যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি

in story •  6 years ago 

যাদুর একটা ধরন হচ্ছে শয়তান ও যাদুকরের মাঝে এক ধরনের চুক্তি, যেখানে শর্ত থাকে যে যাদুকর কতিপয় হারাম বা শিরকী কাজে লিপ্ত হবে, আর বিনিময়ে শয়তান তাকে সহযোগিতা করবে ও তার অনুসরণ করবে। শয়তানের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যাদুকরেরা ঘৃণ্য কিছু উপায় অবলম্বন করে। যেমনঃ কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, কুরআন পায়ের নিচে দলিত করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া বা নোংরা কিছু দিয়ে কোরআনের আয়াত লিখা, সর্বদা নাপাক থাকা বা বিনা অযুতে সালাত আদায় করা, শয়তানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে জবাইকৃত পশু শয়তানের নির্ধারিত স্থানে অর্পণ করা, ইত্যাদি। অনেকে আবার মাহরাম (আপনজন, যাদের সাথে বিয়ে হারাম) এমন মানুষের সাথে জিনা করা বা সংখ্যাতাত্ত্বিক চিহ্ন ব্যবহার করে ছক কেটে নক্সা এঁকে শয়তানের উপাসনা করে থাকে।

অর্থাৎ, যে যাদুকর যত বেশি কুফরিতে লিপ্ত হতে পারবে, শয়তান তাকে ততবেশি সাহায্য করবে।

আমাদের দেশে আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন হুজুর, তান্ত্রিক সাধু, বা জ্যোতিষীর দেখা পাই যারা দাবি করে যে মুখ দেখেই আপনার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে দেবে। মূলত তারা এসব করে নিজেদের অনুগত শয়তান জীনের সাহায্যে আপনার ক্বারীন জ্বীনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় মানুষের অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে।

তো যা বলছিলাম...

jin bangladesh.jpg

ছবিটা দেখেন, স্বপ্নের মাধ্যমে কোন এক ওয়ালী (আল্লাহর প্রিয় বান্দা)নাকি এই মহিলাকে গায়েবী ক্ষমতা দান করেছেন, সেই ওয়ালির সাহায্যেই এই মহিলা হাজিরা দেখা আর মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজ করেন।প্রকৃত পক্ষে এই গায়েবী ওয়ালি এক শয়তান জ্বীন, অন্য কিছু নয়। আর হাজিরা বা উপস্থিতিও জ্বীনের, অর্থাৎ জ্বীন উপস্থিত হয়ে তাকে অদৃশ্যের খবর বলে যায়।

ওয়াক্তিয়া নামাজের পর এই মহিলা জায়নামাজের সামনে দু-পাশে দুটি মোম বাতি জ্বালান, মাঝখানে একগ্লাস পানি রাখেন, আর আগর বাতির ধোয়া ছড়ান.. এরপর উনি জায়নামাজে বসে মনে মনে ওয়ালিআল্লাহ'কে স্মরণ করলে ওয়ালীআল্লাহ নাকি উনার সামনে আসেন এবং ওয়ালিআল্লাহ মহিলার মাধ্যমে রোগীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কি সমস্যা (রোগ) ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। তারপর রোগীকে বলে দেন যে রোগী অমুক অমুক জায়গায় গিয়েছে, আর অমুক জায়গায় তাকে জ্বীন আক্রমণ করেছে।

সবশেষে সিজদা করে উঠে সামনে রাখা গ্লাসের পানি রোগীকে পান করতে বলেন, মাথায় ঝাড়ফুঁক করেন আর তাবিজ লিখে দেন। তারপর বলেন ওয়ালিআল্লাহর দরবার জিয়ারত করে আসতে। সাধারণত এই দরবার মানে কোন একটা মাজার বা দরগাহ হয়।

ঠিক একই রকম ঘটনা কিছুক্ষণ আগে আমি আমার এক আত্নীয়ের কাছ থেকে শুনলাম। তাঁর এক কাজিনের প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ছিল না, কিন্তু সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছিল যে সে প্রেগন্যান্ট। তো এমনই এক বয়স্ক মহিলা ছিল পরিচিত, যার সাথে জ্বীন আছে বলেই সবাই জানতো। এই মহিলাকে বলার পর তিনি মাগরিবের নামাজের পর জায়নামাজে থেকেই কিছু দোয়া দরুদ পড়লেন, সামনে যথারীতি আগরবাতি/মোমবাতি আর গ্লাস ভর্তি পানি ছিল। যেহেতু পূর্ব পরিচয় ছিল, সেহেতু আর তিনি রোগীর নামধাম বা সমস্যার বিবরণ জানতে চান নি। কিছুক্ষণ পর সিজদা করে উঠে রোগীকে পানি খেতে বললেন আর জানিয়ে দিলেন সে আসলেই প্রেগন্যান্ট, তাঁর সাথের জ্বীন তাকে বলেছে। সাথে কিছু ঝাড়ফুঁক করে দিলেন, তবে তাবিজ দিয়েছিলেন কিনা তা আর সেই আত্নীয়া মনে করতে পারেন নি।তবে এই বয়স্ক মহিলা ছিলেন নিঃসন্তান।

চিত্তাকর্ষক বর্ণনা, তাই না?

এবারে ব্যাখ্যায় আসি। এই দু’জন মহিলাই স্রেফ শয়তানের পূজারি যাদুকর। তারা শয়তানকে সিজদা করেছেন, আগুন/ধোঁয়ার মাধ্যমে যাদুর নিয়মকানুন পালন করেছেন। বিনিময়ে শয়তান তাঁদেরকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। আর শয়তানের এই তাঁবেদারি জঘন্যতম শিরক।

তবে মজা দেখতে চাইলে এরপর যখনই এমন কারো ওপর ‘আল্লাহর ওলী’ (?) ভর করবে, তখন আপনার কানে আঙুল দিয়ে জোরে আজান দিবেন। এরপর দেইখেন সার্কাস :-P

মনে প্রশ্ন আসছে না? কেন সেই মহিলা নিঃসন্তান ছিলেন? এর উত্তর দিতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। সাধারণত যাদুকর এবং জ্বীনের গোত্র প্রধানের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, যাদুকরের কিছু প্রকাশ্য কুফরি বা শিরকী কাজের বিনিময়ে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে নিজে সাহায্য করবে, বা কোন এক জ্বীনকে যাদুকরের কার্যসিদ্ধির জন্য নিযুক্ত করে দিবে। তো, এই প্রতিনিধি জ্বীন যদি কখনো আনুগত্য না করে, তাহলে যাদুকরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে শাস্তিও দিয়ে থাকে। এই শাস্তি অনেক সময় প্রতিনিধি জ্বীনের ক্রোধের কারণ হয়ে যায়, আর ক্রোধের কারণে জ্বীন যাদুকরের সন্তান সন্ততি ও সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। যাদুকরকে জ্বীন অনেক কষ্টও দিয়ে থাকে, আর সাধারণত যাদুকরের সন্তানও হয় না, কারণ জ্বীন মাতৃগর্ভের শিশুকে মেরে ফেলে। এজন্য দেখবেন অনেক যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে।

“কেন জ্বীনরা কবিরাজদের ক্ষতি করে” তাঁর একটা কারণ রয়েছে এখানে।

আল্লাহ্‌ আমাদের এসব শিরক - কুফর থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন, আমীন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!