিত ধুলি পান করবে। রাত্রি হলে তাদের সেবা করে এবং নমস্কার করে বীরাসন হয়ে থাকবে।
[যে সব গোরুর নিকট বাস করতে হবে সেগুলি যখন চরতে যাবে তাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাবে। এখানে “তাঃ’’ এই “তদ্’’ শব্দের দ্বারা যাদের [যে গরুগুলিরঃ বাসস্থানে প্রায়শ্চিত্তকারী বাস করবে সেই গোরুগুলিকেই বোঝান হয়েছে। কাজেই সেগুলি ছাড়া অন্য যে সব গরু যেতে থাকবে তাদের অনুমগমন করতে হবে না। সেই গোরুগুলির দ্বারা যে “রজঃ’’=ধুলি উত্থাপিত হয়ে উপরে উঠবে তা যেতে যেতে পান করিবে। এইভাবে একই স্থানে ঐ গরুগুলির সাথে সারাদিন বেড়িয়ে আবার তাদেরই সাথে গোষ্ঠে ফিরে আসবে। “শুশ্রƒষিত্বা’’= সেবা করে; গা চুলকিয়ে দেওয়া, শরীরের কৃমিকীটাদি টেনে, ধুলো ঝেড়ে দিয়ে ইত্যাদি প্রকারে সেবা করে। “নমস্কৃত্য”= জানু এবং মস্তক নত করে প্রণাম করে “বীরাসনঃ বসেৎ” = গৃহভিত্তি কিংবা শয্যা প্রভৃতি অবলম্বন না করে যে উপু হয়ে বসে থাকা তাই বীরাসন। ]।। ১১।।
সেই গোরুগুলি দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেও দাঁড়িয়ে থাকবে’ তারা চলতে থাকলে নিজেও চলতে থাকবে এবং তারা বসলে নিজেও বসবে-সংযতচিত্ত এবং লোভাদিশুন্য হয়ে এই সব কাজ করবে।।। ১১২।।
কোন একটি গোরু যদি ব্যাধিগ্রস্ত কিংবা চৌরব্যাঘ্র্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কাতর হয়, কিংবা পড়ে যা অথবা পাকে পুতে যায় তা হলে তাকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে, এমনকি নিজ প্রাণ দিয়ে রক্ষা করবে।।। ১১৩।।
গ্রীষ্মে [ সুর্য প্রচন্ড উত্তাপ দিতে থাকলে ] বর্ষায় (বর্ষতি = বৃষ্টি পড়তে থাকলে ] কিংবা শীতে অবা প্রবলভাবে ঝড় বইতে থাকলে নিজের শক্তি অনুসারে গোরুকে রক্ষা না করে নিজেকে রক্ষা করবে না বা কোথাও আশ্রয় নেবে না।। ১১৪।।।
নিজের অথবা অন্যের বাড়ীতে, ক্ষেতে কিংবা খামারে যদি ঐ গোরু শস্যাদি ভক্ষণ করে কিংবা তার বাছুর যদি তার দুধ পান করতে থাকে তাহলে ঐ গোরুটিকে বাধা দেবে না এবং গৃহস্বামীকে ডেকে ঐসব ব্যাপার বলে দেবে না।। ১১৫।।
গোহত্যাকারী ব্যক্তি এই রকম নিয়মে তিন মাস গোরুর সেবা করতে থাকলে সে গোহত্যা জনিত পাপ থেকে মুক্ত হয়।।। ১১৬।।
উল্লেখিত উদ্ধৃত অংশে অন্যায়ভাবে গো-হত্যাকারীকেও হত্যার কোন বিধান উল্লেখ নাই এবং উক্ত প্রায়শ্চিত্তে যে অপরাধ করেছে। সে নিজেই করবে। তা করাতে বাধ্য করার জন্য কাউকে কোন ক্ষমতা অর্পণ করা হয় নাই।
মুনসংহিতা, সম্পাদনা ও অনুবাদ
ডা. মানাবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় শাস্ত্রী
শ্রী বলরাম প্রকাশনা ১০১-বি
স্বামী বিবেকান্দ রোড
কলকতা-৭০০০০০৬
প্রকাশকাল ১৪১২।
হিন্দু শাস্ত্রের পবিত্র হিসেবে বিবেচিত গ্রন্থই গরুকে গো-মাতা বা গো- দেবতা হিসাবে উপস্থাপন বা উল্লেখ করা হয় নাই। বরং হিন্দু ধর্মে আদিধর্ম গ্রন্থ বেদ-এর বিভিন্ন প্রার্থনার স্লোকে পূর্বেকার মনিঋষিগণ গরুকে সম্পদ হিসাবে প্রার্থনা করিয়াছেন। সম্প্রতি প্রতিবেশী ভারতে দেখা যাচ্ছে যে, হিন্দু শাস্ত্রের সহিত সম্পর্কহীন কিছু গন্ড মুর্খ সাধু এবং আরএসএস ও বিজেপি নেতা পরিচয় দানকারী ব্যক্তি গরু এবং গাভীকে তাহাদের গোমাতা দেবী বা গো-দেবতা হিসাবে জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত আছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে একটি ভিডিও ক্লিপ ইউ.