হঠাৎ খুব ভোরে মামুন এর ঘুম ভেঙ্গে গেল।
সে খুব আস্তে বিছানা থেকে নামল স্ত্রী নিলা'র যেন ঘুম না ভাঙ্গে। মামুন বারা্ন্দায় গিয়ে দাড়ালো। আকাশ এখনও ফর্সা হয়নি। মসজিদে ফজরের আযান দিচ্ছে। মামুন নিলাকে বিয়ে করেছে দু'বছর হলো। নিলা'র ইচ্ছার কারনে এখনো তাদের বাচ্চা হয়নি। ভোরের এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে মামুনকে শীতল করে দিলো। সে একটি সিগারেট ধরালো। নিলা'র জন্য সে ঘরে শুয়ে বসে আরাম করে সিগারেট খেতে পারে না। ছোট্র বারান্দাটাই তার সিগারেট খাওয়ার জায়গা। সিগারেটে শেষ টান দেওয়ার পরই মামুন দেখতে পেলো তার পায়ের কাছে একটা কাপড়ের পোটলা। সে কৌতুহলের কারণে কাপড়ের পোটলাটা খুলে দেখে সেখানে একটা ছোট মৃত বাচ্চা'র লাশ। ফুটফুটে একটা বাচ্চা। দু'টো হাতই মুঠো করা। দেখলে মনে হয় বাচ্চাটা খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে। গলার কাছে কিসের যেন দাগ। ভয়ে মামুনের হাত-পা কাপছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
মামুন দৌড়ে সোবার ঘরে গিয়ে নিলা'র হাত শক্ত করে ধরে রাখে।
নিলা'র ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিলা আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলে কি হয়েছে এই ভোরবেলা? আজ এত সকালে সাহেবের ঘুম ভাঙ্গল যে! মামুনের অবস্থা দেখে নিলা খুব ভয় পেয়ে যায়। নিলা ভয় মেশানো গলায় বলতে থাকে- এই কি হয়েছে তোমার? কাপছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে? মামুন কিছু বলল না, শুধু হাত দিয়ে বারান্দার দিকটা দেখালো নিলাকে। নিলা বারান্দায় গিয়ে মৃত বাচ্চাটাকে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে মামুনকে জড়িয়ে ধরল। নিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই বাচ্চা এখানে কেমন করে এলো? কার বাচ্চা? কারা এখানে রেখে গেল? মামুন ছোট্র করে বলল- আমি কিচ্ছু জানি না।
আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে। একটু পর বুয়া আসবে, ঘর ঝাড়ু দিবে। নিলা মামুনকে বললো- কাউকে কিচ্ছু জানানো যাবে না। পুলিশকেও না। পাড়া-প্রতিবেশী কাউকে না। আইন নির্দোষ মানুষকেই শাস্তি দেয়। সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারব না। কোনো দোষ না করেও আজ আল্লাহ আমাদের এই পরিস্থিতি ফেললেন। তুমি বাচ্চাটাকে ভালোভাবে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে আপাতত কোথাও লুকিয়ে রাখো। মামুন ঠিক তাই করলো- বাচ্চাটাকে একটা বড় টাওয়াল দিয়ে পেঁচিয়ে আলমারির ভেতর লুকিয়ে রাখল।
নাসিমা বুয়া ঘরে ঢুকেই নিলাকে বলল- কি গো ভাবী তোমার মুখ এমন শুকনো কেন? রাতে কি সাহেব ঘুমাতে দেয় নাই? নিলা কঠিন গলায় বলল- তাড়াতাড়ি তোমার কাজ শেষ করো, আজ নাস্তা বানাতে হবে না। মামুন আজ অফিসে যাবে না। শুধু দু'কাপ চা বানিয়ে দিও। বুয়া চলে যাবার পর নিলা ঘরে চা নিয়ে ঢুকে দেখে মামুন মূর্তির মতো বসে আছে। নিলাকে দেখে মামুন বলল চা খাবো না। নিলা বলল- চা খাও ভালো লাগল। তারপর আসো দু'জন মিলে চিন্তা করি কি করা যায়। কেউ একজন আমাদের সাথে এই কাজটা করেছে। আমাদের ভয়ংকর একটা বিপদে ফেলেছে। মামুন বলল- কে এই শত্রু? আমি তো কোনো দিন এমন কিছু করি নাই যে আমার শত্রু থাকতে পারে। মামুন হঠাৎ রেগে গিয়ে নিলাকে বলল- তুমি নিশ্চয়ই এমন কোনো বাজে কাজ করেছো তার জন্য আজ আমাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো। মামুন চোখ মুখ লাল করে হঠাৎ নিলা'র গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। নিলা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ল। নিলার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।
