একটি মেয়ের জীবন গল্প

in story •  3 years ago 

ppn.jpg

মেয়েটার নাম সুরমা।

সম্পর্কে আমার পাশের বাড়ির চাচাতো বোন। তার বয়স ১৫/১৬ বছর হবে। ৯ম শ্রেনীতে
পড়াশুনা করে সে। সবসময় হাসিখুসি থাকতে পছন্দ করে মেয়াটা। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে
হওয়ার আদরের কমতি হয় না তার। বাবা-মা তার কোন ইচ্ছাকেই অপূর্ণ রাখেনি। চাওয়া
মাত্রই তারা তা হাজির করে দিতো। মেয়েটাও কখনো অবাধ্য হয়নি তার বাবা মায়ের। তার
বৃদ্ধ দাদির দেখাশুনা সে ই করতো। তাকে ঘিরে পরিবারটি অনেক ভালোই ছিলো।


মেয়েটির বিয়ের কথা চলছে। দেখতে-শুনতে মেয়েটি অনেক ভালো হওয়ায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে৷ পরিবারের সবাই মনে করে মেয়েকে আগে আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়াই
ভালো। অন্য সবার মতো তাদেরও প্রথম পছন্দ ছিলো সরকারি চাকুরিজীবী। কিন্তু মেয়ের
বাবার চাকরির সুবাদে তিনি চাইতেন তার মেয়েকে তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন।
পরে ছেলে ও মেয়ে পক্ষের সম্মতিতে জমকালো আনুষ্ঠানিকতায় সম্পূর্ণ হয় বিয়ে৷


শশুরবাড়িতে ভালোই সময় কাটছিলো মেয়েটির। নতুন পরিবেশ নতুন মানুষদের সাথে নিজেকে খুব ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলো সে। তার স্বামী তাকে অনেক ভালোবাসে৷ শশুর শাশুড়িও তাকে অনেক আদর করে। সবদিক মিলিয়ে ভালোই কাটছিলো সময়গুলো৷ হঠাৎ একদিক অসুস্থতা অনুভব করলে তার
স্বামী তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার তাদেরকে খুশির খবর জানায়। ডাক্তার
বলে তারা বাবা-মা হতে চলেছে। খুশিতে তার স্বামী পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরন করে৷



নিজের ভিতরে সন্তানের উপস্থিতি সবসময় অনুভব করতো সে৷ সন্তানকে ঘিরে অনেকগুলো পরিকল্পনা
করে রেখেছে সে। তার স্বামী তার নিয়মিত সেবা-যত্ন করতো। কিছুদিন হলো তার মা এসেছে
তার দেখাশোনা করতে। মা তাকে অনেক ভরোসা দিতো। এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় ৯ মাসের
কাছাকাছি হয়ে গেছে৷ হঠাৎ একদিন প্রচন্ড প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে নিকটস্থ একটি
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।


প্রথমে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেয় বাচ্চা নরমালি হবে। তাই তারা সেই অনুযায়ী কাজ করতে থাকে।
কিন্তু অবস্থা ভালো না হওয়ায় তার সিজার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাচ্চাটা প্রায় নরমাল
পজিশনে চলে যাওয়ায় অনেক জটিলটার সাথে সিজার করে বাচ্চা বের করা হয়৷ সিজার পরবর্তী
সময়ে মেয়েটির রক্তপাত কোনভাবেই কমছিলো না৷ অপরদিকে বাচ্চার অবস্থাও ভালো না৷


অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকলে তাদেরকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে মেয়েটির দুটি মেজর অপারেশন করানো হয় রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। কিন্তু
কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছিলো না রক্তপাত। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের কাছে হার মেনে সবাইকে ছেড়ে
চলে যায় মেয়েটি৷ তার একদিন পর সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানটিকেও আর বাচানো সম্ভব হয়নি।
মা-ছেলে চলে জায় এক অজানা গন্তব্যে।


তাদের মৃত্যুতে ভেজ্ঞে পরে পুরো পরিবার। তার স্বামী পাগলের মতো হয়ে গেছে৷ সারাদিন শুধু
সন্তান আর স্ত্রীর কবরের পাশে বসে থাকে সে। জোর করেও তাকে বাসায় আনা জায়না। সেও
মুক্তি পেতে চায়। যেতে চায় স্ত্রী -সন্তানের কাছে।


এভাবেই নিভে গেছে একটি পরিবারের আশার আলো । শেষ হয়ে গেছে অনেকগুলো স্বপ্ন।

সংগৃহিতঃ



 






Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!