ছেলেটির নাম চাঁন বাদশাহ। কিন্তু রিক্সা চালক। বয়স ১২/১৩ বছর হবে। জাহাপুর বাজারে বাজার করে রিক্সা স্ট্যান্ডে এসে একটি রিক্সা ডাকলাম। তরিঘড়ি করে এ ছেলেটি অন্য রিক্সা আসার আগেই এগিয়ে এলো। বললাম, তুমি পারবে আমাকে বড়ইয়াকুড়ি নিতে? ছেলেটি হ্যাঁ সূচক জবাব দিল। একবার ভাবলাম, ছেলেটির রিক্সায় উঠব কিনা, না জানি আবার খাদে ফেলে দেয় কিনা? পরক্ষণে ভাবলাম, জীবিকার তাগিদে ছেলেটি এ বয়সে এ কাজে এসেছে, তাকে বঞ্চিত করে লাভ কি? আবার তার সম্পর্কে জানার কৌতুহলও হলো। তাই তার রিক্সায় উঠে বসলাম।
রিক্সা চলছে। ব্যাটারী চালিত রিক্সা। শুরু করলাম তার সাথে আলাপ। আলাপে যা জানলাম- তাদের বসবাস জাহাপুর বাজারের পাশে বেড়ি বাঁধের উপর। তাদের ছোট একটি দু’চালা ঘর আছে সেখানে। সংসারে তারা দু’ ভাইবোন আর বাবা-মা। বোন বড়, চাঁন বাদশাহ সবার ছোট। বর্তমানে রিক্সা চালক। বাবা জাহাপুর বাজারে দোকানদারী করেন। আরও জানলাম, তার বাবা বাখরাবাদের কোন এক এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে উঠিয়ে ১৪ হাজার টাকায় এ রিক্সাটি কিনে দিয়েছে। আর ৬ হাজার টাকা ঐ এনজিও জামানত হিসেবে রেখে দিয়েছে। পৈত্রিক সম্পত্তি চাচারা বিভিন্ন কৌশলে নাকি দখল করে নিয়েছেন এবং তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাই তাদের ঠাঁই হয়েছে আজ বেড়ি বাঁধের উপর। চাঁন বাদশাহ আর তার বাবার সামান্য আয়ে চলছে তাদের সংসার।
পুরো দেশের কথা বাদই দিলাম।এ মুরাদনগর উপজেলায় অথবা চাঁন বাদশাহদের আশে পাশেই তো ধনাঢ্য ব্যক্তির অভাব নেই। সরকারী সাহায্যও কম আসছে না, কিন্তু চাঁন বাদশাহর মত এ রকম হাজারো চাঁন বাদশাহরা এভাবেই নীরবে-নির্ভৃতে ধুঁকে ধুঁকে মরছে- আর বাদশাহ হয়েও তারা কেউ রিক্সা চালক, কেউ বা টোকাই, হকার, শ্রমিক আরও কত কি!
হায়রে বিধি! কত লোক আসে যায়, কিন্তু এ রকম হাজারো চাঁন বাদশাহদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না।
--------------------০০০--------------------