কালো মরিচ - ছোট গল্প

আমার লেখা ছোট গল্প - ০৯

গভীর রাত। গ্রামের ছোট্ট কুটিরের মধ্যে টিম টিম করে আলো জ্বলছে। কুটিরের দরজার সামনে বসে আছে লতা। তার চোখে জল, মনে অতীতের স্মৃতি। অনেক আগে তার স্বামী কালো মরিচের ব্যবসা করতেন। এই কালো মরিচের সাথেই তাদের জীবন জড়িত ছিল।

তাদের সংসারে ছিল অভাব, কিন্তু ভালোবাসার কোন অভাব ছিল না। কালো মরিচের ক্ষেত ছিল তাদের জীবনের অন্যতম জীবিকার উৎস। স্বামী প্রতিদিন ভোরে মাঠে যেতেন, মরিচ সংগ্রহ করতেন, আর সন্ধ্যায় তা বাজারে বিক্রি করতেন। এই মরিচের সুবাসে ভরে থাকত তাদের সেই ছোট্ট ঘর।

কিন্তু একদিন হঠাৎ অনেক বৃষ্টি নামল। ঝড়-জল ধেয়ে এল, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল। খামারের সমস্ত মরিচ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল। স্বামীর মুখে পড়ল হতাশার ছায়া। কিন্তু লতা তাকে সাহস দিলেন। বললেন, “আমাদের ধন-সম্পদ মরিচে নয়, আমাদের ভালোবাসায়। তুমি আবার শুরু করবে, আমি তোমার পাশে আছি সবসময়।”

স্বামী নতুন করে আবার শুরু করলেন। ধীরে ধীরে আবার মরিচের খামার ফিরে এল। আবার ঘরে ফিরে এল সেই সুবাস, ফিরে এল সেই পুরনো দিনগুলোর খুশি-আনন্দ।

কিন্তু আজ, লতার স্বামী নেই। অনেক বছর আগেই তিনি চলে গেছেন ওপারে। তবে লতার মনে সেই কালো মরিচের সুবাস আজও বেঁচে আছে। প্রতিটি কণা, প্রতিটি স্মৃতিতে সেই ভালোবাসা মিশে আছে আজও, যা কালো মরিচের মতোই ঘনকালো, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে আলো ছড়িয়ে দেয়।

লতা জানে যে, এই জীবন যাত্রা চিরকাল চলবে না, কিন্তু কালো মরিচের সেই স্মৃতি ভরা সুগন্ধ, সেই ভালোবাসা চিরকাল তার হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।