বর্ষার সন্ধ্যায় মেয়েটি - ছোট গল্প

আমার লেখা ছোট গল্প - ০৭

মধ্য বর্ষাকাল । আকাশের গাঢ় মেঘে চারিদিক যেন মায়ায় মোড়ানো। নদীর পানি টইটম্বুর ভরে আছে সব দিকে। প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে আমি নদীর পাড়ে এসে বসি। বসে থাকি মৃদু বাতাসের পরশে, শুনি নদীর গর্জন। সেই গর্জনের মাঝে অদ্ভুত এক সুর বেজে ওঠে, মনে হয় যেন প্রকৃতির গভীরতম ছন্দ।

সেদিনের সন্ধ্যাটাও ছিল তেমনই। নীল শাড়ি পড়া একটি মেয়ে নদীর ঠিক পাড়ে এসে দাঁড়ালো। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের মধ্যে কোনো কথা হলো না, কিন্তু নদীর পানির মতোই আমাদের দুজনের অনুভূতি যেন চারিদিকে মিশে গেল।

মেয়েটির চোখে গভীর বেদনার ছায়া। কেমন যেন নিঃশব্দ কষ্ট বয়ে নিয়ে এসেছিলো সে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বলে উঠলো, "জীবনটা এমন কেন? সবকিছু এত কঠিন কেন?" আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

মেয়েটি এক সময় বলে, "তুমি কি জানো, নদীটি কেন গর্জন করে? সে তার কষ্টের কথা বলে, তার বেদনার সুরে গান শোনায়।"

আমি তার কথা শুনে মৃদু হেসে বললাম, "আমরা সবাই তো নদীর মতোই, আমাদের নিজেদেরও তো কষ্ট আছে। কিন্তু সেই কষ্টকে বয়ে নিয়ে যেতে হয় আমাদেরই।"

মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "তুমি ঠিকই বলেছো। কষ্টটা নদীর পানির মতোই, যতই ভারী হোক না কেন, তাকে বয়ে নিয়ে যেতেই হবে।"

আমরা দুজনেই নদীর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সেদিন সন্ধ্যার আলোয় নদীটা আরও মায়াবী লাগছিল। মেয়েটির মুখে শান্তির একটা ছাপ ফুটে উঠলো। নদীর পাড়ে বসে আমরা দুজনে নিরবে কষ্টগুলোকে বিদায় জানালাম, যেন সেগুলো নদীর গর্জনের সঙ্গে মিলিয়ে গেলো।

সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়ে রাত এল। মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো, বলল, "এখন আমি যাই।" আমি কিছু বলতে পারলাম না, শুধু মাথা নেড়ে বিদায় জানালাম তাকে। সে চলে গেল, আর আমি বসে রইলাম সেই নদীর পাড়ে, যেখান থেকে আমাদের অনুভূতিগুলো নদীর গর্জনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।