বৃষ্টি এক ভালোবাসার নাম | অনুভুতি?

in story •  6 months ago 

images (12) (1).jpeg

এখন আষাঢ় মাস। কখনো ঝিরঝির, কখনো মুষলধারায় বৃষ্টির দিন। আকাশ কালো করা মেঘে বদলে যায় প্রকৃতির রূপ, তা সে শহরেই হোক কিংবা গ্রামে। বৃষ্টি নিয়ে মানুষের মনে খেলা করে নানা অনুভূতি।

বৃষ্টি আমার বড়বেলার ভালোবাসা। ছোটবেলার বৃষ্টির কথা মনে করলেই সবচেয়ে আগে যেটা মাথায় আসে, সেটা হলো খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার স্মৃতি। কেউ বলছে, ‘এই এখন খেলতে যেতে পারবে না। একটু পরেই বৃষ্টি নামবে।’ এর বাইরে বৃষ্টির স্মৃতি কম। আরেকটা আছে। ছোটবেলায় আমার সাইনাসের সমস্যা ছিল। বৃষ্টি হলে মাথাব্যথা বেড়ে যেত। বৃষ্টি, বৃষ্টির গান, খিচুড়ি—এ সবকিছুর ব্যাপারে আমার আকর্ষণ হয়েছে বড়বেলায়। সেই আকর্ষণ ক্রমেই বেড়েই যাচ্ছে।
বৃষ্টি ভালো লাগার মতোই বিষয় কিন্তু কেন এত ভালো লাগে? চিন্তা করে বেশ কয়েকটা কারণ খুঁজে পেলাম। একটা হলো বৃষ্টির একটা অনির্দেশ্য বিষয় আছে, যেটা আমাদের রুটিনে বাঁধা জীবনে একটু হলেও ভিন্নতা এনে দেয়। বৃষ্টির এই অনির্দেশ্য বিষয়টা বর্ষাকালে কমে গেলেও পুরোপুরি চলে যায় না। এই সময়টাতে বৃষ্টি হবে এটা আমরা জানি কিন্তু ঠিক কখন হবে, সেটা আমরা নিশ্চিত জানি না।
বৃষ্টি আসার আগে যখন হুট করে আকাশ গাঢ় হয়ে যায়। বৃষ্টির ফোঁটা দেখার আগে বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ নাকে আসে। প্রচণ্ড গরমে বৃষ্টির বাতাস আদর করে যায়। মনে হয় যেন ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি আমার বাস্তব জীবন ছেড়ে কোনো এক অলীক রাজ্যে চলে গেছি। শীতকালে বৃষ্টি আরও চমৎকার। ব্যাপারটা সাধারণত এতই অপ্রত্যাশিত থাকে যে মনে হয় এক অবাস্তব ভূমিতে বাস করছি। আমি হয়তো এই পৃথিবীতে নেই। থাকলেও হয়তো আমি আমার গণ্ডি আমার জায়গা আমার দেশ থেকে অনেক দূরে কোথাও আছি। শীতে যখন বৃষ্টি পড়ে আর আমি কম্বলের ভেতরে ঢুকে যাই, তখন মনে হয় কম্বলের প্রতিটি প্যাঁচ যেন আমার বাস্তবতা, আমার গ্লানি, আমার ঝামেলা থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটি টিকিট। কম্বলের ভেতর যেন আমি ভিন্ন একটি রাজ্য, ভিন্ন একটি বাস্তবতা তৈরি করে ফেলেছি।
বৃষ্টির আরেকটি মজার বিষয় হলো, বৃষ্টি একটু হলেও আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের জীবন সম্পূর্ণ আমাদের নিজের হাতে নেই। একটু হলেও আমরা আমাদের নিয়তির কাছে হার মানা। বৃষ্টি হলে রাস্তার ট্রাফিক আটকে যায়। চাইলেই বাইরে যাওয়া যায় না। গাড়িতে থাকলে কাচ উঠিয়ে দিতে হয়। বাসায় থাকলে জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। ছোটবেলায় অপরাধ করলে যে রকম আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য অন্য ঘরে একা পাঠিয়ে দেওয়া হতো, মনে হয় প্রকৃতি যেন ঠিক সে রকম শাস্তি আমাকে দিচ্ছে। এই শাস্তি পেয়ে ভাবারও সুযোগ হয়। গাড়ি বা বাসায় যখন জানালার কাচের ওপারের জগৎ বৃষ্টির ফোঁটায় ক্রমেই ক্ষীণ হতে থাকে, তখন উপলব্ধি করতে পারি, এই জীবনে আমরা আসলে কত একা। যতই জগৎটাকে নিজের আলিঙ্গনে আনার চেষ্টা করি না কেন, যতই জগতের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করি না কেন, এই জগৎ, এই জীবন সব সময়ই জানালার ওপাড়েই থাকবে।
বেশি হলে নিজের বাইরের জীবন ও জগৎ একটা ফ্রেমে বাঁধানো সুন্দর ছবি হয়ে থাকবে আমাদের জন্য। যা আমরা ভালোবাসতে পারব, উপভোগ করতে পারব কিন্তু কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এ রকম উপলব্ধি ক্ষণিকের জন্য আমার ভেতর একধরনের উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে। মনে হয় সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু যেই মুহূর্তে নিজের ক্ষুদ্রতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিই, তখন একধরনের অসাধারণ স্বাধীনতা অনুভব করি। প্রকৃতির বিশালতার কাছে আমাদের ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আর কীই-বা করার আছে? এর বাইরে আমাদের কাছে প্রকৃতির আর কোনো জগতের চাহিদা থাকতে পারে না। জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করার আকাঙ্ক্ষা আমাদের একধরনের শিশুসুলভ ভ্রম। সেই ভ্রম বৃষ্টি আমাদের জানালার ওপাশে রেখে দেখে দিচ্চে।
images (12) (2).jpeg
যত বয়স বাড়ছে জীবনের থেকে আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে। আমার প্রতি জগতের চাহিদা বাড়ছে। এই আকাঙ্ক্ষা আর চাহিদার মাঝে পিষ্ট হয়ে মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পাগল পাগল লাগে। ঠিক সেই সময় অকস্মাৎ মেঘ ডাকার আওয়াজ পাই। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি দিগন্তের কোলে কালো মেঘ খেলা করছে। বাতাস এসে আমাকে আদর করে। বৃষ্টির ঘ্রাণ আমার সঙ্গে এসে খেলে। তারপর এক-দুটো ফোঁটা পড়ে আমার চোখে। ক্ষণিকের মধ্যেই হয়তো কিছুক্ষণের জন্য আমি হারিয়ে যাই। চলে যাই। এমন এক জগতে, যেখানে আমি অনেক ছোট। ভালোবাসা ছাড়া আমার কাউকে কিছুই দেওয়ার নেই। এ জন্যই হয়তো বৃষ্টি আমি এত ভালোবাসি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!