টিউপে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় যে, কয়েকজন হিন্দু ব্যক্তি নিজেদের ধর্মের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করতে গিয়ে প্রস্রারত গরুর পিছনে পানির খাওয়ার গ্লাস ধরে গোমুত্র সংগ্রহ করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পান করছেন এবং কয়েকটি গরুকে বর কনের মত সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করে কতিপয় গেরুয়া পোশাকধারী সাধু প্রনাম জানাচ্ছেন। সৃষ্টির সেরাজীব মানুষের এহেন ঘৃণিত রুচি ও অধঃপতন দেখে অনেক দুঃখ হয়। সমগ্র ভারত বর্ষে হাজার হাজার বছর ধরে গরু, গাভী, খাদ্য, যান বাহন, হালচাষ এর সহায়ক পশু হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। ভারতের অনেক এলাকায় অনেক গরু পালনকারী নিরীহ জনগণ প্রতি বৎসর গরু পালন করে বিক্রয় ক্রয় করে কোটি কোটি রোজগার করে পরিবার পরিজন প্রতিপালন করেছেন। বর্তমানে জানা যাচ্ছে যে, ভারতে গরু বিক্রয় এবং গরু জবেহ অনেক স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, কোন কোন রাজ্যের হাইকোর্ট গোমাংস ভক্ষণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধের বিষয়ে রায় দিয়াছেন। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র ও কোরআনে পাকে ঘোষণা করেছেন যে, এই সমস্ত লোকজন পশুতুল্য কিংবা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট !।
গরু বা গভীকে গো-মাতা দেবী বা গো-দেবতা সাব্যস্ত করার জন্য বিষ্ণু পুরান জালিয়াতি : ভারতীয় আইনে বা হিন্দু ধর্মের বিধানে গো-মাংস ভক্ষন ক্রয় বিক্রয় বৈধ। এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশ ভারতের সমস্ত হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রবিদ ও আইনজ্ঞদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করছি। তারা গরু এবং গাভীকে দেব দেবী এবং গরুর মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধতা প্রমাণ করুক। আইন ও ধর্মে নিষিদ্ধ না থাকা সত্ত্বেও গো-হত্যার মিথ্যা অভিযোগে ভারত বর্ষের এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ, নরপশু ইতিমধ্যে অনেক নীরিহ মুসলমানের জীবন সংহার করেছে। ভবিষ্যতে আরো কত নিরীহ মানুষের প্রাণ এরা কেড়ে নেবে তার পরিসংখ্যান এই মুহুর্তে করা সম্ভব নয়। এই সমস্ত গোরক্ষাকারী নামধারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ভারতবর্ষের কলিকাতা থেকে জালিয়াতী পূর্ণভাবে একটি বিষ্ণু পুরান প্রকাশ করা হয়েছে। শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনের পূর্বে এহুদী এবং খ্রীষ্টানরা যেভাবে তাওরাত ও ইঞ্জিলগ্রন্থ’ কাটছাঁট বা রদবদল করেছেন এবং নিজেদের স্বার্থে উক্ত কাটছাঁট করা ধর্মগ্রন্থ ব্যবহার করেছেন। তারই আদলে বাংলা ১৪১০ সালে মুদ্রিত বৃহৎ সচিত্র বিষ্ণু পুরান এর একটি কপি সম্প্রতি আমি সংগ্রহ করি। যা কবিতা আকারে শ্রী বেনী মাধব শীল, ডক্টর অব ধর্ম, বেনারস কর্তৃক পরিমার্জিত ও পরিবর্দ্ধিত উল্লেখ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত বিষ্ণু পুরান এর তৃতীয় খন্ডে শ্রাদ্ধবিধি অধ্যায়ে শ্রাদ্ধীয় মাংস নিরূপণ অধ্যায়টি নিম্নরূপ:
