বনফুল কে নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১

in story •  8 months ago 

বনফুল বাংলা সাহিত্যে একটি অতি প্রিয় নাম। লোককান্ত। রসিকচিত্ত-চমৎকারকারী। সাহিত্যের -বর্থে কলাকুশল জীবন-শিল্পী তিনি। কাব্যে নাটকে উপন্যাসে ছোটগল্পে তাঁর সৃষ্টিকর্ম যেমন অক্লান্ত তাঁর জীবনজিজ্ঞাসাও তেমনি অন্তহীন। প্রাচুর্যে ও বৈচিত্র্যে তাঁর লেখনী অজস্রবর্ষী। শিল্পরূপায়ণে—নব নব রীতি ও রূপনির্মাণে তাঁর তুলনা নেই। জীবনের গবেষণাগারে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের যেমন তাঁর শেষ নেই, সাহিত্যের রূপকর্মশালায় বাণীলক্ষ্মীর নব নব রত্নাভরণ-রচনাতেও তাঁর উৎসাহের অন্ত নেই। শুধু তাঁর উপন্যাসের কথাই যদি ধরা যায়, ‘তৃণখণ্ড’, ‘বৈতরণী-তীরে’, ‘কিছুক্ষণ’, ‘মৃগয়া’ থেকে আরম্ভ করে ‘দ্বৈরথ’, ‘নির্মোক’, ‘রাত্রি’, ‘সে ও আমি’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘নতৎপুরুষ’, ‘অগ্নি’, ‘স্বপ্নসম্ভব’, ‘জঙ্গম', ‘স্থাবর’, ‘ডানা’, ‘মানদণ্ড', ‘ভুবন সোম’ পর্যন্ত ছোট-বড় মাঝারি হরেক রকমের বহু গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। উৎকর্ষের বিচারে সবগুলিই যে সমান আসন পাবে এমন কোনো কথা নেই; কিন্তু একটি বিষয় চক্ষুষ্মান না পাঠকমাত্রকেই বিস্ময়ের সঙ্গে স্বীকার করতে হবে যে, প্রায় প্রত্যেক উপন্যাসই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে রচিত। উপন্যাসের সংখ্যা তাঁর অল্প নয়, কিন্তু শিল্পরীতি ও রূপকর্মের দিক দিয়ে পুনরাবৃত্তি তাঁর সৃষ্টিতে কোথাও নেই। যুগান্তকারী প্রতিভার পক্ষেও এ শক্তি দুর্লভ। বস্তুত বিচিত্ররূপী কারুশিল্পী হিসাবে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বনফুলের কীর্তি অতুলনীয়। র কা সাহিত্যের চতুরঙ্গ-বর্থে তাঁর সার্থক আত্মপ্রকাশের কথা বলা হয়েছে।

IMG_6623.jpg

কাব্যে—বিশেষত প্রথমদিককার রঙ্গব্যঙ্গমিশ্র হাস্যসরস কাব্যে তাঁর পরিহাসরসিক চিত্তের সমধিক পরিচয় পাওয়া যাবে। নাট্য-সাহিত্যে—বিশেষত জীবনী-নাট্য-রচনায় মধুসূদন-বিদ্যাসাগরের স্রষ্টা হিসেবে তাঁকে নবযুগের পথিকৃৎ বলা যেতে পারে। কিন্তু কথাসাহিত্যেই তাঁর শক্তিমত্তার সম্পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়েছে। অবশ্য সেক্ষেত্রেও ঔপন্যাসিক বনফুল আর ছোটগল্প-স্রষ্টা বনফুলের মধ্যে পার্থক্য অনেক। উপন্যাস তাঁর নিত্যনবায়মান শক্তিমত্তার সাক্ষ্যমঞ্চ, কিন্তু ছোটগল্পেই রয়েছে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর। উপন্যাসে কত বিচিত্র মানুষ; কত বিচিত্র কাহিনী; কত বিচিত্র ধরনে তাদের কথা বলার সজ্ঞান সচেতন প্রয়াস। জীবনকে শিল্পে ধরে রাখার কত নতুন নতুন প্রয়োগনৈপুণ্য! সাহিত্য-শিল্পীর সেখানে কৃতিত্ব অপরিসীম। কিন্তু সৃষ্টিপ্রেরণা ও সৃষ্টিধর্ম যেখানে অপৃথগ্যত্নসম্ভূত সেখানেই বাণীপ্রকাশ চরমোৎকর্ষ লাভ করে। সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টাও সেখানে স্বয়ংপ্রকাশ। ছোটগল্পের ক্ষেত্রেই বনফুলের এই আত্মপ্রকাশ সবচেয়ে সার্থক ও সহজ হয়ে উঠেছে। এখানেই তাঁর জীবনদর্শন সম্যক স্ফুর্তি পেয়েছে। তাঁর শিল্পরীতি তাঁর ব্যক্তিত্বেরই প্রতীক হতে পেরেছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!