alone is not good

in story •  6 years ago 

এলোমেলো পায়ে নিজ রুম থেকে বেরুলো সাবি। উদ্দেশ্য-হল ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ দুধ-চা খাওয়া। তাও আবারলেবু মেশানো। রাতের খাবার খেয়েছে সেই সন্ধ্যে সাতটায়। এখন প্রায় সাড়ে বারোটা। ক্ষুধাও প্রচন্ড লেগেছে। কিন্তু সে শুধুই চা খাবে। উদ্দেশ্য পেটে এসিডিটি ফর্ম করা। যখন খুব টেনশনে থাকে তখন প্রায়ই এই কাজ করে সাবি। আজ সে টেনশনে আছে। যাকে বলে অস্থির

টেনশন। গত পরশু উর্মিলাকে তার ভালবাসার কথা জানিয়েছে সাবি। আজ বিকেলে উর্মিলা ফোন

করে বলেছে রাতে গুরুত্বপূর্ণ এসএমএস করবে সে। সাবি বুঝতে পারছে সময় ঘনিয়ে আসছে । যেকোন মুহুর্তে তার ভালবাসার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে। তবে এতটা টেনশন সাবি তার পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের সময়ও করে নি। কেমন একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ। লেবুমিশ্রিত দুধচা দিয়ে যায় ক্যান্টিনের মামা । এই বিচিত্র ভঙ্গির চা খাওয়াটা সাবি শিখেছে উর্মিলার কাছ থেকে। যেদিন থেকে উর্মিলাকে খেতে দেখেছে এই চা, সেদিন থেকে একা একা চা খেলে এভাবেই খায় সাবি। কেউ সাথে থাকলে অবশ্য লজ্জায় এভাবে চাইতে পারে না সে। চায়ে প্রথম চুমুক দিয়ে উর্মিলার চিন্তায় ডুবে যায় সাবি।

উর্মিলা, তার খুবই ভাল একজন বন্ধু। কিভাবে যে বন্ধুর প্রেমে পড়ে গেল তা আজও বুঝে উঠতে পারে না সাবি।

শুধু এটুকু জানে যে উর্মিলার গভীর চোখে ডুবে গেছে সে।

ইসসস্.... মেয়েটার চোখজোড়া এত মায়াবী কেন? কত কি যে লুকিয়ে আছে চোখজোড়ায় তা আবিষ্কারে নেশায় পেয়ে গেছে সাবিককে। তাইতো সব লজ্জা-সংকোচের মাথা খেয়ে প্রপোজ করে বসল সাবি ।

কি যে হবে কে জানে?

গত দুদিন অবশ্য বেশ ভালভাবে কথা বলেছে উর্মিলা। সাবিও নিজের সর্বোচ্চটুকু করেছে উর্মিলাকে ইমপ্রেস করার জন্য ।

উর্মিলার প্রিয় চিপস্ থেকে শুরু করে প্রিয় ফুল কচুরীপানা, লাল কৃষ্ণচূড়া, নীল জারুল সব তার সেই চেষ্টার অংশ। তাই তো সে এই যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী। তারপরও অনেক ভয় হয় সাবির।

ভালবাসা বুঝতে শেখার পর থেকেই আবিরকে ভালবাসে উর্মিলা। যদিও আবির উর্মিলার ভালবাসাকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি, তারপরও ভয় হয় সাবির।

সে পারবে তো আবিরের স্মৃতি উর্মিলার মন থেকে মুছে দিতে?

অজানা ভয়ে শুকিয়ে যায় তার গলা।

টিং টিং...... টিং টিং.......

নিজের ফোনের মেসেজ টোনে বাস্তবে ফেরে সাবি। হাতের চা যে কখন শেষ করে ফেলেছে জানে না সে।

হ্যা, সেই কাঙ্খিত মেসেজ । হাত- পা কাঁপছে সাবির ।

কোনরকমে চায়ের বিল চুকিয়ে ছাদে পথে পা বাড়ায় সাবি ।

আজ জোত্স্না রাত । পুরো ছাদ চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে । মেসেজ দেখার সাহস পায় না সে ।

সাবির আম্মু সবসময় বলে যে, ভাল কিছু পাওয়ার জন্য ভাল কিছু আশা করতে হয়। তাই সাবি সব কিছু ইতিবাচক ভাবে ।

হঠাত্ মনটা খুব ভাল হয়ে ওঠে সাবির ।

আচ্ছা উর্মিলা হ্যা বললে কি করবে সাবি?

খুশিতে পাগল হয়ে যাবে সে । নাহ্, সে পাগল হলে উর্মিলা পাগলিটাকে সামলাবে কে?

আনমনে হাসতে থাকে সাবি । কাল সকালের কাজ ঠিক করে ফেলে সাবি ।

কাল সকালের প্রথম কাজ উর্মিলার হাতে অনেকগুলো কচুরীপানার ফুল তুলে দেয়া । কচুরীপানার

ফুল অনেক প্রিয় উর্মিলার ।

নাহ্, বাইক চালানোটা তাড়াতাড়ি শিখে নিতে হবে ।

উর্মিলা বাইকে চড়তে এত পছন্দ করে, আর সাবি কিনা বাইক চালাতে পারে না । তা কি হয়???

প্রতিদিন উর্মিলার হাত ধরে ভার্সিটির আনাচে কানাচে ঘুরে বেরাবে সে,

ওর ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দেবে, ওর সকল হাসির কারণ হবে, আবিরের দেয়া সকল কষ্ট মুছে দেবে, উর্মিলাকে তার রাজকন্যা করে রাখবে, চোখে তো অশ্রু আসতেই দেবে না,

আরও কত কি। হঠাত্ একটা রাত জাগা পাখি ডেকে ওঠে। কল্পনার রাজ্য ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসে সাবি।

একি, এখনো যে মেসেজ পড়া হয়নি। দুর্বল চিত্তে ওপেন বাটন চাপে সে । ওপেন হয় কাঙ্খিত সে মেসেজ . . .

.

.

.

.

.

"সাবি, আমি পারব না রে। আবিরকে ছেড়ে তোর সাথে জড়াতে পারব না । আবিরকে ফিল করেও শান্তি । আমার খুব ইচ্ছে করছে তোর সাথে বসে জোত্স্না দেখতে । কিন্তু আবিরের স্মৃতি আমাকে তা করতে দেয় না রে। আমি অনেক সরি । ভাল থাকিস।"

মেসেজটা এক নিশ্বাসে পড়ে চাঁদটার দিকে তাকায় সাবি । আজকের জোত্স্নাটাকে খুবই বিষাক্ত মনে হয় তার । তার মনে হতে থাকে যে চাঁদের আলো তার শরীরটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে ।

গালে একটু ভেজা ভেজা অনুভূতি ছাড়া আর কোন কিছুই অনুভূত হয় না সাবির ।

শুধু বিষাক্ত জোত্স্নার আলোয় পুড়তে থাকে তার দেহ . . . . .

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!