ষোড়শ অধ্যায়
শ্রাদ্ধীয় মাংস নিরূপণ।
ঔর্বব কহেন শুন শুন ওহে নরপতি।
শ্রীবিষ্ণপুরাণ কথা মধুর ভারতী।।
যেইরূপ মাংস আর মাংসের দ্বারায়।
পিতৃগণ মনে মনে মহাতৃপ্তি পায়।।
সেই কথা তব পাশে করিব কীর্ত্তন।
অবহিতে মন দিয়া গুনহ রাজন।।
শশক শকুল ছাগ অরণ্য-শূকর।
রুরুমৃগ ও হরিণ ওহে নরবর।।
বা ধ্রীনস মেষ আর গন্ডার গবয়।
পিতৃগণ-প্রীতিপ্রদ এই সব হয়।।
কাল শাক মধু যদি করহ অর্পণ।
তাহে মহাতুষ্ট হন যাত পিতৃগণ।।
গয়াতীর্থে গিয়া যেই অতি ভক্তি ভরে।
পিতৃগণ উদ্দেশেতে পি-দান করে।।
তাহার উপরে তুষ্ট হয় পিতৃগণ।
নিশ্চয় সফল তার মানব জনম।।
নীবার শ্যামক ধান্য যব আদি করি।
শ্রাদ্ধেতে প্রশস্ত হয় জানিবে বিচারি।।
পৃষ্ঠা নং-১৭৩
ঊদ্ধৃত অংশে মাংসের তালিকা থেকে গো-মাংসকে বাদ দেয়া হয়েছে। জানিনা ভবিষ্যতে এই আহলে গরু বা গরু ভক্তদের জন্য হিন্দু ধর্মীয় নতুন প-িতগণ আরো কি কি ধরনের শাস্ত্র সংশোধনের বা পরিমার্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। উদ্ধৃত অংশে কান মাংসের দ্বারা পরলোকগত পিতৃগণ কতদিন সন্তষ্ট থাকেন।
তার বর্ণনাও বাদ দেওয়া হয়েছে। অতি পরিমার্জিত অবস্থায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। মনে হচ্ছে এই নূতন ধর্মবেত্তা, সংকলক ও সম্পাদনকারী পরিমার্জনের বিশেষ গুরু দায়িত্ব পালন করিয়া তাহার সর্বপ্রকার পাপ মোচনের পথ প্রশস্ত করিয়াছেন।
পরিশিষ্ট :
পরিশেষে আমি বাংলাদেশ ভারত তথা সারা বিশ্বের বিবেকবান ধর্মপ্রাণ এবং মানব দরদী মানবতাবাদী ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্ম গুরু, ধর্মবেত্তা সকলের নিকট আবেদন জানাচ্ছি যে, আসুন এই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষার চরম উৎকর্ষের যুগে সৃষ্টির সেরা জীব মানব জাতিকে গরুর মতো একটি প্রাণীর গোশত খাওয়ার অপরাধে কাল্পনিক মিথ্যা ধর্মীয় ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে যেভাবে হত্যা, জুলুম হয়রানী করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই এবং ঐসব পশুদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
সম্প্রতি ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে তথাকথিত আইএস যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষের মু-চ্ছেদ করেছে। তাদেরকে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সম্মিলিত ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনেকটা প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়েছে। অচিরেই তাদের অস্তিত্বের পরিসমাপ্তি হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। একইভাবে এসব উগ্র গরু প্রেমিক নামধারীকে প্রতিরোধ করতে হবে এবং এই প্রতিরোধের মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের মান মর্যাদা সংরক্ষন করতে হবে। সারা দুনিয়ার বিবেকবান মানুষকে এ ব্যপারে অগ্রনী ভুমি রাখার জন্য বিশেষতঃ ভারত সরকার এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। বিশ্বের বিবেকবান মানুষ আশা করে যে, তাদের এই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!