নিলা কি করে বলবে, অনেক বছর আগে রাজু নামের একজনের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। সে মানুষটা নিলাকে দারুন আদর করতো। সেই আদর নিতে নিলা'র অনেক ভালো লাগত। পাঁচ বছর আগে নিলাকে না জানিয়ে রাজু চলে যায় লন্ডন। তারপর রাজু'র আর খোঁজ পায়নি নিলা। এই পাপের শাস্তি কি ঈশ্বর আজ দিলেন মৃত অচেনা-অজানা বাচ্চাকে দিয়ে! এইসব ভেবে নিলা খুব কাঁদতে থাকে।
মামুন এসে নিলা'র পাশে বসে বলল- নিলা তোমার কোনো দোষ নেই। তোমাকে একটা ব্যাপার বলা হয়নি। তোমাকে বিয়ে করার আগে আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম। মেয়েটার নাম ছিল চন্দ্রা। ইডেন কলেজে পড়তো। চন্দ্রার সাথে আমার অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। কিন্তু চন্দ্রাকে আমি আর বিয়ে করি নাই। বিয়ে করি তোমাকে। চন্দ্রার অভিশাপে আজ ঈশ্বর আমাদের এই শাস্তি দিয়েছেন।
সকাল গড়িয়ে এখন দুপুর।
সকালে নাস্তা করা হয়নি। দুপুরেও কিছু রান্না করা হয়নি। তাদের আজ ক্ষুধাবোধ নেই। সারা ঘরময় কেমন বিষাদের ছড়াছড়ি। মামুন দেখল তার স্ত্রীর শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। আঁচল নিচে পরে আছে। মামুন নিলা'র ভরাট বুকের দিকে তাকালো। কোমরে ভাজের দিকে তাকালো। নিলা'র চোখের পানি গাল বেয়ে বুকের উপর পরে ব্লাউজ ভিজে গেছে অনেক খানি। মামুন ভাবছে যদি পুরো ব্যাপারটা স্বপ্ন হতো। আলমারিতে কোনো মৃত বাচ্চা নেই। পুরো ব্যাপারটা একটা দুঃস্বপ্ন। মামুন নিলা'র দিকে চেয়ে বলল- আমি থানায় যাচ্ছি। পুলিশকে সব খুলে বলব। আমরা কোনো অন্যায় করি নাই। তবে আমরা কেন ভয় পাচ্ছি! কেউ হয়তো এই বাচ্চাটা আমাদের এইখানে রেখে গেছে। এখন, যা করার পুলিশ করবে। তুমি চোখ মুছো। তোমার চোখে পানি দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয়। যাও গোছল করো। ফ্রেশ হও। আমি আছি, কোনো ভয় নেই।
সন্ধ্যায় পুলিশ এসে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল।
মামুন আর নিলা রাতে বাইরে খাওয়া-দাওয়া করলো। মামুন নিজে পছন্দ করে বেইলী রোড থেকে নিলাকে একটা নীল শাড়ি কিনে দিলো। অকারণের অনেকক্ষন রিকশা নিয়ে ঘুরলো। রাতে বাসায় ফিরে নিলা নতুন শাড়িটা পড়ে স্বামীর পাশে গিয়ে বসল। মামুন নিলাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে গেল। শীতের রাত খুব ছোট। সময় অনেক কম। নিলা তার স্বামীর কাছ থেকে আদর নিতে নিতে মনে মনে বলল- অন্ধকারে রাজু যা, মামুনও তা। যতবার মামুন নিলাকে আদর করে তার চন্দ্রার কথা মনে পড়ে। অন্ধকারে নিলা যেমন, চন্দ্রাও তেমন। নিলা ফিসফিস করে মামুনকে বলল- আমার একটা বাচ্চা চাই।
------------------- রাজীব নুর (somewhereinblog)
Source
Copying/Pasting full or partial texts without adding anything original is frowned upon by the community. Repeated copy/paste posts could be considered spam. Spam is discouraged by the community, and may result in action from the cheetah bot.
More information and tips on sharing content.
If you believe this comment is in error, please contact us in #disputes on Discord
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
This post has received a 1.14 % upvote from @booster thanks to: @bengal-triger.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit